অন্ধকারের ভয়: একলোফোবিয়া

0
62
একলোফোবিয়া: অন্ধকারের ভয়
একলোফোবিয়া: অন্ধকারের ভয়

রাতের পৃথিবী কতই না সুন্দর। নিস্তব্ধ রাতে ছাদে গিয়ে খোলা হাওয়া গায়ে মেখে চাঁদের আলোয় স্নান করার অভিজ্ঞতা যাদের রয়েছে, তারা সত্যিই বড় ভাগ্যবান।

রাত শান্তির। সারাদিনের ব্যস্ততার পর ক্লান্ত শরীর বিছানায় এলিয়ে দিয়ে শান্তির ঘুমে ঢলে পড়েন সবাই। রাতের পৃথিবীতে কবিরা কবিতার ঝাঁপি খুলে বসলেও, এমনও অনেকে রয়েছেন যারা কোনোরকমে রাতটা পার করে দিতে চান। রাতের নিস্তব্ধ পরিবেশ যেন তাদের চারপাশ থেকে আঁকড়ে ধরে।

একলোফোবিয়া বা অন্ধকারের ভয় রোগটি যাদের রয়েছে তারা রাতের অন্ধকারকে মোটেও সহ্য করতে পারেন না।

যেকোনো ধরনের অন্ধকার পরিবেশ তাদের মনে ভয়ের উন্মেষ ঘটায়। তবে একলোফোবিয়া ব্যক্তির জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। সাধারণত নারী ও শিশুদের মধ্যে এ সমস্যাটি বেশি দেখা দেয়।

একলোফোবিয়া ধারণ করে বেঁচে থাকা বা স্বাভাবিক জীবনযাপন করা কঠিন। কারণ অন্ধকার পরিবেশে ব্যক্তি বিভিন্ন বস্তুর ছায়াচিত্র দেখে ভয় পান। সামান্য শব্দ বা আলোর প্রতিফলন তাদের মনে বিশাল ভয় সৃষ্টি করে। এসব কারণে একলোফোবিয়া নানারকম দুশ্চিন্তা ও মানসিক অবসাদের সৃষ্টি করে।

কারণ
একলোফোবিয়ার জন্ম ও বিকাশ মানুষের অবচেতন মনে। মানুষ অবচেতন মনেই নিজেকে রক্ষা করার জন্য অতিরিক্ত আত্মকেন্দ্রিক হয়ে ওঠে। অতীতে অন্ধকারে কোনো দুর্ঘটনা, ভয়ের সিনেমা দেখা বা অলৌকিক কোনো গল্প শোনা ইত্যাদির কারণে ভয় সৃষ্টি হতে পারে।
বাস্তব জীবনে অন্ধকার পরিবেশকে এড়িয়ে চলা সম্ভব নয়। বরং যত ভয় পাবেন ভয় ততই বাড়বে। তবে একলোফোবিয়া বিভিন্ন রূপে ধরা দেয়। অনেকের ক্ষেত্রে সব বাজে অভিজ্ঞতা  কাকতালীয়ভাবে অন্ধকারেই ঘটতে পারে। এ কারণে তার রাতের প্রতি বা আলো নেই এমন জায়গার প্রতি ভয় সৃষ্টি হতে পারে।

লক্ষ্মণ
যাদের একলোফোবিয়া রয়েছে তারা আলো ব্যাতীত কোনো স্থানে থাকতে পছন্দ করেন না। এমনকি রাতে ঘুম‍ানোর সময়ও আলো জ্বালিয়ে ঘুমাতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। অন্ধকার পরিবেশে থাকলেও তাদের ইন্দ্রিয় খুব সজাগ থাকে। সামান্য শব্দতেও তারা আঁতকে ওঠেন। এসময় তাদের হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়, ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে থাকেন, ঘাম ও বমি বমি ভাব হয়। তবে এসব লক্ষ্মণ তাদের ভয়ের অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে।

সমাধান
অন্ধকারের ভয় বা একলোফোবিয়া রোগটি আক্রান্ত ব্যক্তি ও তার চারপাশের মানুষের জীবনের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। অবিশ্বাস্য হলেও এটি ক্যারিয়ার ও স্বাস্থ্যের উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই ভয়ের চাদরে নিজেকে আড়াল করে জীবনকে কখনোই সুন্দরভাবে উপভোগ করা যায় না। এজন্য ভয়ের অদৃশ্য বেড়াজাল কাটিয়ে উঠুন।

আপনি জানেন, আপনি অন্ধকারকে ভয় পান। ব্যাপারটিকে হঠাৎ করে পাল্টে নেওয়া সম্ভব নয়। হঠাৎ একদিনের চেষ্টাতেই এটি দূর হবে না। ধীরে ধীরে মনের ভয়গুলোকে কাটাতে চেষ্টা করুন। সন্ধ্যে হলেই ঘরের সব বাতি জ্বালাতে এক মুহূর্তও দেরি করেন না আপনি। একবার ভাবুন তো, ভয় আপনার মনে, এক্ষেত্রে শুধু ঘরের বাতি জ্বালালেই কি ভয় কেটে যাবে! কখনোই না, বরং জ্বালাতে হবে মনের প্রদীপ। যার আলোতে মনের অন্ধকার ঘরটি আলোতে ভরে উঠবে।

রাতকে উপভোগের দৃষ্টিতে দেখুন। রাতে খাবার টেবিলে জলে ফুল ও ফ্লোটিং মোমবাতি রাখতে পারেন। দেখুন ঘরটি কী সুন্দর লাগছে! এটা সবসময় করার প্রয়োজন নেই, মাঝে মাঝে করুন।

রাতের অন্ধকারে ঘরে যদি কোনোকিছুর ছায়া দেখে আঁতকে ওঠেন, তাহলে আজ থেকে আর উল্টো দিকে দৌড় দেবেন না। আপনিতো জানেন, আপনার ঘরে হিংস্র কোনো প্রাণী নেই। তাই ভয় পেলে আলো জ্বালিয়ে দেখুন, যা দেখে আপনি ভয় পেয়েছেন, সেটি আসলে কী!

এছাড়াও সেল্ফ মোটিভেশন পদ্ধতি কাজে লাগাতে পারেন। ঘরের শান্ত পরিবেশে বিছানায় গা এলিয়ে দিন। বাতাসে সুগন্ধি ব্যবহার করে এবার চোখ বন্ধ করুন। ভাবুন, আপনি একটি অন্ধকার ঘরে প্রবেশ করছেন। আপনার হাতে একটি জ্বলন্ত মোমবাতি। আপনি যাবার সঙ্গে সঙ্গে ঘরে রাখা সব মোমবাতি জ্বালাতে জ্বালাতে যাচ্ছেন। ধীরে ধীরে পুরো ঘরটাই আলোয় ভরে উঠলো।

অন্ধকারকে নেতিবাচক হিসেবে না নিয়ে ইতিবাচক ভঙ্গিতে দেখুন। মনযোগ, অনুভূতি ও শান্তির আশ্রয়স্থল হিসেবে দেখুন। মাঝে মাঝে পরিবারের সবার সঙ্গে চাঁদ দেখতে ছাদে বা বাইরে যান। জানালার পাশে বসে দেখতে পারেন রাতের পৃথিবী। এসময় না হয় পাশে কাউকে রাখুন। ভাবুন, সারাদিন ব্যস্ততার পর সবাই শান্তি পেতেই রাতের জন্য অপেক্ষা করে। তাহলে কেন ভয় পাবেন আপনি!

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

Previous articleচিকিৎসা করলে বিষণ্ণতা রোগ সেরে যায়
Next articleমনকে শান্ত রাখার সহায়ক কিছু কৌশল

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here