বিষণ্ণতা যে কোন সময় যে কোন রোগের জন্যই বিপদজনক । কিন্তু ধরন ২ ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে বিষণ্ণতা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশী । বিভিন্ন গবেষনায় দেখা গেছে যে, ডায়াবেটিস অন্যান্য রোগের তুলনায় বিষণ্ণতা হওয়ার সম্ভাবনা দ্বিগুন বাড়িয়ে দেয় । ডায়াবেটিস জনিত জটিলতা বৃদ্ধির সাথে সাথে বিষণ্ণতা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক অংশে বেড়ে যায়।
শারিরীক ও মানসিক কর্মকান্ডের অবয়তা থেকেই বিষণ্ণতার উৎপত্তি। একজন বিষন্নতায় আক্রান্ত ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্যাভ্যাস এবং ঔষধ সেবনের মাধ্যমে. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখা প্রয়োজন। প্রাথমিকভাবে বিসন্নতার লক্ষণগুলো হলো:
- দীর্ঘকালীন অবসাদবোধ, রাগ বেড়ে যাওয়া ও কাজে একেবারেই মন না থাকা
- আশাহত অনুভব করা অথবা নিরাসায় ভোগা
- নিজেকে অপরাধী ভাবা বা গ্লানিবোধ ,ব্যার্থতাবোধ অথবা অসহায় মনে করা
- সৌখিনতা বা নিজকর্মে আনন্দ অথবা আগ্রহ হারিয়ে ফেলা (এমনকি যৌন সম্পর্কেও), যা পূর্বে আনন্দ অনুভবের কারণ ছিল
- কর্মক্ষমতা ও দক্ষতা কমে যাওয়া বা বিষাদগ্রস্থ হওয়া
- মনোনিবেশ, স্বরণশক্তি ও সিদ্ধান্ত নির্ণয়ে সমস্যার সম্মুখীন হওয়া
- নিদ্রাহীনতা, অনেক ভোরে ঘুমথেকে উঠা অথবা অতিনিদ্রা
- ক্ষুধামন্দা এবং/ অথবা দেহের ওজনের পরিবর্তন (বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে ওজনাধিক্য)
মৃত্যু বা আত্মহত্যার চিন্তা করা - বিশ্রামে অনাগ্রহ অথবা অতিবিরক্তি প্রকাশ
ডায়াবেটিস ও বিষণ্ণতার পারস্পারিক সর্ম্পূকের সূনির্দ্দষ্ঠ কারন এখনও অজানা। গবেষনায় দেখা গেছে যে, মানসিক চাপ থেকেই বিষণ্ণতার সূচনা । আরো দেখা গেছে যে, ডায়াবেটিস রোগীদের ব্রেনের মেটাবোলিক কর্মকান্ডের অসম্পূর্ণতার ফলেই বিষণ্ণতার সৃস্টি হয়।
এক বিশেষ হরমন বা গ্রন্থিরস করটিসল (stress hormone) এর অকর্যকারিতাই বিষণ্ণতার কারণ। রক্তের গ্লকোজ মেটাবেলিজমে এবং ইনসুলিন সেন্সিটিভিটিতে বা সহিষ্ণতায় করটিসল গূরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। করটিসলের পরিমান বেড়ে গেলে তলপেটে বা এক বিশেষ হরমন বা গ্রন্থিরস করটিসল Abdomen এ চর্বি জমা হতে থাকে (Belly Fat) যেটা ধরন ২ ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। গবেষক এ চর্বি জমা হতে থাকে Wagner দেখেছেন যে, অধিক পরিমান করটিসল নি:সরনের ফলে অধিক বিসন্নতার সৃস্টি হয়, যা Belly Fat ও ডায়াবেটিস বাড়িয়ে দেয়। বিষণ্ণতা immune system অথবা সেরোটিনের (যা মেটাবেলিক কর্মকান্ড ও মানসিক অবস্থা ডুলেট করতে সাহায্য করে) পরিমান কমিয়ে দেয় যা ডায়াবেটিস রোগে প্রবণতা অনেক অংশে বাড়িয়ে দেয় ।
বিশেষজ্ঞদের মতে ডায়াবেটিস জনিত জটিলতা এবং বিষণ্ণতা প্রতিরোধের সর্বশ্রেষ্ঠ পন্থাই হলো সঠিক ভাবে রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রন। সুতরাং ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনার প্রধান মাধ্যমই হলো যতদুর সম্ভব রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রন করে স্বাভাবিক অবস্থায় রাখা। স্বাস্থ্যসন্মত খাদ্যগ্রহন এবং নিয়মিত শারিরীক কর্মকান্ডই পারে ইনসুলিনের সেনসিটিভিটি বা সহিষ্ণতায় বাড়িয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন ও ব্যবস্থাপনায় সহায়তা করতে।
সুস্বাস্থ্য ও মানসিক বিষয়ক পেশাজীবি (mental health professional) যেমন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ (psychiatrist), মনো বিজ্ঞানী (Psychologist) অথবা clinical social কর্মীর, যারা সঠিক ভাবে স্বাস্থ্যসুরক্ষার জন্য সরাসরি চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করে দেবে বিশেষভাবে যেসব রোগীর antidepressive ঔষধ প্রয়োজন। বিষণ্ণতা সম্পন্ন ডায়াবেটিস রোগীদের উচিৎ কোন মানসিক চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং প্রয়োজনে ঔষধ সেবনে তা নিয়ন্ত্রন করা।
অন্যান্য স্বাস্থ্য ও মানসিক সমস্যা যেমন Bipolar disorder (manic-depression illness), Anxiety disorders (হঠাৎ রেগে উঠা) ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে দেখা যায়। সেক্ষেত্রেও রোগীদের সুচিকিৎসার প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে যে, বিষণ্ণতা মস্তিস্কের একটি ব্যাধি। সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে বিষণ্ণতায় ভোগা ডায়াবেটিস রোগীরা আনন্দঘনপূর্ন জীবনযাপন করতে পারেন।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে