১৯৪৮ সালে দেওয়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংজ্ঞা অনুযায়ী, স্বাস্থ্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ মানসিক স্বাস্থ্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, মানসিক স্বাস্থ্য হলো, ‘শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও আত্মিক সু-অবস্থা এবং কোনো রোগ বা বৈকল্য না থাকা।’ সহজ কথায়, মানসিক স্বাস্থ্য হলো এমন মানসিক অবস্থা, যে অবস্থায় একজন মানুষ তার নিজের ক্ষমতা বুঝতে পারে, জীবনের স্বাভাবিক চাপসমূেহর সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে, উৎপাদনশীলতার সঙ্গে কাজ করতে পারে এবং তার স¤প্রদায়ের জন্য অবদান রাখতে পারে।
মানসিক সুস্বাস্থ্যের দরুন একজন মানুষ সেই ক্ষমতা অর্জন করে, যা তাকে নিজের সঙ্গে এবং তার চারপাশে থাকা অন্যান্যদের সঙ্গে যক্তু হতে বা একাত্ম হতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, এই দক্ষতার জোরে মানুষ তার জীবনের নানাবিধ চ্যালেঞ্জকেও গ্রহণ করতে সক্ষম হয়।
আমাদের সকলকেই জীবনের কোনো না কোনো সময়ে সাময়িকভাবে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হয়। ব্যক্তিগত বা কর্মজীবনের চ্যালেঞ্জগুলোর মোকাবেলা করতে গিয়ে অনেক সময়েই মানসিক অবসাদ এবং উদ্বিগ্নতার শিকার হতে হয়। যখন আমরা দেখি আমাদের স্বাভাবিক কাজগুলো ব্যাহত হচ্ছে, তখনই মানসিক অসুস্থতার প্রশ্নটি সামনে আসে। যদি কারো চিন্তা, আবেগ, স্মৃতিশক্তি ও বিচার-বিবেচনার পরিবর্তন ব্যক্তির নিজের এবং অন্য মানুষের ক্ষতির কারণ হয় এবং লক্ষণগুলো টানা কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস থাকে তাহলেই বুঝতে হবে তার কোনো না কোনো মানসিক সমস্যা আছে।
আমাদের প্রাত্যহিক জীবনযাপনে শরীরের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা অসুখগুলোর বিষয়ে আমাদের মধ্যে যতটা সচেতনতা দেখা যায় মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে ততটা সচেতনতা দেখা যায় না; বরং অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় এ বিষয়ে কোনো কথা বলাই যেন নিষেধ। শরীরকে ভালো রাখার জন্য আমরা শরীর চর্চা করি, নিয়ম মেনে খাদ্য গ্রহণ করি কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্যটা থেকে যায় অবহেলাতেই। অথচ একটা মানুষের শারীরিক সুস্থতা তখনই আসবে যখন সে মানসিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ থাকতে পারবে।
শরীর ও মন একই মদ্রুার এপিঠ-ওপিঠ। একটিকে ছাড়া অন্যটি অসম্পূর্ণ। বাগানের গাছগুলো বেড়ে ওঠার জন্য যেমন পরিচর্যা করতে হয়, তেমনি মনের সঠিক সুস্থতার জন্য কিছু প্রয়োজনীয় পরিচর্যা করতে হয়।
মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় কিছু করণীয়-
- বন্ধু-বান্ধব আর পরিবারের সংস্পর্শে থাকুন
- সমস্যাকে ভয় পাবেন না
- কষ্ট চেপে রাখবেন না
- প্রকৃিতর সান্নিধ্যে সময় কাটান
- পরচর্চা ছেড়ে দিন
- কাউকে বিপদে ফেলবেন না, কষ্ট দেবেন না বা ঈর্ষা করবেন না
- প্রতিদিন সৃষ্টিশীল বা নতুন কিছু করার চেষ্টা করুন
- পরিকল্পনা করুন
- শরীরের যত্ন নিন
- পছন্দের লোকজনের সঙ্গে সময় কাটান
- নিজের দেশ, নিজের মানুষদের ভালোবাসুন
- স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করুন
- শখের কাজ করুন
- খাদ্যাভাস ভালো রাখুন
- পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমান
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি ৫ জনে ১ জন মানুষ কোনো না কোনো মানসিক সমস্যায় ভোগেন। বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক অনেক সেবা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা নিরলসভাবে আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে চিকিৎসা দিয়ে থাকে। দেশের মোট ১৬ কোটি ১২ লাখ ৮৬৬ জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় দুই কোটি মানুষ মানসিক রোগে আক্রান্ত। মোট জনসংখ্যার ১৬ দশমিক ১ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষই ভুগছেন মানসিক ব্যাধিতে। এর মধ্যে ৮ দশমিক ৪ শতাংশ স্নায়বিক পীড়ায়, ৪ দশমিক ৬ শতাংশ গভীর বিষণ্ণতায় এবং ১ দশমিক ১ শতাংশ সরাসরি মনোব্যাধিতে আক্রান্ত। এছাড়া ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ শিশু মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত এবং ৭৫ শতাংশ শিশু চিকিৎসাসেবার বাইরে থাকে। এতে জনগণের কর্মক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে যা জাতীয় অগ্রগতি ও উন্নয়নের পথে বড়ো বাধা।
পরিহাসের বিষয়, উন্নত দেশের অবস্থা এর চেয়ে খুব বেশি ভালো নয়। খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শতকরা ৫০-৬০ ভাগ সিজোফ্রেনিয়া রোগী চিকিৎসাসেবা পায় না। এর প্রধান কারণ মানসিক রোগ চিকিৎসায় জনগণের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। তৃণমূল পর্যায়ের জনগণের জন্য সহজে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে মানসিক রোগ
বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক, মনোবিদ ও অন্যান্য সহায়ক পেশাজীবী ও চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টা জরুরি।
মানসিক স্বাস্থ্য সংকট মোকাবেলায় বিশ্বের সব দেশই ব্যর্থ হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ল্যানসেট কমিশনের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো দেশই হতাশা-উদ্বেগ আর সহিংসতা-বিভীষিকা থেকে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবেলায় যথাযথ পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হয়নি। মানসিক স্বাস্থ্যের এই ভয়াবহ পরিস্থিতিকে তাঁরা বিশ্বের স্বাস্থ্য সংকট মোকাবেলার ক্ষেত্রে সম্মিলিত ব্যর্থতা আখ্যা দিয়েছেন। ল্যানসেটের ২৮ জন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এই পর্যবেক্ষণ হাজির করেছেন। তাঁরা বলছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য সংকটের কারণে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে ১৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে।
কিছু ভ্রান্ত ধারণা:
- কারো অস্বাভাবিক আচরণ মানে তাকে জিনে বা ভূতে ধরেছে বা জাদুটোনা করা হয়েছে। অথচ এটা একটা ভ্রান্ত ধারণা।
- মানসিক রোগী মানেই তিনি পাগল। এটা মারাত্মক ভুল ধারণা।
- মানসিক রোগী কখনো ভালো হয় না।
- অনেকে মনে করেন, মানসিক রোগের ঔষধ দীর্ঘদিন খেতে হয় এবং তা ব্রেইনের ক্ষতি করে। বিষয়টা আসলে সেরকম নয়।
- মানসিক রোগ চিকিৎসায় ব্যবহৃত ঔষধগুলো আসক্তি তৈরি করে।
- মানসিক রোগীকে হাসপাতালে বেঁধে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এটা বরং আধুিনক চিকিৎসানীতির পরিপন্থী। বর্তমানে কমিউনিটিভিত্তিক আধুনিক চিকিৎসা-পদ্ধতিই সবচেয়ে কার্যকর।
পলিসি পরামর্শ: এ বছরের মে মাসে সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় ৭২তম বিশ্ব স্বাস্থ্য সমাবেশে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের অটিজম বিষয়ক শুভেচ্ছা দূত সায়মা ওয়াজেদ বলেন, ‘নিন্দা ও কুসংস্কার বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা মোকাবেলার ক্ষেত্রে দুটি প্রধান চ্যালেঞ্জ।’ তিনি আরো বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এসইএআরও দেশগুলো যেসব অভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে-নিন্দা ও কুসংস্কার, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পেশাজীবীর অপ্রতুলতা, স্বল্প বাজেট বরাদ্দ, মানসিক স্বাস্থ্য কর্মসূচি বাস্তবায়নে সমন্বয়ের অভাব ও বিশাল চিকিৎসাঘাটতি।’ মোট জনসংখ্যার বিপরীতে মাত্র ২৫০ জন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও ৬০ জন ক্লিনিক্যাল মনোবিজ্ঞানী রয়েছেন। এছাড়া শিশু মনোবিজ্ঞানী একেবারে নেই বললেই চলে। মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রশিক্ষিত চিকিৎসক রয়েছেন ১০ হাজার জন এবং নার্স ১২ হাজার জন।
লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, ২০২০ সালের মধ্যে এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করবে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এটি মারাত্মক ব্যাধিতে রূপান্তরিত হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি ৪০ সেকেন্ডে ১ জন মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। ৫০ ভাগ মানসিক রোগ ১৪ থেকে ২৫ বছর বয়সের মধ্যে তৈরি হয়। এজন্য শিশু ও তরুণদের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। সদ্য পাস হওয়া মানসিক স্বাস্থ্য আইন ২০১৮ বাস্তবায়নসহ এমবিএবিএস বা আন্ডারগ্র্যাজুেয়ট লেভেলে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে পড়াশোনা করাতে হবে। শিশুদের স্নেহ ছাড়াও সম্মান প্রদর্শন করে মানসিকভাবে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হবে। চিকিৎসার ক্ষেত্রে রেফারেল সিস্টেম চালু করতে হবে বা সব হাসপাতালে এ বিষয়ক সেবা চালু নিশ্চিত করতে হবে। বাংলদেশ মানসিক স্বাস্থ্যনীতি ২০০৬ এবং ২০১১-এ যা নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ (NCD) এর নিরীক্ষণ ও প্রতিরোধের স্ট্যাটেজি ও কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই পলিসি অনযুায়ী মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবনাগুলো হলো:
- কমিউনিটি পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার বিকাশ
- প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার একটি নিবিড় অংশ হিসেবে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার অন্তর্ভুক্তিকরণ
- মানব সম্পদ, পরিবার এবং স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণকারীদের অন্তর্ভুক্তকরণ
- স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণকারীদের মানবাধিকার সংরক্ষণ
- অ্যাডভোকেসি ও প্রচারণা বিভিন্ন ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর স্বাস্থ্য চাহিদা পূরণে সমতাভিত্তিক সম্পদের বিতরণ ও পুনর্বিন্যাস করে এর সহজলভ্যতা নিশ্চিতকরণ।
- স্বাস্থ্যসেবার গুণগত মান উন্নয়ন ও মনিটরিং সিস্টেমেরর বিকাশ। এই পলিসিতে মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু ঔষধও অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যেমন-antipsychotics, anxiytics, antidepressants, mood stabilizers and antiepileptic drugs ইত্যাদি।
- মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির চাকরি, শিক্ষাসহ সকল অধিকার সুরক্ষার বিষয়টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার রক্ষার আন্তর্জাতিক আইনের (Convention on the Rights of the Persons with Disabilit) সঙ্গে মিল রেখে হতে হবে। কারণ, অনেক সময় মানসিক রোগের কারণে সাময়িক ও দীর্ঘমেয়াদি প্রতিবন্ধিতা হতে পারে। মানসিক স্বাস্থ্যে মর্যাদাবোধ তৈরি মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য দরূীকরণ ও জনগণের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এজন্য জনসচেতনতা বিশেষত স্কুল, কলেজসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতামলূক কর্মসূচি আয়োজন ও এ বিষয়টি পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়া প্রয়োজন।
মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিগণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক অবহেলা ও বৈষম্যের শিকার। এর অন্যতম কারণ মানসিক স্বাস্থ্য, রোগ ও এর চিকিৎসার প্রতি জনগণের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির রোগ নির্ণয় করে দ্রুত চিকিৎসা সেবার আওতায় নিয়ে আসতে পারলে তাদেরকে উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় নিয়ে আসা সম্ভব। মানসিক স্বাস্থ্যকে বাদ দিয়ে ও মানসিক রোগকে অবহেলা করে জাতীয় অগ্রগতি ও উন্নয়ন অসম্ভব।
সবার মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন জনসচেতনতা ও সকলের সম্মিলিত সহযোগিতা। প্রাথমিকভাবে জনগণের মধ্যে মানসিক রোগ বিষয়ক সচেতনতা তৈরি করতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কুসংস্কার দূর করতে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। সমাজ থেকে কুসংস্কার দূর করতে না পারলে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা অনেকটাই অসম্ভব হয়ে পড়বে। গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক লেখায় শব্দচয়নের ওপর খেয়াল রাখতে হবে। কোনোভাবেই মানসিক রোগীকে পাগল বলা যাবে না। নেতিবাচক প্রতিবেদন না লিখে, ইতিবাচক প্রতিবেদন লিখলে সমাজের ওপর ভালো প্রভাব পড়বে। একইসঙ্গে যারা মানসিক সমস্যা থেকে মুক্ত হয়েছেন, তাদের সুস্থ হওয়ার গল্পটা প্রতিবেদন আকারে প্রকাশিত হলে সবার মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
সূত্র: লেখাটি মনের খবর মাসিক ম্যাগাজিনে প্রকাশিত।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে