কোভিড-১৯ মহামারী শুধু আমাদের শারীরিকভাবেই নয়, বরং মানসিকভাবেও অস্থির সময় পার করতে বাধ্য করেছে। যারা সংক্রমিত নন তারা ভুগছেন নানান রকমের মানসিক সমস্যায়। মহামারীর ফলশ্রুতিতে অনেকের মাঝে বিষণ্ণতা, ক্ষোভ, হতাশা ইত্যাদি সৃষ্টি হচ্ছে। আর এই হতাশাই পরিণত হচ্ছে ক্রোধে। অকারণে মানুষ রেগে যাচ্ছে এবং এর ফলে নানা রকম অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে। এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে মানসিক স্থিতাবস্থা প্রয়োজন, প্রয়োজন শান্ত থাকা।
কোভিড-১৯ মহামারীতে স্বাস্থ্য ঝুঁকির সাথে সাথে দৈনন্দিন জীবন যাপনের সব দিক গুলোই ঝুঁকির মুখে পড়েছে। মানুষ সামাজিক, পারিবারিক, আর্থিক, রাজনৈতিক, চিকিৎসা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় সহ নানা দিক থেকে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে।
এসব সমস্যা থেকে উদ্ভূত হচ্ছে বিভিন্ন মানসিক সমস্যা। এসব সমস্যার মধ্যে রয়েছে হতাশা, দুশ্চিন্তা, বিষণ্ণতা, অবসাদ ইত্যাদি। আর এসব কিছু থেকে কারণে অকারণেই যে বিষয়টির উদ্রেক হয় সেটি হল ক্রোধ। মহামারীর কারণে অনেক শান্ত মস্তিষ্কের মানুষকেও অত্যন্ত বিচলিত হয়ে ক্রোধের বশবর্তী হতে দেখা গেছে যেখানে ক্রোধ একেবারেই নিষ্প্রয়োজন। এমনটা মোটেই হওয়া উচিৎ নয়। মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করে ক্রোধ এবং অন্যান্য অবগুণ মুক্ত থাকার জন্য কিছু কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে।
১) ঠাণ্ডা মাথায় একবার পূর্বের ঘটনার কথা ভাবুন যখন আপনি এভাবে নিজের মেজাজ হারিয়েছিলেন। একবার ভেবে দেখুন তো, আপনি যে কাজটি করেছেন সেটি নিয়ে কি আপনি সন্তুষ্ট? ক্রোধের বশবর্তী হয়ে সেই মুহূর্তে আপনি যে সব কথা বলেছেন বা যে সব কাজ করেছেন সেগুলো কি উচিৎ ছিল? অবশ্যই ভাবছেন এগুলো আপনার স্বভাবের সাথে মোটেও মেলেনা। তাই নিজের কাজের জন্য নিজের মাঝেই অনুতাপের সৃষ্টি হচ্ছে। এই অনুতাপকে কাজে লাগান। নিজেকে নিজে বুঝান যে এই কাজ গুলি মোটেই সমীচীন নয়। নিজের এবং পরিবারের অন্যান্যদের ভালোর জন্য আত্মনিয়ন্ত্রণের চেষ্টা অব্যাহত রাখুন।
২) যখন কোন কিছু নিয়ে আপনার মধ্যে ক্রোধের উদ্রেক হবে সাথে সাথে যে কোন প্রতিক্রিয়া প্রদান থেকে বিরত থাকুন। এতে আপনি আত্মনিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে সমর্থ হবেন। প্রথম ধাপে বড় করে নিঃশ্বাস নিন। এতে আপনি সিদ্ধান্ত নিতে আরও বেশী সময় পাবেন, আপনার হৃদ স্পন্দন স্বাভাবিক হবে এবং রক্ত চাপ কমার অবকাশ পাবে। এমন সময়ে আপনি এমন কিছুই করবেন না বা বলবেন না যা পরবর্তীতে আপনার মনে অনুতাপের সৃষ্টি করে।
৩) ভয় বা হতাশার মুখোমুখি হয়ে এর মূল কারণ খুঁজে বের করুন। হতে পারে কর্মহীনতা, অর্থনৈতিক সমস্যা, সামাজিক জীবনে ব্যত্যয়, রোগ, শোক, মৃত্যু ইত্যাদি কারণে আপনার মাঝে ভয়, হতাশা, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। আর এর থেকেই আপনি কারণে অকারণে ক্রোধিত হচ্ছেন। মনে রাখবেন শুধু আপনি একাই এই সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন তা নয়। পৃথিবীব্যাপী লাখ লাখ লোক করোনা আতঙ্কে ভুগছে এবং সবার জীবন আজ বিপর্যস্ত। তাই কষ্ট বা শোক করে কোন সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। ধৈর্য ধারণ করে এই বিপদ মোকাবেলা করতে হবে। সমস্যা উত্তরণের পথ খুঁজে বের করতে হবে। মানসিক ও শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকতে হবে।
৪) ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা করা ত্যাগ করতে হবে। আমরা কেউই জানিনা এই মহামারী কবে এবং কিভাবে শেষ হবে। সব কিছুই অস্পষ্ট। তাই অযথা ভবিষ্যতে কি হবে বা হতে চলেছে এটা ভেবে দুশ্চিন্তা বা হতাশায় নিমগ্ন হওয়ার কোন অর্থ নেই। আমাদের সবার উচিৎ এই সময়ে একটি শিশুর মত জীবন যাপন করা। সকল দুশ্চিন্তা দূরে ঠেলে দিয়ে শুধু বর্তমানে বাঁচুন। পরিবারের সবার সাথে সুন্দর সময় অতিবাহিত করুন।
এই সকল কৌশল অবলম্বন করলে আপনি মানসিক শান্তি নিয়ে জীবন যাপন করতে পারবেন এবং দুশ্চিন্তা, হতাশা থেকে উৎপন্ন ক্রোধ আপনার নিজের তথা আপনার কাছের মানুষদের মানসিক কষ্টের কারণ হয়ে ওঠা থেকেও মুক্ত থাকতে পারবেন। মহামারী সময়েও সুস্থ জীবন যাপনের পথে অগ্রসর হতে পারবেন।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে