বরিশালের আগৈলঝড়ার প্রত্যন্ত গ্রামের ৩৮ বছর বয়সী শাহানা বেগম (ছদ্মনাম) ভুগছিলেন আত্মহত্যা প্রবণতাজনিত মানসিক সমস্যায়। এ পর্যন্ত তিনবার তিনি আত্মহত্যা চেষ্টা করেছেন। বেঁচে ফিরেছেন ভাগ্যগুণে। কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে ছিল না তার কোনো ধারণা। ঘটনার পরিক্রমায় একসময় শরণাপন্ন হন মনোচিকিৎসকের। এখন তিনি কেমন আছেন, কেমন ছিল সেইসব দিনের অভিজ্ঞতা তা জানতে মনে খবর প্রতিনিধি তানিয়া আক্তার কথা বলেছেন শাহানা বেগমের সাথে।
কেমন আছেন?
: আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহর রহমতে ভালো আছি।
আমরা শুনেছি আপনি কয়েকবার আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন, কেন চেয়েছিলেন একটু বলবেন?
: আমি মোট তিনবার আত্মহত্যা করতে গেছিলাম। প্রথমবার আমার বয়স তখন ১৫ বছর, ক্লাস নাইনে পড়ি। আমার স্বামীর সঙ্গে তখন আমার প্রেম ছিল। দুই পরিবারের লোক মেনে নিতে চায় নাই। তখন মনের কষ্টে গলায় দঁড়ি নিছিলাম। ছোট কাকা বেড়ার ফাঁক দিয়া দেইখা দড়জা ভাইঙ্গা ফালাই। এরপর করছিলাম প্রথম মাইয়ার বয়স যহন দেড় মাস। তহন আমার বয়স আছিলো ১৮ বছর। পোলা না হওয়াতে শশুর বাড়ির মাইনষে বেশি কথা শুনাইতো, তাই সহ্য করতে পাইরা এবারও গলায় দঁড়ি নিছিলাম। এরপর পাঁচ বছর আগে একবার মরতে নিছিলাম বিষ খাইয়া। মরি নাই, হাসপাতালে নিয়া ওয়াশ করাইছিলো। সেবার হঠাৎ কইরাই রাগ উইঠা মরেত চাইছিলাম।
এই যে আত্মহত্যার চেষ্টা করতেন, কেন করতেন? মানে তখন কি মনে হত?
: আমার রাগ আর কষ্ট দুইডাই বেশি আছিলো। রাগ উঠলে বা কষ্ট পাইলেই মনে হইতো যে মইরা যায়। আমার এর বেশি কিছু মনে হইতো না। তয় পাড়া পড়শী আত্মীয়রা কইতো আমার মাথায় জ্বীন আছে। ওঝা দেহাইছে। ঝাঁড় ফুঁক দিছে, আমার রাগ কমে নাই। প্রথম দুইবার চেষ্টার পর দঁড়ি পোড়াইছে, যাতে ওই দঁড়ি আমারে আর না ডাকতে পারে।
এই ঘটনা গুলি থেকে ফেরার পর আশেপাশের মানুষের প্রতিক্রিয়া কেমন হত?
: আত্মীয় স্বজনরা প্রথম প্রথম কয়দিন যত্ন নিত। ভালো মন্দ খাওয়াইতো। কেউ আসলে আমার দোষ দিত না, সব দোষ দিত জ্বীনের। আমার দোষ অবশ্য একটু দিত এইজন্য যে আমি চুল খুইলা ঘুরতাম। চুল বাইন্ধা রাখলে গরম লাগতো। সবাই কইতো চুল খোলা রাখায় আমারে জ্বীনে ধরছে। কারো সাথে ঝগড়া লাগলে এইসব নিয়া বেশি কথা তুলতো, তহন বেশি মন খারাপ হইতো।
এটা যে একটা রোগ সেটা কখন বুঝলেন এবং কিভাবে?
: বাপের বাড়ি শশুর বাড়ি মিলে জমিজমা খারাপ নাই। ক্ষেতে ফসল টুকটাক হয়। তয় ফসল বোনার সময় এনজিও দিয়া লোন নিতে হয়। শ্যাষবার যহন বিষ খাইলাম তহন বরিশাল মেডিক্যালে নিয়ে গেলো। দুই দিন পর এনজিওর ম্যানেজার আপা দেখতে গেলেন। তিনি কইলেন মনের রোগের ডাক্তার দেহাইতে। প্রথমে আমরা পাগলের ডাক্তার ভাইবা রাজি হই নাই। পরে ম্যানেজার আপার চাপেই মনের রোগের বিভাগে দেহাইছি। তারা বুঝাইছে, ওষুধও দিছিলো। তারপর দিয়া ভালো আছি।
তারপর আর কখনও এমন ইচ্ছা হয়েছে?
: দু একবার হইছে। তয় আগের মত অত না। ইচ্ছা হইলে থামাইতে পারছি। রাগও কইমা গেছে। ডাক্তাররা যহন বুঝাইছে এইডা একটা অসুখ, তারপর থেকে কেমন যেন মন বদলাইয়া গেছে।
জ্বীন ভূতে বিশ্বাস করেন এখন আর?
: নাহ, করি না। যারা করে তাগোও মানা করি। সবাইরে ডাক্তারের কাছে যাইতে বলি।
বাহ্। বেশ ভালো। আপনার পরিবারে এখন কে কে আছে?
: আমার দুই মাইয়া। স্বামী আর আমি। বড় মাইয়া কলেজে পড়ে। ছোটোটা সেভেন। স্বামী কৃষিকাজ করে। আমি ঘরের কাম করি।
মনের খবর‘কে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
: আপনিও ভালো থাকবেন।
করোনায় স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে