রাগে ফেটে পড়লে আমরা অনেক সময়ে মাথার চুল ছিঁড়ে ফেলার কথা বলি। অনেককে এসময় আঙ্গুল দিয়ে মাথার চুল পেঁচাতে পেঁচাতে টেনে তুলতেও দেখা যায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, মাথার চুল ছিঁড়ে ফেলার এই আচরণ অল্প বয়সী ছেলেমেয়েদের মধ্যেই বেশি চোখে পড়ে। ছেলেদের তুলনায় মেয়েরাই করে বেশি।
এটি কিন্তু এক ধরনের মানসিক রোগ যাকে বলা হয় ট্রিকোটিলোম্যানিয়া। এতে আক্রান্ত হলে শরীরের যে কোনো জায়গার চুলই টেনে, তুলে ফেলতে দেখা যায়। মাথার চুল ছিঁড়ে ফেলা ছাড়াও ভ্রু, চোখের পাপড়ি, গোঁফ-দাঁড়ি, এমনকি যৌনাঙ্গের আশেপাশের চুলও- তারা টেনে তুলতে থাকে এই রোগে আক্রান্ত হলে।
এরকমই একজন যুক্তরাজ্যে ১৪ বছরের এক কিশোরী মেগান মেলোন। সাত বছর বয়স থেকেই তার এই অভ্যাস। বিবিসিকে তিনি বলেন, “প্রথমে আমি ভ্রু, তারপর চোখের পাপড়ি টেনে টেনে উপড়ে ফেলেছি। তারপর একটা সময় মাথার পেছনের দিকের চুল টেনে তুলতে শুরু করি। একসময় দেখি পরিস্থিতি খুব খারাপ। এক পর্যায়ে দেখলাম মাথার পেছন দিকের একটা জায়গা ন্যাড়া হয়ে গেছে,”।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা যখন কোনো বিষয়ে অস্থির বা উত্তেজিত হয়ে পড়ে বা মানসিক চাপে থাকে তখনই তারা চুল টেনে ছিঁড়তে শুরু করে। এবং ছেঁড়ার পর তারা মানসিকভাবে কিছুটা হলেও স্বস্তি বোধ করে। কিন্তু তারা যে এই কাজটা করে সেটা তারা অনেক সময় বুঝতেও পারেন না।
মেগান বলেন, “যখন আমার উপর খুব বেশি মানসিক চাপ তৈরি হয়, কিম্বা খুব বেশি রেগে যাই, তখনই আমি মাথার চুল টেনে টেনে ছিঁড়ে ফেলতে থাকি। হয়তো মাথার চুল ছিঁড়ে ফেলার এই কাজটা আমি পছন্দও করছি না। কিন্তু কি করবো, সেসময় আমি নিজেকে থামাতে পারি না। একসময় এটা আমার নেশার মতো হয়ে দাঁড়ায়। মাথার ভেতরে কেউ একজন তখন আমাকে এই কাজটা করতে বলতে থাকে।”
গবেষকরা বলছেন, চুল টেনে তুলতে তুলতে একসময় চুল কমে গিয়ে মাথার অনেক জায়গায় ন্যাড়াও হয়ে যায়। তখন সেটা হয়ে দাঁড়ায় সামাজিক লজ্জার কারণ । কমে যায় আত্মবিশ্বাস। সামাজিক মেলামেশা থেকেও সে তখন নিজেকে দূরে রাখতে শুরু করে।
এর কারণ কি? চিকিৎসকরা বলছেন, সেটি এখনও নিশ্চিতভাবে জানা যায় নি। তবে ধারণা করা হয় যে উত্তেজনা কিম্বা মানসিক চাপ, মস্তিষ্কে রাসায়নিক ভারসাম্যহীনতা, বয়ঃসন্ধিকালে হরমোন নিঃসরণের মাত্রায় পরিবর্তন- ইত্যাদি এর কারণ হতে পারে।
তিন মাসের এক থেরাপির পর এই ট্রিকোটিলোম্যানিয়া থেকে মুক্ত হয়েছেন মেগান মেলোন। তার থেরাপিস্ট ছিলেন এলিসন স্কবি।
তিনি বলেন, “সামাজিক চাপের কারণে শিশু কিশোর কিশোরীরা এধরনের আচরণ করে থাকে। বর্তমান সময়ে তাদের মধ্যে নানা কারণে এই মানসিক অস্থিরতার সৃষ্টি হয়। এর পেছনে বড়ো একটি কারণ সোশাল মিডিয়া। মেগান এই আচরণ থেকে বেরিয়ে এসেছে কারণ সে তার নিজের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে পেরেছে।”
এর চিকিৎসার জন্যে কোন ওষুধ নেই। শুধুমাত্র অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমেই এই প্রবণতা বন্ধ করা সম্ভব।
এজন্যে যা করা যায় সেগুলো হচ্ছে- শিশুটি কেনো তার মাথার চুল ছিঁড়ে ফেলছে, সেটি লক্ষ্য করা। এবং সেখান থেকে একটি উপায় খুঁজে বের করা যে এই অভ্যাস কিভাবে পরিহার করা যায়। যেমন এসময় তার হাতে একটি স্ট্রেস বল দেওয়া যেতে পারে। আরো আছে ফিজেট স্পিনার নিয়ে খেলা, মাথায় শক্ত টুপি পরা, জোরে শ্বাস নেওয়া, ব্যায়াম করা, গোসল করা, আঙ্গলের ডগায় প্লাস্টিকের একটি ক্যাপ পরা এবং মাথার চুল ছোট করে কেটে রাখা। এছাড়াও সবচেয়ে জরুরী- এসময় প্রিয়জনেরা তাকে ভালোবাসা, মানসিক সমর্থন এবং উৎসাহ দিলেও সে ট্রিকোটিলোম্যানিয়া থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে।
সূত্র: বিবিসি
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন