কোভিড-১৯ নিয়ে এক এক জনের চিন্তা ভাবনা এক এক রকম। কেউ একে খুব হালকা ভাবে নিচ্ছে তো কেউ খুব গুরুত্বের সাথে দেখছে। এর উপর ভিত্তি করে কেউ মাস্ক পরছে তো কেউ পরছে না। আর এর ফলে সৃষ্টি হচ্ছে এক মহা অরাজক অবস্থা।
কোভিড-১৯ সমস্ত পৃথিবীর মানুষের জীবন ব্যবস্থাকে পালটে দিয়েছে। বছরের প্রায় অর্ধেকটা সময় পার হয়ে গেছে কিন্তু করোনা এখনো একইভাবে সংক্রমণ ছড়িয়ে যাচ্ছে। আমরা কেউই জানিনা আমাদের ভবিষ্যৎ কি এবং আর কতো দিন আমাদের এভাবে দুর্বিষহ জীবন যাপন করতে হবে। অনেকেই আগের জীবনে ফিরে যেতে ভয় পাচ্ছে আবার অনেকেই সব ভয় ত্যাগ করে আগের মত করে জীবন যাপন শুরু করেছে। এর ফলে সংক্রমণ বাড়ছে। বাড়ছে ভয় এবং অসন্তোষ। কিন্তু মানুষের এই মানসিকতা পরিবর্তন করা বেশ কঠিন। তাই সৃষ্টি হচ্ছে এক মহা দুর্যোগ পূর্ণ পরিবেশ।
মানুষের আচরণের মধ্য দিয়েই ফুটে ওঠে তার মানসিক অবস্থা। কোভিড-১৯ নিয়েও মানুষের মাঝে বিভিন্ন ধারণা প্রচলিত রয়েছে। আর এর ফলে করোনা নিয়ে তাদের প্রতিক্রিয়াও ভিন্ন ভিন্ন। যেমন, ডাবলুএইচও থেকে করোনা সুরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে যেসব নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে অনেকেই সেটি মেনে চলেন, আবার অনেকে চলেন না। কেউ কেউ মাস্ক পরে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা চলাচল করা, কিছুক্ষণ পর পর জীবাণু নাশক দিয়ে হাত ধোয়া ইত্যাদি মেনে চলে, আবার কেউ চলেনা। এছাড়াও মানুষের মাঝে করোনা নিয়ে বেশ মতবিরোধ ও দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ একে স্বাভাবিক জীবন যাপনের পথে এক বড় অন্তরায় হিসেবে দেখছেন, আর অনেকে একেবারেই গুরুত্ব দিচ্ছে না। করোনায় প্রতি দিন লক্ষ লক্ষ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে এবং অসংখ্য মানুষ মৃত্যুবরণ করছে। তবুও অনেকেই নিছক অসতর্ক এবং একগুঁয়ে মানসিকতার কারণে অসুরক্ষিত জীবন যাপন করছে এবং নিজের ও অন্যদের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
মানুষের এই প্রতিক্রিয়া বা আচরণের পেছনে অনেক কারণ কাজ করছে। মনস্তত্ত্ববিদদের মতে, মানুষ তাদের জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কোন রোগ বা পরিস্থিতি মোকাবেলায় কি কি সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বা তার মানসিক প্রতিক্রিয়া কেমন হবে তা নির্ভর করছে সে ওই পরিস্থিতি বা রোগকে কতোটা ঝুঁকিপূর্ণ ভাবছে তার উপর। একই ভাবে, মানুষ কোভিড-১৯ মোকাবেলায় কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে,যেমন- সে মাস্ক পরবে কি পরবেনা- সেগুলো নির্ভর করবে তারা কোভিড-১৯কে কতোটা ঝুঁকিপূর্ণ ভাবছে সেটির উপর। তাই যাদের জন্য আমরা সবাই এবং বিশেষত তারা নিজেরাও নিজেদের জন্য ঝুঁকির মুখোমুখি হচ্ছে তাদের ভাবনা বা মানসিকতা পরিবর্তন করতে পারলে তবেই তাদের আচরণে পরিবর্তন আসবে।
যারা কোভিড-১৯এর ঝুঁকি সম্পর্কে অবগত নন বা জেনেও মানতে নারাজ, তাদের মানসিকতা পরিবর্তন খুব সহজ কাজ হয়তো নয়, কিন্তু অসম্ভব ও নয়। যেহেতু সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা গুলো বিভিন্ন গবেষণা দ্বারা প্রমাণিত তাই তাদের সামনে সেই তথ্যগুলো নিয়ে আসা যেতে পারে। যেহেতু মানুষের চিন্তাভাবনাই তার কার্যক্রম নির্ধারণ করে, তাই যদি কোভিড-১৯ সম্পর্কে তাদের ভুল ধারণা বা একগুঁয়ে মানসিকতা পরিবর্তন করা যায় তাহলে তারাও সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা, যেমন- মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ইত্যাদি কাজ গুলো করতে উৎসাহিত হবে স্বতঃস্ফূর্তভাবে।
মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি পেলে তাদের মাঝে অজ্ঞানতা দূর হবে এবং একগুঁয়ে মানসিকতাও ধীরে ধীরে সচেতনতায় বদলে যাবে। আর এই মানসিকতার পরিবর্তনই কোভিড-১৯ মোকাবেলায় তাদের মূল অস্ত্র হিসেবে কাজ করবে এবং সমাজের সবার জন্য মঙ্গল বয়ে নিয়ে আসবে।
অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন