এতদিনের চেনাজানা জীবনটা হঠাৎই কেমন পালটে গেছে রাতারাতি! করোনা ভাইরাস সংক্রমণের জেরে দিনের পর দিন গৃহবন্দি দশা, রাস্তাঘাট চূড়ান্ত নিস্তব্ধ, কোনও বন্ধু-আত্মীয়ের সঙ্গে দেখা করার উপায় নেই, এমনকী নেহাত প্রয়োজন ছাড়া রাস্তাঘাটে পা রাখাও নিষিদ্ধ! দিনের পর দিন এমন অবস্থায় থাকতে হলে মনের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে অসুবিধে হয় বইকী! এবং সে জন্যই এই করোনা পর্বে যতটা দরকার শারীরিকভাবে সুস্থ থাকা, ঠিক ততটাই দরকার মানসিক স্থৈর্য। তাই ঘরবন্দি থাকার দিনগুলোয় কীভাবে বশে রাখবেন আপনার মনকে, তা জেনে নিন এখনই।
লকডাউনের কারণে মানসিক সমস্যা হচ্ছে কিনা বুঝবেন কীভাবে?
সাম্প্রতিক যা পরিস্থিতি তা এক কথায় নজিরবিহীন। রাতারাতি এমন একটা পরিবেশে থাকতে বাধ্য হলে তা অজ্ঞাতসারে মনের উপর প্রবল চাপ ফেলতে পারে। আপনিও তার শিকার হচ্ছেন কিনা ভাবুন। দেখুন নিজের মধ্যে নিচের কোনও চিহ্ন দেখতে পান কিনা!
উদ্বেগ: প্রতিদিনই করোনা সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। যেহেতু এই রোগের এখনও কোনও টিকা বা ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি, তাই ভয়ও রয়েছে। তা ছাড়া এই লকডাউনের মেয়াদ আরও বাড়বে কিনা, তার কোনও নিশ্চয়তাও নেই। এরকম পরিস্থিতিতে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠায় ভোগা খুব স্বাভাবিক। যাঁরা ঘটনাচক্রে প্রিয়জনের থেকে দূরে আছেন, তাঁদের উৎকণ্ঠা আরও বেশি।
বিষণ্ণতা: মানুষ স্বভাবগতভাবেই সামাজিক। একা থাকতে হলে তার স্বাভাবিকভাবেই সমস্যা হওয়ার কথা। দৈনন্দিন কাজকর্মের পরিমাণ হঠাৎ কমে গেলে, চলাফেরায় নিয়ন্ত্রণ এসে পড়লে মানিয়ে নেওয়া কঠিন হয়, ফলে বিষণ্ণতা দেখা দেয়।
মানসিক চাপ: যেহেতু সবই বন্ধ, তাই অফিসের পাশাপাশি ঘরের কাজও করতে হচ্ছে সমানতালে। ফলে মনের উপরেও চাপ পড়ছে বেশি।
কীভাবে কাটিয়ে উঠবেন এই পরিস্থিতি
একটা কথা প্রথমেই মেনে নিতে হবে, এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তির উপায় আপাতত জানা নেই। তাই ধৈর্য ধরতেই হবে। তার জন্য কিছু কৌশল মেনে দেখতে পারেন, উপকার পাবেন।
অতিরিক্ত তথ্য দিয়ে মাথা ভারী করবেন না
সারাক্ষণ খবরের কাগজ বা সোশাল মিডিয়ায় করোনার খবর খুঁজবেন না। খবর অবশ্যই রাখুন, কিন্তু সেটাই যেন আপনার একমাত্র কাজ না হয়। সোশাল মিডিয়া বা নিউজ চ্যানেল দেখার সময়টা বেঁধে নিন, তা না হলে অহেতুক উদ্বেগ বাড়বে।
খবরের সোর্স যাচাই করুন
আজকাল মিথ্যে খবরের প্রচার এত বেড়ে গেছে যে যাচাই না করে কোনও খবর বিশ্বাস করবেন না। বিশ্বাসযোগ্য নিউজ চ্যানেল বা ওয়েবসাইটে খবরটা পেলে তবেই বিশ্বাস করুন।
শরীরের যত্ন নিন
মানসিক স্বাস্থ্য আর শারীরিক স্বাস্থ্য পরস্পরের সঙ্গে জড়িত। সারাক্ষণ মানসিক চাপে থাকলে তা শরীরের উপরেও প্রভাব ফেলবে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়বে। তাই শরীরের যত্ন নিন। পুষ্টিকর হালকা খাবার খান, ব্যায়াম করুন।
শৃঙ্খলা বজায় রাখুন
সারাদিন বাড়িতে আছেন মানেই যখন খুশি ঘুম থেকে উঠলেন, যা খুশি খেলেন, তা নয়। বরং একটা রুটিন করে নিন। খাওয়া আর ঘুমোনোর সময়টুকু নির্দিষ্ট রাখুন। প্রফেশনাল আর ব্যক্তিগত জীবনের মাঝেও সীমারেখা টেনে দিলে জীবনটা সহজ হবে।
মনের খেয়াল রাখুন
কোভিড-১৯ যেন আপনার চিন্তার একমাত্র কেন্দ্রবিন্দু না হয়ে ওঠে! ব্যাপারটা খুবই আশঙ্কার নিঃসন্দেহে, কিন্তু সবসময় অসুখবিসুখ নিয়ে ভাববেন না। জীবনের অনেক সুন্দর দিক আছে, সে সবের দিকে মনোযোগ দিন।
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন