কাজ আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। কাজ আমাদের মনকে সঠিক দিশা প্রদান করে। আর এই কাজের মাধ্যমেই ব্যক্তি আত্মসম্মান এবং মানসিক প্রশান্তিও লাভ করে।
ছোট বা বড় যেমন ই হোক, কাজ মানুষের জীবনে পূর্ণতার অনুভূতি প্রদান করে। জীবনে কিছু করতে হবে এমন প্রেরণাই মানুষের জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যায় এবং এক সময় লক্ষ্য পূরণ করে জীবন পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। মানুষ জীবনে বিভিন্ন স্বপ্ন দেখে আর এসব স্বপ্ন পূরণের জন্য যে পথ অবলম্বন করে সেটিই হল কাজ। মানুষের কর্ম জীবনই হল তার সফলতার মাপকাঠি।
সময়ের সাথে সাথে মানুষের কাজের ধরণ বদলেছে। বদলেছে কর্ম নিয়ে আমাদের মানসিকতা। আগে যেখানে সব কিছু শ্রম নির্ভর ছিল, এখন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সব কিছু প্রযুক্তি নির্ভর। যুগের সাথে সাথে তাল মিলিয়ে নতুন নতুন প্রযুক্তি শ্রমবাজার দখল করেছে এবং মানুষ এসব প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে সহজ উপায়ে আগের কাজগুলো করতে পারছে। আগে মানুষের মাঝে ছোট বা বড় কাজ নিয়ে মানসিক উৎকণ্ঠা থাকতো কারণ আমাদের সমাজে উপার্জন বা কাজের ধরণের সাথে সামাজিক মর্যাদাকে জুড়ে দেওয়া হত। অপেক্ষাকৃত কম উপার্জনের কাজ করে এমন মানুষ সমাজে কম সম্মান এবং আদর পেতেন। তারা মানসিক ভাবে সব সময় কুণ্ঠিত বোধ করতেন। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এখন সব কাজকেই সমান হিসেবে দেখা হয়। একজন কাজের সাথে যুক্ত মানুষ অন্যান্যদের তুলনায় অধিক আত্মবিশ্বাসী হন। কাজের প্রতি ইতিবাচক মানসিকতাই আজ যে কোন কাজ মানুষকে বাঁচার আশা যোগায়। আর কাজহীন অলস মানুষ আজ অসম্মানের পাত্র।
বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নতুন করে আজ মানুষের কর্ম জীবনকে সংজ্ঞায়িত করছে। মানুষ সংক্রমণের শঙ্কায় ঘরের বাইরে যেতে পারছেনা। তাই কিভাবে বাইরে না গিয়ে ঘরে বসেই প্রয়োজনীয় কাজ সেরে ফেলা যায় সেটি নিয়ে ভাবছে। আগে যেখানে অফিসে গিয়ে সব কাজ করতে হত, অনেক ক্ষেত্রেই সে কাজ ঘরে বসে সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে। প্রযুক্তির উন্নতি কাজ নিয়ে মানুষের ঝামেলা কমিয়েছে, জীবন আরও সহজ হয়েছে। আবার অনেকের ক্ষেত্রে এর উলটো ফলাফল ও ঘটেছে যা মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা এবং বিষণ্ণতার জন্ম দিয়েছে। কর্মহীন হয়ে পড়ার দুশ্চিন্তায় আজ অনেকেরই মানসিক অবস্থা সঙিন। অনেকে কাজই ঘরে বসে করা সম্ভব নয়। ডাক্তার, পুলিশ সহ অন্যান্য সেবা কর্মীরা এমন অবস্থাতেও সেবা প্রদান করে চলেছেন যা তাদের নিজেদের ও তাদের পরিবারের সুরক্ষার ক্ষেত্রে এক বড় অন্তরায়। আর এই ঝুঁকি তাদেরকে চরম মানসিক চাপ এবং উদ্বিগ্নতার মধ্যে রেখেছে। কর্ম জীবনই আজ তাদের জন্য সব থেকে বড় মানসিক ও শারীরিক ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কাজ না করে অলস বসে থাকা যেমন বিভিন্ন মানসিক রোগের কারণ তেমনি আজ বিভিন্ন কাজ করতে গিয়েও অনেক মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। কাজ এবং মানসিক সুস্বাস্থ্যের মধ্যে ব্যাল্যান্স করা এখন সময়ের দাবি। মানসিক সমস্যা গুলোর সুষ্ঠু সমাধান না করতে পারলে আমরা শারীরিকভাবেও বিভিন্ন রোগ ব্যাধির সম্মুখীন হতে পারি। আর দৈনন্দিন জীবনে সুস্থ ও স্বাভাবিক ব্যবস্থা বজায় রাখতে শারীরিক ও মানসিক উভয়ভাবে সুস্থ থাকাই জরুরী। যারা আজ কর্মহীন তাদের জন্য ধৈর্য ধারণ এখন সব থেকে বেশী প্রয়োজন। কোন ভাবেই হতাশ হয়ে ভেঙ্গে পড়া যাবেনা। বরং বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে যেতে হবে কর্মহীনতা দূর করার। আর যে সব মানুষ কাজের সাথে যুক্ত এবং এই অবস্থাতেও বাইরে গিয়ে প্রয়োজন মেটাতে হচ্ছে তারা বিভিন্ন মানসিক সহায়তা কেন্দ্রে যোগাযোগ করে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন, কাউনসেলিং এর ব্যবস্থা করতে পারেন। এতে মানসিক সমস্যা গুলোর সমাধান হবে।
কর্মক্ষেত্র এবং আমাদের মানসিক ক্ষেত্র একে অপরের সাথে জুড়ে আছে। তাই জীবনে পূর্ণতার অনুভূতি পেতে এবং লক্ষ্য পূরণে কর্মজীবনকে সঙ্গী করে সামনে এগিয়ে যান। এবং একই সাথে মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিন। জীবন সুন্দর হবে।
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন