করোনা প্রতিরোধ এর জন্য স্কুল কলেজসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানব ন্ধ।যেসব শিশুরা বইখাতা, ক্লাস- পরীক্ষা, টিউশন এর চাপে সময়ই পেত না, হঠাৎ করেই তাদের স্বাভাবিক রুটিনে একটা ছেদ পড়েছে।বাবা মা স হঅভিভাবকরাও সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে এত আতংকিত যে কিভাবে নতুন এই পরিবর্তন মানিয়ে নিবেন, বুঝতে পারছেন না হয়ত।
স্বাস্থ্য সুরক্ষায় যেসব নিয়ম প্রচার হচ্ছে তা মেনে চলার পাশাপাশি আমরা আমাদের সন্তানদের জন্য একটি দৈনন্দিন রুটিন তৈরি করে দিতে পারি যা তাদের এই হঠাৎ উদ্ভুত পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে সাহায্য করবে।
বয়স অনুযায়ী রুটিন: শিশুদের বয়স ভেদে রুটিনও ভিন্ন হবে।এক্ষেত্রে এই রুটিন তৈরি করাটাকেও আনন্দদায়ক করার লক্ষ্যে বাচ্চাকে সাথে নিয়েই রঙিন কাগজ ও নানা রকম আকর্ষণীয় রং পেন্সিল, কার্টুন, স্টিকার এর মাধ্যমে বানানো যায়।বাচ্চা এতে রুটিন মানতে উৎসাহিত হবে।
সময় এবং কাজ সুনির্দিষ্ট: রুটিনে স্পষ্ট করে সময় এবং কাজ ভাগ করা থাকবে। যেমন ঘুম থেকে ওঠার সময়, নাস্তা, পড়ার সময়, খেলাধূলা, গোসল, টিভি দেখা, ঘুমাতে যাওয়ার সময়।এবং প্রতিটি কাজ করার পর বাচ্চাকে দিয়েই সেই কাজের ঘরে একটি টিক মার্ক বা স্টার দেওয়া যে এই কাজটা সে সময় অনুযায়ী করেছে, যার ফলে বাচ্চা নিজের কাজ সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে শিখবে।
ঘুমের সঠিক অভ্যাস: এই সময়ে স্কুল না থাকায় হয়ত অনেকের ঘুমের সময় এলোমেলো হতে পারে যেমন অধিক রাতে ঘুমাতে যাওয়া আবার অনেক দেরিতে ওঠা, এতে অনেক অসুবিধা হয় যেমন দুর্বল লাগা ,মেজাজ খিটখিটে হওয়া ,কাজে মনোযোগ কমে যাওয়া। তাই সবার প্রথমে ঘুমাতে যাওয়া এবং ওঠার সময় নির্দিষ্ট করে নিতে হবে এবং বাচ্চাকে সেই অনুযায়ী সাহায্য করতে হবে।
পড়াশোনা: পড়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় এবং প্রয়োজনে নির্দিষ্ট বিষয় ঠিক করে দেয়া যেতে পারে।বর্তমানে সংসদ টেলিভিশনে যেসব ক্লাস হচ্ছে,সেখানে তারা অংশগ্রহণ করবে এবং সেই পাঠক্রম অনুযায়ী তাদেরকে পড়ার ব্যাপারে উৎসাহ দিতে হবে।বাবা মা এক্ষেত্রে শিক্ষক এবং ক্লাসরুম এর মত অনুকরণ করে খেলার ছলে উৎসাহিত করতে পারেন। ৭দিন পরপর তার কাছ থেকে ছোট পরীক্ষা নিতে পারেন অগ্রগতি যাচাইয়ের জন্য। ছোটদের জন্য বাবা মা’ই ঠিক করেন তাকে আপনি কি কি শেখাতে চান।সে অনুযায়ী অক্ষর শিক্ষা, গণনা করা, নানারকম ছড়াই ত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন পাঠ্যবই এর বাইরে অবশ্যই একটা সময় থাকা উচিত গল্পের বই পড়ার জন্য। নানা ধরনের বই পড়ার অভ্যাসের মাধ্যমে শিশুর মধ্যে কল্পনাশক্তির বিকাশ হয়, যা শিশুর বুদ্ধিভিত্তিক বিকাশে সহায়ক।
খেলাধূলা: নানা রকম শিক্ষামূলক খেলা আয়োজন রাখতে পারেন।ছোট শিশুদের জন্য বর্ণমালার খেলা,নানারকম রং এর বলের মাধ্যমে রং এর নাম শেখানো,গণনা শেখা যায় এমন কোন খেলাসহ আরো অনেক শিক্ষামূলক খেলা রয়েছে। যারা একটু বড়, তাদের নতুন খেলা শেখাতে পারেন যেমনঃ দাবা খেলা,সুডোকু মিলানো, শব্দজট ইত্যাদি। কিন্তু মোবাইল গেমস, ভিডিও গেমস না দেওয়াই ভাল কারণ এর প্রতি আসক্তি তৈরি হয়।
সুষম খাদ্যাভ্যাস: সুস্থ থাকতে হলে সুষম খাবারের প্রয়োজনীয়তা সন্তানকে বুঝিয়ে বলুন।বাইরের খাবার এখন অপ্রতুল তাই ঘরের স্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি শিশুকে নির্ভরশীল করে ফেলতে পারেন।সেই সাথে খাবার অপচয় করা যাবে না এই অভ্যাস গড়ে তোলারও এটাই উপর্যুক্ত সময়।
ঘরের কাজে সাহায্য করা: শিশুদের দায়িত্বশীল করে গড়ে তোলার জন্য অবশ্যই আগে তাদের দায়িত্ব নিতে শেখাতে হবে। যেমন, এখন অনেক বাসায়ই গৃহকর্মী নেই তাই দেখা যায় মাকে একাই সব সামলাতে হয়। পরিবারের অন্যান্য সদস্য যেমন বাবা, বড় ভাইবোন কাজ ভাগ করে নিলে এবং বয়স উপযোগী শিশুকেও কোন কাজ দিলে সে তার দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হওয়া শিখবে এবং পরিবারে সেও একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তা অনুধাবন করবে এমনকি অসহায় গরিবদের এসময় সাহায্য করতে চাইলে সেখানেও শিশুকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। চাল ডাল বা খাবার দিয়ে কাউকে সাহায্য করতে চাইলে সেগুলো প্যাক করার ক্ষেত্রে আপনার সন্তানের সাহায্য নিন। এতে করে মানবিকতা, পরোপকারীতা, সাহায্য করার মানসিক তা গড়ে উঠবে।
সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখা: যেহেতু এখন শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে তাই আত্নীয় স্বজন, বন্ধুদের সাথে মুঠোফোন, অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যমেও শিশু কিশোরদের যোগাযোগ রক্ষায় সাহায্য করতে হবে। সামাজিক ভাবে নিজেকে সে যেন বিচ্ছিন্ন মনে না করে।
প্রার্থনাকরা: যার যার ধর্ম অনুযায়ী ধর্মীয় আচার পালনে অভ্যস্ত করা, যেমন নামাজ পড়া, প্রার্থনা করা।
সৃষ্টিশীল কাজে আগ্রহ: যেকোন মানুষই নিজে কিছু তৈরি করতে পারলে আনন্দ পায়।এই আনন্দ পাওয়ার সুযোগ এখনই আমরা আমাদের সন্তানকে তৈরি করে দিতে পারি। যদি সে আঁকতে পছন্দ করে,তার হাতে রং তুলি ক্যানভাস তুলে দিন।হাতের কাজ শেখাতে পারেন ,কার্ড বানানো, শোপিস তৈরি করা ,সেলাই করা ইত্যাদি।গাছ ভালবাসলে তাকে নিয়ে ঘরের কোণে অথবা বারান্দায় বাগান করা শুরু করেন, লিখতে ভালবাসলে তাকে ডায়েরি উপহার দিন অথবা গল্প কবিতা লিখতে উৎসাহ দিন, রান্নায় আগ্রহ থাকলে তাকে নিয়ে নতুন কোন রেসিপি চেষ্টা করুন এতে সে নিজের আগ্রহের জায়গাটা খুজে পাবে এবং নিজের প্রতিভা বিকাশে সহায়ক হবে।
এইসব কাজ গুলোই একটা সময়ের ছকে ফেলে আনন্দ নিয়ে করলে বাচ্চার এবং আপনার দিনগুলো নীরস কর্মবিহীন লাগবে না বরং ভবিষ্যত প্রজন্ম গড়ায় আপনি একধাপ এগিয়ে যাবেন।খুব গুরুত্ব পূর্ণ যে অংশটা, শুধুমাত্র সন্তানই তার রুটিন পালন করবে এমন না হয়ে পরিবারের সবাই একটি নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে চললে সন্তানও খুব সহজেই রুটিন মাফিক কাজ করায় অভ্যস্ত হতে পারবে।
আপনার সন্তান যদি সময় অনুযায়ী কাজ গুলো করে, প্রতি ৩ অথবা ৫ দিন অন্তর অন্তর আপনি তার কাজের মূল্যায়ন করবেন, নিয়ম অনুযায়ী চললে অবশ্যই তার জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা রাখতে হবে যেমনঃ তার প্রশংসা করা, জড়িয়ে ধরে আদর করা, বাহবা দেওয়া, তার পছন্দের কোন খাবার রান্না করা ইত্যাদি। কেননা, এই প্রশংসাই তাকে পরবর্তীতে কাজগুলো ঠিকমত করায় প্রেরণা যোগাবে।অপরদিকে, সে যদি রুটিন না মেনে চলে তবে আগে খুঁজে বের করুন না মানার পেছনে কারণ।কারণ চিহ্নিত করে সমাধানের পরেও অনীহা প্রকাশ করলে তাকে তার প্রাপ্ত সুবিধা থেকে বঞ্ছিত করবেন যেমন: খেলার সময় কমিয়ে দিতে পারেন, কার্টুন দেখার সময় কমাতে পারেন ইত্যাদি। শারীরিক কোন শাস্তি বা মারধর করা যাবে না। এতে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
অনেক অনিশ্চয়তা আর আতংকের মাঝেও পরিবারের সবাইকে নিয়ে সুস্থ থাকাটাই এখন প্রধান লক্ষ্য।সেই লক্ষে পরিবারের ছোট বড় সবাইকে নিয়ে নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন করা একটি অন্যতম ধাপ। করোনা মুক্ত নতুন বিশ্বের অপেক্ষায় আমরা সবাই ……………।
হোম কোয়ারেন্টাইনে শিশুদের কিছু সৃজনশীল কাজে দেখতে ভিডিওটি দেখুন:
করোনা এর এই ভয়াল পরিস্থিতি তে সবাই কম বেশি মানসিক চাপের মাঝে আছি ।যারা ফ্রন্ট লাইনে কাজ করছে তাদের আতংক টা বেশি যতটা না নিজেকে নিয়ে তার চেয়ে বেশি পরিবারের সদস্য দের নিয়ে । মানসিক চাপ কে যথাসম্ভব দূরে রেখে সাহস ও মনোবল নিয়ে সবাই মিলেই এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে,এজন্য একে অন্যকে মানসিক ভাবে সাহায্য করাও আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।শিশুরা নিজেরাই একেক জন আনন্দের আধার,যাদের কাছে কিছু সময় থাকলেই মন ভাল হয়ে যায়।আমাদের এখানে অনেকেই তাদের সন্তানের চমৎকার সব ছবি ও কাজ শেয়ার করেছেন যা দেখে অন্যরাও নিশ্চয়ই নতুন কোন আইডিয়া পেয়েছেন।আমি যেটা পেলাম ,ওদের মাধ্যমেই ফ্রন্ট লাইন সেবাদানকারী দের বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবায় যারা নিয়োজিত তাদের কে একটা ছোট্ট ধন্যবাদ দিতে ,THANK YOU ALL.
Gepostet von Sadia Afrin am Samstag, 18. April 2020