বিষণ্ণতার ঋতু শীত। মূলত, সূর্যের আলোয় কম যাওয়া হয় জন্যে শীতকালে অনেকেই বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হন। এমনকি অনেকে সিজনাল এফেক্টিভ ডিজওর্ডারেও ভোগেন। এরকম হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি।
শীতে বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হবার ব্যাপারটি Winter Blues নামে পরিচিত। শীতকালে উইন্টার ব্লুজে আক্রান্ত হলে অকারণেই মন খারাপ, উদ্বিগ্ন ও ক্লান্ত লাগতে পারে। এতে করে ঘুমসহ যেকোন কাজকর্ম সামলাতে বেশ সমস্যায় পড়তে হয়। রুটিন মেনে চলতে না পারলে এমনকি মেজাজ খিটখিটে হয়ে যেতে পারে।
শীতকালীন বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হতে না চাইলে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। যেমন দুপুরের খাবারের সময় একটু হাঁটাহাঁটি করা। পরীক্ষা করে দেখা গেছে সপ্তাহে অন্তত তিনদিন লাঞ্চ ব্রেকে হাঁটতে বের হলে টেনশন ও স্ট্রেস কমে কাজ করার উৎসাহ বাড়ে। তাছাড়া শীতকালে যারা নয়টা থেকে পাঁচটা অব্দি অফিস করেন, লাঞ্চ ব্রেক ছাড়া অন্য সময়ে তাদের সূর্যের আলোর দেখা পাওয়ার সুযোগও নেই। লাঞ্চ ব্রেকে অল্প সময়ের জন্যে হলেও শীতের মিষ্টি রোদ গায়ে মেখে আসতে পারলে শীতকালীন বিষণ্ণতা থেকে দূরে থাকা সম্ভব।
প্রতিদিন অল্প সময়ের জন্যে হলেও উজ্জ্বল আলোতে থাকা সবার জন্যে জরুরি। সূর্যের আলোর দেখা পাওয়া সম্ভব না হলে উজ্জ্বল বর্ণালী বিচ্ছুরিত হয় এমন ল্যাম্প অথবা লাইটের আলোতেও অনেকের আলোর চাহিদা পূরণ হতে পারে। তবে অনেকের ক্ষেত্রেই এই পদ্ধতি খুব একটা কাজে দেয় না।
শীতকালীন ছুটি পান যারা, ছুটি উপভোগ করার জন্যে প্রকৃতির কাছাকাছি ট্রিপে যাওয়ার আয়োজন করতে পারেন। দীর্ঘ সময় ধরে কাজের স্ট্রেস নেয়ার পর প্রকৃতির সান্নিধ্যে কিছুদিন থেকে এলে কর্মময় জীবনে আবার ফিরে যাওয়ার উৎসাহ পাওয়া যায়।
শীতকালীন দিনগুলো দীর্ঘ এবং ধীর। চব্বিশ ঘণ্টা যেন কাটতেই চায় না। দিনের এই ধীরতার সাথে তাল রাখতে অনেকেই হিমশিম খেয়ে থাকেন। শীতের দুপুরে অল্প সময়ের একটু ঘুম ব্যাপারটা কাটিয়ে উঠতে বেশ সাহায্যকারী। তাছাড়া বিষণ্ণতাকে দূরে রাখতে নিজেকে ট্রিট দিতে পারেন। যেমন—পছন্দের গান শোনা, মুভি দেখা অথবা পছন্দের খাবার খাওয়া।
শহুরে ব্যস্ত জীবনে অনেক সময়ই পরিবার ও বন্ধুদের জন্যে আলাদা সময় বের করা যায় না। শীতকালে তা আরো কঠিন হয়ে ওঠে। কিন্তু জেনে রাখুন, কাছের মানুষের সঙ্গ—শীতকালীন বিষণ্ণতা দূর করতে, হতে পারে সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
ঘরবন্দি মানুষেরা—কাজের জন্যে যাদের বাইরে যেতে হয় না কিংবা যারা শীতকালীন দীর্ঘ ছুটিতে ঘরে আছেন, প্রতিদিন মাত্র ১০ মিনিটের জন্যে হলেও হাঁটতে বেরনো তাদের জন্যে বেশ উপকারী। হাঁটতে বের হতে ইচ্ছে না করলে করতে পারেন যোগ ব্যায়াম। আসলে শীতকাল নিজের প্রতি একটু আলাদা মনোযোগ দাবি করেই।
আর যদি শীতকালীন বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হয়েই যান, একজন কাউন্সেলরের পরামর্শ নেয়া হতে পারে সবচেয়ে ভালো উদ্যোগ। মনে রাখবেন শীতের পরেই আসে বসন্ত। শীতকালকে উপভোগ করার চেষ্টা করুন তার মতো করেই, তাহলে শীতের ধীরতা আর শীত-নিদ্রাও ভালো লেগে যেতে পারে।