বাবা-মায়ের ডির্ভোস হলে স্থূলতা বাড়ে শিশুদের: গবেষণা

0
56
বাবা-মায়ের ডির্ভোস
গবেষণায় বলা হয়, ছয় বছর বয়সের আগে যেসব শিশুর বাবা-মায়ের ডির্ভোস হয়েছে, তাদের মধ্যে ওজন বাড়ার প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা গেছে।

যাদের বাবা-মা একসঙ্গে থাকে তাদের তুলনায় যেসব শিশুর বাবা-মায়ের ডির্ভোস হয়েছে তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, নতুন একটি গবেষণায় উঠে এসেছে এমন তথ্য। এতে বলা হয়, ছয় বছর বয়সের আগে যেসব শিশুর বাবা-মায়ের ডির্ভোস হয়েছে, তাদের মধ্যে ওজন বাড়ার প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা গেছে।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০০ এবং ২০০২ সালে জন্ম নেওয়া ৭,৫৭৪ জন শিশুর তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স এন্ড পলিটিকাল সায়েন্সের গবেষকরা।
তারা বলছেন, ভাঙনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এমন পরিবারের সদস্যদের জন্য উন্নত স্বাস্থ্যসেবার দাবিকে সমর্থন করেছে তাদের গবেষণা।
গবেষণা প্রতিবেদনে, বাবা-মায়ের ডির্ভোস এর পর শিশুদের কেন ওজন বাড়ে তার অর্থনৈতিক ও অন্যান্য কিছু কারণ ও পরামর্শ উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়-
– আলাদা হওয়ার পরিবারে ফলমূল এবং শাক-সবজির জন্য বরাদ্দ কম থাকে।
– বাবা-মায়েরা পুষ্টিকর খাবার রান্নার চেয়ে অর্থ উপার্জনে বেশি সময় ব্যয় করেন।
– খেলাধুলাসহ পাঠ্যক্রম বহির্ভূত কর্মকাণ্ডে খরচ কমানো।
– শিশুদের মধ্যে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলায় বাবা-মা উদাসীন থাকেন।
– আবেগ-প্রবণতার কারণে বাবা-মায়েরা শিশুদের বেশি পরিমাণে খাবার খাওয়ান এবং
– একই কারণে এসব পরিবারের শিশুরা চিনি ও চর্বিযুক্ত খাবার বেশি খায়।
গবেষণায় ব্যবহৃত তথ্য সংগ্রহ করে ইউকে মিলেনিয়াম কোহর্ট স্টাডি। এরা যুক্তরাজ্যে চলতি শতাব্দীর শুরুর দিকে জন্ম নেওয়া শিশুদের জীবনযাত্রা পর্যবেক্ষণ করে থাকে।
নয় মাস থেকে শুরু করে তিন, পাঁচ, সাত, এগারো ও চৌদ্দ বছর বয়সী শিশুদের উপর এই গবেষণা পরিচালিত হয়।
তবে গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ঠিক রাখতে পরে বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছানোর কারণে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের তথ্য বাদ দেওয়া হয়।
‘দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব’
গবেষণায় অংশ নেওয়া শিশুদের মধ্যে ১,৫৭৩ জন বা মোট শিশুর মধ্যে প্রতি পাঁচ জনে একজন এগারো বছর বয়সের মধ্যে তার বাবা-মায়ের তালাক হতে দেখেছে।
গবেষণায় শিশুদের শারীরিক ভর সূচক বা বডি ম্যাস ইনডেক্স পরিমাপের জন্য তাদের উচ্চতা, ওজন, বয়স এবং লিঙ্গ বিবেচনায় নেয়া হয়। বডি ম্যাস ইনডেক্স হচ্ছে, শিশুরা সু-স্বাস্থ্যবান, অতিরিক্ত ওজন নাকি স্থূলকায় তা নির্ধারণের বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি।

গবেষণায় আরও বলা হয়, বিচ্ছিন্ন পরিবারে বাবা-মায়ের ডির্ভোস এর ২৪ মাসের মধ্যে শিশুদের সবচেয়ে বেশি ওজন বাড়ে, যা একই সময়ে একসঙ্গে থাকা বাবা-মায়ের শিশুদের তুলনায় অনেক বেশি।

আর তালাকের ৩৬ মাসের মধ্যে এসব শিশু স্থূলকায় হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
গবেষণার এই ফল তালাকের ‘দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব’ থাকার ধারণাকে জোরালো করে।
গবেষকরা বলেন, যেহেতু শিশুরা ১১ বছর বয়সে পৌঁছানোর পর এই গবেষণা বন্ধ করে দেয়া হয়, তাই সময়ের সাথে শিশুদের ওজন বাড়ার ঝুঁকির পূর্ণ চিত্রটি এই তথ্য অনেক সময় প্রতিফলিত করতে নাও পারে।
কারণ ডির্ভোসের পর সময় বাড়ার সাথে সাথে এর ঝুঁকি অনেক বেশি বেড়ে যায়, গবেষকরা বলেন।
তাই তালাকের পর পরই শিশুদের যাতে ওজন বেড়ে না যায় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে।
প্রতিবেদনে তারা লিখেছেন, “শুরুতেই পদক্ষেপ নিলে ওজন বৃদ্ধি প্রতিরোধ সম্ভব। তা না হলেও অন্তত ঝুঁকি কমিয়ে আনা যায়। কারণ এই প্রক্রিয়া শিশুদের অস্বাস্থ্যকর স্থূলকায় হওয়ার দিকে ঠেলে দেয়।”
গবেষণায় শিশুদের জন্মদাতা বাবা-মায়ের প্রথম ডির্ভোসের পর সৃষ্ট প্রভাবের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তাই যেসব শিশুর বাবা-মায়েরা পরবর্তীতে আবার মিলে গেছেন তাদের এই গবেষণা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটের সমস্যাগুলোকেও নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।
ডেমোগ্রাফি নামে জার্নালে এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

Previous articleমানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য জানাতে কলসেন্টার সেবা চালু করেছে মনের খবর
Next articleমাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রে যুবককে পিটিয়ে হত্যা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here