আপনি একটি চাকরি করছেন। নিঃসন্দেহে আপনি ভাগ্যবান। বেকারত্বের অভিশাপে ভুগতে হচ্ছে না আপনাকে। কিন্তু আপনি কি আপনার চাকরিতে সন্তুষ্ট? মাস শেষে একাউন্টে বেতন ঢুকলেও কি দিন শেষে মনের শান্তি নিয়ে ঘুমাতে পারছেন আপনি?
যে চাকরি মনের বিরুদ্ধে করা হয়, সেই চাকরি শারীরিক এবং মানসিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। কাজের মানসম্মত পরিবেশ না থাকার মূল্য অনেক সময় বেতনের চাইতেও বেশী পড়ে যায়। তাই চাকরির পরিবেশ অসহনীয় মনে হলে দ্রুত নতুন কর্মস্থল খোঁজা শুরু করা উচিত। জেনে নিন খারাপ চাকরির খারাপ প্রভাবগুলো সম্পর্কে:
ঘুমের সমস্যা: চাকরিতে খুব বেশী চাপ থাকলে এবং আপনার অসন্তুষ্টি থাকলে ঘুমের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা থাকে। অতিরিক্ত মানসিক চাপ নেয়ার কারণে অনিদ্রা দেখা দেয়। অনিদ্রার কারণে পরের দিন অফিস করতে বিরক্ত লাগে এবং কাজের মান খারাপ হয়ে যায়। ফলে বসের কটু কথা শোনার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। সব মিলিয়ে আপনার চাপ আরও বেড়ে যায়।
মানসিক স্বাস্থ্য: ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে ‘খারাপ’ চাকরিতে বেকারদের তুলনায় বেশী মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা হয়। অর্থাৎ ‘দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো।’ আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখা দেয়, কাজের মনোযোগ কমে যায়, বিষণ্ণতায় ভুগতে হয় কর্মক্ষেত্রে শান্তি না থাকলে। জাপানে অনেকে অফিসের প্রতি অসন্তুষ্টি থেকে আত্মহত্যাও করেন। তাই যে চাকরিতে মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে, সেই চাকরি থেকে অতি দ্রুত সরে যাওয়াই ভালো।
ওজন বৃদ্ধি: চাকরিতে অতিরিক্ত চাপ এবং অসন্তুষ্টির কারণে ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। মানসিক চাপ এবং বিষণ্ণতা ভুলতে অনেকেই মিষ্টি খাবার কিংবা ফাস্ট ফুড বেশী খেয়ে ফেলেন। আবার কাজের চাপে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চেয়ার থেকেই উঠার সুযোগ হয় না। ফলে অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার প্রভাব পরে স্বাস্থ্যে।
ব্রেইন ফগ: ‘খারাপ’ চাকরিতে ‘ব্রেইন ফগ’ সমস্যায় ভোগার ঝুঁকি থাকে। ফলে দ্বিধা বেড়ে যায়, স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায়, লক্ষ্যে অটল থাকার প্রবণতা কমে এবং খুব ক্লান্ত লাগে। সব সময়েই মনে হয় একটু ঘুমিয়ে নিতে পারলে ভালো হতো। অতিরিক্ত চাপের ফলে হরমোনাল ডিজঅর্ডারও হতে পারে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে: অতিরিক্ত চাপে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করা এবং প্রশংসা না পাওয়ার কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়। সাধারণ হাঁচি-কাশি এবং ক্লান্তি লেগেই থাকে। এক জায়গায় দীর্ঘ সময় বসে থাকায় রক্তচলাচলেও ব্যাঘাত ঘটে। আবার ব্যস্ততায় সুষম খাবার খাওয়ার সময়ও পাওয়া যায় না অনেক সময়ে। তাই ঘনঘন অসুখে ভোগার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
সুস্থতার থেকে চাকরি বেশী গুরুত্বপূর্ণ নয়। যদি চাকরি আপনার বিষণ্ণতার এবং অসুস্থতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, তাহলে সেখান থেকে সরে যাওয়াই ভালো। যদি এই মুহূর্তেই ছেড়ে দেয়ার উপায় না থাকে তাহলে ভালো সুযোগের জন্য অপেক্ষা করুন। তবে অবশ্যই সেজন্য চেষ্টা শুরু করতে হবে এখন থেকেই।