ডায়াবেটিস রোগীদের অ্যাংজাইটিতে ভোগার ঝুঁকি তিনগুণ বেশি

0
36

অধ্যাপক ডা. মোহিত কামাল
কথা সাহিত্যিক ও প্রাক্তন পরিচালক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট।

বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিস নিয়ে সচেতনতা বাড়ছে। দীর্ঘমেয়াদি এ রোগটি ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক আবহ এবং সামাজিক জীবনকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগটির কারণে ব্যক্তির আবেগের চাপ এবং সামাজিক সমস্যার বিষয়টা অগোচরে থেকে যায়। প্রায় একযুগ ধরে ডায়াবেটিসের সঙ্গে মানসিক সমস্যার সম্পর্কটি এ কারণে গবেষকদের বিবেচনায় শীর্ষ অবস্থানে উঠে এসেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, বর্তমান বিশ্বে বিশাল এক জনগোষ্ঠী ডায়াবেটিসে ভুগছে। এ রোগের কারণে রোগীর জীবনযাত্রায় কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপিত হয়। ফলে রোগীর মনে যাতনা তৈরি হয়। দেখা গেছে সাধারণ জনগোষ্ঠী অপেক্ষা ডায়াবেটিস রোগীদের অ্যাংজাইটিতে ভোগার ঝুঁকি তিনগুণ বেশি। আর বিষণ্ণ রোগীদের ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা সাধারণ জনগোষ্ঠী অপেক্ষা চারগুণ বেশি, প্রায় ২৭.২ শতাংশ (Bangladesh Medical Journal 2011 vol. 40 No. 1)।
কঠিন সত্য হলো বিশ্বব্যাপী গবেষণায় প্রমাণিত হচ্ছে, মানসিক রোগ হলে রোগীদের দৈহিক সমস্যা প্রায় উপেক্ষিত হয়। বছরের পর বছর এ ধরনের রোগীদের ডায়াবেটিস শনাক্ত করা হয় না। এখানে উল্লেখ্য যে, প্রাথমিক অবস্থায় টাইপ ২ ডায়াবেটিস প্রায় উপসর্গবিহীন অবস্থায় গোপনে দেহের মাঝে ধ্বংস চালিয়ে যেতে থাকে। এ ধরনের ডায়াবেটিস শনাক্ত করতে ক্ষেত্রবিশেষে ৪-২২ বছর লেগে যায়। যখন রোগ ধরা পড়ে, দেখা গেছে ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে ডায়াবেটিসের জটিলতা অনেক দূর গড়িয়েছে।

ডায়াবেটিস রোগীদের বিষণ্ণতা রোগ বর্তমান বিশ্বে চ্যালেঞ্জিং চিকিৎসার কথা তুলে ধরছে। দুই রোগে প্রায় একই উপসর্গ দেখা যায়, যেমন হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া, ঘুমের সমস্যা এবং নিজেকে শক্তিহীন দুর্বল মনে হওয়া।

এ প্রসঙ্গে জেনে রাখা দরকার, ব্রেইনের রাসায়নিক পদার্থ এবং দেহের স্বাভাবিক হরমোনের ভারসাম্য ডায়াবেটিকসের কারণে এলোমেলো হয়। এ ছাড়া ডিপ্রেশনও হরমোনের নিঃসরণে পরিবর্তন ঘটায়। এসব কিছুই ইনসুলিনের প্রতি দেহের প্রতিরোধ প্রভাবিত করে। ফলে ভেতরে ভেতরে ডায়াবেটিসের অবস্থা খারাপ হতে থাকে। ডায়াবেটিস রোগীদের বিষন্নতা রোগ হলে দেহের মেটাবোলিক কন্ট্রোল বিঘ্নিত হতে। থাকে। খাবার দাবারের বিষয়ে যত্ন হারিয়ে যায়, চিকিৎসা গ্রহণের তাগিদও দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে রোগীর জীবনযাত্রায় ধস নামে। রোগী ডায়াবেটিসের নির্ধারিত নিয়ম-শৃঙ্খলা পালন করতে ব্যর্থ হয়। জটিলতা তখন বেড়ে যেতে থাকে বিশেষ করে হৃদরোগ, স্ট্রোক, অন্ধত্ব, কিডনি ডিজিজ, লিভার। ডিজিজ জন্মগত সমস্যা, স্নায়ুর ক্ষতি বেড়ে যায়। এ কারণে বিশ্বব্যাপী জোর প্রচারণা চলানো হচ্ছে ডায়াবেটিস রোগীর বিষন্নতা চিকিৎসায় যেকোনো ধরনের অবহেলা, অজ্ঞতা কাটিয়ে ওঠার আহহ্বান জানানো হচ্ছে। এন্ড্রোক্রাইনোলজিস্ট, মনোচিকিৎসক, ডায়েটিসিয়ান ও রোগীদের প্রতি আহবান জানিয়ে বলা। হচ্ছে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি রোগীর আবেগের সমস্যা মোকাবিলার টার্গেট নির্ধারণ করাও এ ধরনের রোগীদের চিকিৎসার প্রধান একটি শর্ত হওয়া উচিত। রোগীর আবেগের সমস্যা মোকাবিলা করা সম্ভব হলে ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণের নিয়ম-নীতি পালন করা সহজ হয়। আবেগের চাপ সরাসরি রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিকে প্রভাবিত করে। তাই চাপ মোকাবিলা ডায়াবেটিস চিকিৎসার গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। এ কারণেই স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টে এবং ইমোশনাল স্ট্রেস মোকাবিলার জন্য মনোচিকিৎসা সাইকোথেরাপি গ্রহণের জন্য রোগীদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। বিষণ্ণতা মোকাবিলায় বিষন্নতাবিরোধী ওষুধের প্রয়োজন হলে সাইকিয়াট্রিস্টের সহায়তা নিতে হবে। মনে রাখা দরকার:

উচ্চ রক্তচাপ এবং উচ্চ কোলেস্টেরলের মতো ডিগ্রেশনও হৃদরোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ, ঝুঁকিপূর্ণ কারণ। প্রতি ৬ জনের ১ জন জীবনের কোনো না কোনো সময় বিষন্নতায় ভোগে। হৃদরোগীদের ক্ষেত্রে সংখ্যাটি ২ জনে ১ জন । স্ট্রোকের পর মানসিক স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের দুটি প্রধান কারণ:

স্ট্রোকের ফলে দৈহিক ক্ষতি, স্ট্রোকের পর ডিপ্রেশন। অ্যাংজাইটি এবং ডিপ্রেশনের কারণে উচ্চ রক্তচাপ হবার ঝুঁকি ২-৩ গুণ বেশি। আর হৃদরোগের একটি প্রাথমিক কারণ উচ্চ রক্তচাপ। হৃদরোগীদের প্রায় ৫০ শতাংশ গুরুতর বিষণ্ণতা রোগে ভোগে। আর বিষণ্ণতায় আক্রান্ত রোগীদের হৃদরোগে ভোগার ঝুঁকি ২ গুণ বেশি। লাগাতার ৬৫ বছর দীর্ঘমেয়াদি বিষণ্ণতা রোগ বয়ে প্র বেড়ালে পরবর্তী ৪ বছরে ক্যান্সার হবার আশঙ্কা ৮৮ শতাংশ। স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং রোগ প্রতিরোধে মানুষের দৈনন্দিন আচরণ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘমেয়াদি ব্যাধি যেমন ডায়াবেটিস এবং ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীরা আবেগ এবং মনস্তাত্ত্বিক সমস্যায় ভোগে। এ ধরনের সমস্যাগুলো প্রায় অগোচরে থেকে যায় অথবা এ ধরনের বিপর্যয়ের যথাযথ চিকিৎসা হয় না। গণসচেতনা বাড়াতে হবে ডায়াবেটিস রোগীদের বিষণ্ণতা মোকাবিলার দিকেও।

Previous articleএনডিডি আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের দায়িত্ব কার?
Next articleডিমেনশিয়া রোগীদের প্রতিদিনের পরিচর্যায় যেসব বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here