করপোরেট সাইকোলজি’র ১৪তম পর্বটি হয়েছে ‘কর্মক্ষেত্রে মন : যা আছে, যা প্রয়োজন’। আলোচক ছিলেন আরবাব গ্রুপের পরিচালক এম এম আজমাত হোসেন। পরিচালনা করেছেন ফিরোজ শরীফ। প্রচারিত হয়েছে ১৮ নভেম্বর বৃহস্পতিবার রাত ১০টায়।
শুরুতেই নিজের সম্পর্কে আজমাত হোসেন বলেন, ‘আমি আরবাব গ্রুপের পরিচালকদের একজন। এটি আমাদের পারিবারিক ব্যবসা। ছয়টি কম্পানি আছে। মূল ব্যবসা হলো প্যাকেজিং। আমরা পেপার অ্যান্ড পেপার কনভাটিং করি এবং ফ্লেক্সিবল প্যাকেজিং করি মূলত। আমাদের সঙ্গে ২ হাজারের বেশি লোক কাজ করছেন। আমাদের ফ্যামিলি বিজনেস প্যাকেজিং থেকে আমার হাত ধরে অগ্রগতি লাভ করেছে।’
উপস্থাপকের ম্যানেজমেন্ট স্টাইল ও ম্যানেজমেন্ট ফিলসফি সম্পর্কে প্রশ্নের জবাবে আরবাব গ্রুপের অন্যতম ডিরেক্টর তার ব্যক্তিগত দর্শন জানান, ‘আমার দশর্নটি হলো খুব সোজাসাপ্টা থাকা। কর্মক্ষেত্র তৈরি, তাদের উদ্দীপ্ত করা, প্রতিজনকে তাদের দায়িত্ব সম্পকেও সচেতন করা। যার যেটি দায়িত্ব তাকে সেই কাজটি করে ফেলতে হবে। তাকেই সেটি ভালো হোক, মন্দ হোক জবাব দিতে হবে। তাহলেই কর্মীরা প্রতিষ্ঠানটি অনুভব করতে পারেন। আমার মতে, তখনই রেসপনসিবিলিটি আসে। তবে মালিক হিসেবে আমাদেরও প্রচুর ফলোআপ রাখতে হয়। এছাড়া কোনোকিছুই আগায় না। এটি আমাদের দেশের একটি সাংস্কৃতিক সমস্যা।
একটি কম্পানি মালিকের একার কোনো প্রতিষ্ঠান নয়। একটি কম্পানি হলো কর্মীদের একটি দল। যদি আপনার টিম ভালো হয়, তাহলে আপনার কম্পানি বড় হবে। যদি আপনার টিম খারাপ হয়, আপনিও থাকবেন না।’
নিজের কর্মজীবনের শুরুর দিকের সংগ্রামের কথা জানাতে গিয়ে এম এম আজমাত হোসেন বলেছেন, ‘এই গ্রুপ অব কম্পানিটি আমার আব্বাই চালাতেন। তারই গড়া। প্রথম দিকে আমরা যখন যোগ দিলাম, আমার কথাই বলি, আমার স্কুল গ্রিন হেরাল্ড, এ লেভেল করেছি মাস্টার মাইন্ড থেকে, মাস্টার্স, এমবিএ করেছি আইইউবি থেকে। এই পরিবেশ থেকে যখন কারখানায় কাজ শুরু করলাম, আমাদেরগুলো আছে ডেমরাতে, প্রথমেই সাংস্কৃতিক সংগ্রাম শুরু হলো। কেননা, আমি একভাবে এসেছি। তবে আসলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমার অভিযোজনের চর্চা শুরু হয়েছে। সেখানে নানা ধরণের মানুষের সঙ্গে অভিযোজন হয়েছে। তবে আমার কর্মভুবনের পরিবেশ আমার জগতের চেয়ে পুরোপুরি আলাদা হলো। সেখানে অভিযোজন করতে সময় লেগে গেল। তখন আমার বয়সও কম ছিল, যেখানে যা বলছি বা অন্যরা যা বলছেন, তাতে আমাদের সংঘাত হচ্ছে। এই গ্যাপ থেকে বের হয়ে আসাটি আমার জন্য একটি চ্যালেঞ্জ ছিল।
আমি নিজে যখন শুরু করলাম আলাদাভাবে, তখন আরো একটু গুছিয়ে আনলাম। আমরা একই ধরণের মানুষ হলেও আরো একটু পেশাদার লোকেরা আমার সঙ্গে শুরু করলেন। আমি আরো পেশাদার হলাম। তারা জানতেন, কীভাবে কাজ সম্পাদন করতে হবে ও সেটি দিতে হবে। এটি সবদিক থেকেই সহজ হলো। শুরুর সংকট এগুলোই ছিল। টাকার বা আর্থিক সমস্যা অনেক ছিল। আশানুরুপ বিক্রি হচ্ছিল না। তবে এখন আমাদের পরিস্থিতি অনেকখানি ভালো এবং দিনে, দিনে আমাদের কাজের অগ্রগতি হচ্ছে। এর কারণ হলো আমাদের দল। দলের সিনিয়রিটি ঠিক মতো থাকলে যেকোনো উন্নতি ও উন্নয়ন এবং ভালো কাজ সম্ভব।’
বইয়ে ও সত্যিকারের কাজের ভুবনে তার দেখা পার্থক্য সম্পকে বললেন, ‘বেসিক বিষয়গুলো খুবই এক, তেমন কোনো পার্থক্য থাকে না। তবে অ্যাকাউন্টসের বিষয়গুলোর জন্য আলাদা সিএফএ, সিএ থাকেন। এগুলো বিশেষায়িত থাকে। মূল বিষয়টি কম্পানি চালানোর জন্য সাবার আগে লাগে, আমার মতে নিজেকে উপস্থাপন, কম্পানিকে উপস্থাপন। ইনিশিয়াল ক্যাপচারটি যদি আপনি করতে পারেন, তাহলে পুরো কাজটি খুব সহজ হয়ে আসে। এটি কোনো কঠিন কাজ নয়।’
মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দেওয়া হয় এই অনুষ্ঠানে বলে জানিয়ে উপস্থাপক জিজ্ঞেস করলেন, আমাদের বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের জগতে মানসিক স্বাস্থ্যকে বা কর্মীদের মন ভালো রাখাকে কতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়। তিনি বললেন, ‘এটি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিষ্ঠানে আলাদা হয় নানা কারণে। স্থানীয় প্রতিষ্ঠান ও বড় বিদেশী প্রতিষ্ঠানে আলাদা হয়। সেগুলোতে নানা ধরণের সুবিধা ও কাজ করা হয় এজন্য। স্থানীয়তে তা পারা যায় না। আমরা তাদের সঙ্গে কাজ করে অভ্যস্ত বলে কিছুটা অভিযোজন করেছি। কেননা, তাদের সংস্কৃতিগুলো দিন শেষে বা চূড়ান্তভাবে আমাদের কম্পানিগুলোতে নিয়ে আসতেই হয়।
আমার প্রতিষ্ঠানে আমরা কর্মীদের সবসময় উৎসাহ দেই। তাদের কোথায় সমস্যা হচ্ছে জানতে চাই। কেন সেটি হচ্ছে জেনে তার সমাধান করি আমি। সবাই মিলে সেটির সমাধানের পর একবার দুইবার তিনবার দেখানোর পর তাকে নিজেরটি নিজের করে নিতে হয়। এখন আমাদের দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো খুবই পেশাদার রূপ লাভ করছে।’
কাউন্সিলিংয়ের একটি অংশ আছে আমাদের প্রশাসনে। কোনো কারণে কাজের বিমুখ বা কমহীনতার বোধ কারো হলে বিভাগীয় প্রধানকে প্রশাসন থেকে সেটি সমাধান করতে বলা হয়। কোনো বস সাহায্য করতে না চাইলে আমরা প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে যুক্ত হই। নিজে এগিয়ে যাওয়া বা পেছনে থেকে প্রতিষ্ঠান চালানো রীতি আছে মালিকদের। আমরা সবার সামনে থাকি। একসাথে সবাই চলতে পারি সেভাবে এগিয়ে যাই। প্রয়োজনে তাদের সবাইকে অনুপ্রাণিত করি। আমাদের বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠানের চেইন অব কমান্ড ব্রেক করার একটি রীতি খুব বেশি আছে। আমরা চেইন অব কমান্ড রাখতে খুব চেষ্টা করি। যারা নন পারফরমার তাদের অজুহাতের কোনো শেষ থাকে না। মেধা বেশি থাকলেও কাজ করতে অনীহা থাকে অনেকের। যারা ভালো কাজ করেন তারা একেবারে নি:শব্দে কাজ করেন। অনেকে সাহায্য, সহযোগিতা, যোগান না থাকলেও খুব ভালোভাবে কাজ করেন। তবে দিন শেষে তারাও ধন্যবাদ প্রত্যাশা করেন। না হলে তারা খারাপ বোধ করেন।’