করোনা মহামারী মোকাবেলায় লকডাউনে পড়তে হয়েছে সমগ্র বিশ্বের অগণিত মানুষকে। আর দীর্ঘস্থায়ী লকডাউনে মানুষ হয়েছে মানসিক অবসাদের শিকার। কিভাবে মহামারীকালীন এই অবসাদকে দূরে ঠেলে মানসিকভাবে সুস্থ থাকা যায় সেটি আমাদের প্রত্যেকের জানা প্রয়োজন।
মহামারীকালীন অবসাদের সাথে এখন আমরা সবাইই কম বেশী পরিচিত। গত প্রায় একটা বছর জুড়েই আমাদের বারে বারে লকডাউন, আইসলেশন, সামাজিক দূরত্ব ইত্যাদি বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এক দিকে করোনা সংক্রমণের ভয় এবং অপর দিকে এসব প্রতিবন্ধকতা সব দিক থেকে সাধারণ মানুষকে চরম দিশেহারা অবস্থায় পর্যবসিত করেছে। এভাবেই করোনার বেশ কয়েকটি ঢেউ আমরা পার করেছি এবং অনেকেই এই পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেওয়ার জন্য নিজেদের মানসিকভাবে প্রস্তুত করার প্রচেষ্টা করলেও এখনো অধিকাংশ মানুষের মাঝেই অবসাদ সহ অন্যান্য মানসিক সমস্যা ব্যাপক মাত্রায় লক্ষণীয়। আর সুস্থ থাকতে এই মানসিক সমস্যা গুলোর নিবারণ করা করোনা মোকাবেলার মতোই সমান গুরুত্বপূর্ণ।
করোনায় আমাদের স্বাভাবিক জীবন ব্যাপকভাবে বাঁধাগ্রস্ত হওয়ায় অধিকাংশ মানুষই বাইরে যেতে না পেরে এবং স্বাভাবিক জীবনে যা যা করতেন সেগুলো করতে না পেরে চরম মানসিক চাপের মাঝে রয়েছে। সারাক্ষণ ঘরে থেকে জীবন যেন থমকে গেছে এবং সবাই যেন এই স্থবির জীবনে দীর্ঘ সময় কিছু না করতে পেরে হাঁপিয়ে উঠেছে। মস্তিষ্ক আমাদের করোনা থেকে সুরক্ষিত থাকতে ঘরে থাকতে বললেও মন হয়তো মানতে চাইছেনা। মনের উপর এক প্রকার জোর জবরদস্তি করেই যেন নিজেদের ঘরে আটকে রেখেছি আমরা। অবসাদে শৃঙ্খলিত মনে ধীরে ধীরে বাসা বাধছে নানা রোগ যা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে ঝুঁকির মাঝে ফেলছে। তাহলে কিভাবে আমরা ঘরে থেকেও নিজেদের মনের উপরে সৃষ্টি হওয়া এই অতিরিক্ত চাপ এবং অবসাদ থেকে মুক্তি পেতে পারি? আসুন জানা যাক।
মানসিক অবসাদ দূর করতে হলে প্রথমে আমাদের অবসাদের মূল কারণগুলো চিহ্নিত করতে হবে এবং সেই কারণ গুলো দূর করার প্রচেষ্টা চালাতে হবে। করোনা মহামারীর এই দুঃসময়ে মানসিক অবসাদের একটি অন্যতম কারণ হল এই অস্বাভাবিক অবস্থার প্রতি আমাদের অস্বস্তি। এই অস্বস্তির সাথে যে দুটি অনুভব সব থেকে বেশী জড়িত সেটি হল মানসিক অস্থিরতা এবং আশঙ্কা। একজন ব্যক্তির মানসিক অবসাদ সত্যিকার অর্থে দূর করা কঠিন যখন আপনার মন যেটি চাইছে সেটি করতে আপনি অসমর্থ এবং একইসাথে উদ্বিগ্ন। তাই সব থেকে বেশী জরুরী নিজের মনের প্রশান্তি এবং স্বস্তি। আর এই প্রশান্তি আমরা তখনই পাবো যখন ঘরে থাকার এই সময়টা হবে উপভোগ্য। যখন আমাদের মনে হবেনা যে আমরা প্রতিবন্ধকতায় জর্জরিত এবং স্বাভাবিক কাজে অপারগ তখনই আমাদের মানসিক চাঞ্চল্য এবং অস্থিরতা কমতে পারে। তাছাড়া পরিবর্তিত এই পরিবেশে আমাদের অস্বস্তিও আমাদের মানসিক চাঞ্চল্য এবং অবসাদকে বাড়িয়ে দিচ্ছে কারণ সারাক্ষণ আমাদের মনে নেতিবাচক চিন্তা ভাবনা কাজ করছে। তাই এই পরিবর্তিত অবস্থার সাথে নিজেদের মানিয়ে নেওয়ার প্রয়াস করতে হবে যেন এর মধ্য দিয়েই আমরা পরিবর্তিত অবস্থার সাথে নিজেদের খাপ খাওয়াতে পারি।
আমাদেরকে টিকে থাকতে হলে অবশ্যই এবং অবশ্যই এই পরিবর্তিত অবস্থার সাথে মানিয়ে নেওয়ার মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে। মানিয়ে নিলে এবং মেনে নিলেই এই অবস্থায় ঘরে থেকে আমরা আমাদের পরিবর্তিত জীবনকে উপভোগ করতে পারবো। যে কোন কাজ যদি আমাদের হৃদয়গ্রাহী না হয় তাহলে অবসাদগ্রস্ত হওয়াই অবশ্যম্ভাবী। তাই মানিয়ে নিতে হবে, উপভোগ করতে হবে। তাহলেই মানসিকভাবে আমরা সুস্থ থাকতে পারবো এবং অবসাদমুক্ত থাকতে পারবো।
সূত্র: লেখাটি মনের খবর মাসিক ম্যাগাজিনে প্রকাশিত।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে