বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস: প্রাসঙ্গিক ভাবনা

0
246
বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস: প্রাসঙ্গিক ভাবনা
আজ ১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। ১৯৯২ সাল থেকে বাংলাদেশে দিবসটি পালিত হচ্ছে। এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে- সবার জন্যে মানসিক স্বাস্থ্য: অধিক বিনিয়োগ-অবাধ সুযোগ।

বিশ্বমারী কোভিড ১৯ আমাদের সামনে তুলে ধরেছে বিশ্বব্যাপী অস্থিরতা, হতাশা, মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ এর চিত্র। প্রতিপাদ্যের প্রথম অংশে বলা আছে সবার জন্যে মানসিক স্বাস্থ্যের কথা। দ্বিতীয় অংশে বলা হয়ে এটি বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদের কি করা উচিত বা কি উদ্যোগ প্রয়োজন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে যে NO HEALTH WITHOUT MENTAL HEALTH মানে মানসিক স্বাস্থ্যের সুস্থতা ব্যাতিরেকে সুস্থ মানুষ, সমাজ, দেশ এবং জাতি সম্ভব নয়। বিনিয়োগ এবং সুযোগ একই সুতোয় গাঁথা।বিনিয়োগ বাড়াতে হবে এবং সুযোগ তৈরি করতে হবে সবার জন্যে।

বাংলাদেশে স্বাস্থ্য বাজেটের মাত্র .৫ শতাংশ ব্যাবহার করা হয় মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যে। ন্যাশনাল মেন্টাল হেলথ সার্ভে বলছে দেশে ২ কোটি মানসিক রোগী বিদ্যমান। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে যে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে বিশ্বে একজন মারা যায় মানসিক রোগে। অনুন্নত কিংবা উন্নয়নশীল দেশে মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন এবং শিশু বিকাশ সব সময়ই বাধাগ্রস্ত হয় এবং হচ্ছে।এই সময়ে অধিক বিনিয়োগ এবং আবাধ সুযোগ এর জন্যে আমরা কিছু উদ্যোগ এবং কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারি-

১.অধিক পরিমানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক,সেবিকা ও দক্ষ স্বাস্থ্য কর্মী তৈরি করতে হবে মনোরোগের জন্যে।

২.পাঠ্য পুস্তকে মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার নিয়মাবলি এবং কিশোর কিশোরীদের শিক্ষা প্রদানের কার্যক্রম হাতে নিতে হবে।

৩.আধুনিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ইলেকট্রনিক প্রিন্ট মিডিয়াকে জনসচেতনতায় সম্পৃক্ত করতে হবে।

৪.এমবিবিএস বা গ্রাজুয়েশন এর সময় মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন এবং চিকিৎসার ব্যাপারটা খুব গুরুত্ব দিতে হবে।

৫.সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যে কর্ম পরিকল্পনা তৈরি এবং বাস্তবায়ন করতে হবে।

৬.বয়স্কদের শারীরিকক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে হবে।অবসাদ, বিষন্নতা, অস্থিরতা,অনিদ্রা বয়স্কদের মাঝে খুব বেশি দেখা যায়। এসব ক্ষেত্রে বয়স্কদের জন্যে মানসিক স্বাস্থ্য ক্লিনিক এবং সাইকোলজিকাল থেরাপির ব্যাবস্থা করতে হবে।

৭.মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছে যাদের তাদের ব্যাপারে সমাজের মানুষের নেতিবাচক ধারণা দূর করা প্রয়োজন।একজন সিজোফ্রেনিয়া কিংবা বাই পোলার ডিজঅর্ডার এর রোগী কেউ সামনাসামনি না দেখলে কিংবা পরিবারে না থাকলে আমাদের পক্ষে রোগী এবং পরিবারের কষ্ট এবং যন্ত্রণা বোঝা সম্ভব নয়।

৮.গবেষণা এবং পলিসি নির্ধারনে বিনিয়োগ করা প্রয়োজন। কনভারসন ডিসঅর্ডারকে অনেক সময় খুব একটা গুরুত্ব দেওয়া হয় না।কিন্তু এক গবেষণায় দেখা যায় বার বার হাসপাতালে কনভারসন ডিসঅর্ডার নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীদের শতকরা ৭০ ভাগ পরবর্তীতে বিভিন্ন নিউরোলজিকাল রোগে আক্রান্ত হয়।

৯.অন্তত পক্ষে প্রথমে জেলা এবং পরবর্তীতে উপজেলা পর্যায়ে কাউন্সিলিং এবং থেরাপির ব্যাবস্থা করা প্রয়োজন।

১০.সামাজিক সংশোধনাগার এবং আলোচনার ক্ষেত্র হিসেবে সাইকিয়াট্রি বিভাগকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে; যেমনটা করা হয়েছে উন্নত বিশ্বে।

সফল হোক মানসিক স্বাস্থ্য দিবস ২০২০।সবার মধ্যে সচেতনতা আরও বৃদ্ধি পাক। উন্নত, মানবিক, আধুনিক, সুস্থ সমাজ এবং রাষ্ট্রের জন্যে মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার এবং উদ্যোগ গ্রহণের এখনই সময়।

লিখেছেন: ডা.মোহাম্মদ হাসান, এমডি কোর্স, ফেইজ এ, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ,সিলেট এম জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ।

করোনায় স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

 

Previous articleবাংলাদেশ-ব্রিটেন মানসিক স্বাস্থ্য গবেষণা কার্যক্রমের উদ্বোধন
Next articleমানসিক স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে হেলথকেয়ার নিবেদিত ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here