সুখী হতে আমরা সবাই চাই। কিন্তু আদতে সুখ বলতে আমরা ঠিক কি বুঝি আর কিভাবেই বা সুখী হওয়া যায়? আসুন দেখা যাক।
সুখ বা মানসিক প্রশান্তির অর্থ এক একজন মানুষের কাছে এক এক রকম। কিছু মানুষের কাছে দৈনন্দিন জীবনে ভালো কিছু অভিজ্ঞতাই তার কাছে সুখের অনুভূতি। আবার অনেকের কাছে নিজের মনের চাহিদা গুলো পূরণ হওয়াই তাদের কাছে সুখের কারণ। মনের ও জীবনের এই চাওয়া পাওয়ার দোলাচলে অনেকের কাছে জীবনের লক্ষ্য সাধনে সফল হওয়া এবং গভীর ইতিবাচক মনস্তাত্ত্বিক অনুভূতিগুলোর পূর্ণতার সংমিশ্রণই সুখের সংজ্ঞা। সব দিক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এটি সাধারণভাবে বলা যায় যে, যে কাজে বা যে অবস্থায় মানসিক শান্তি পাওয়া যায় সেটিই সুখের অনুভূতি প্রদান করে। অবস্থা বা কাজে ভিন্নতা থাকলেও মানসিক প্রশান্তি ই সুখের মূল কারণ। আর মানসিক প্রশান্তি থাকলেই সেই ব্যক্তি নিজেকে সুখী মনে করতে পারে।
অনেকেই পারিপার্শ্বিক অবস্থা বা বিভিন্ন ঘটনাকে সুখের মূল কারণ হিসেবে মনে করে। কিন্তু মনস্তত্ত্ব বিজ্ঞান বিশেষ ভাবে বলে যে, সুখ বা সুখের অনুভূতি প্রকৃতপক্ষে আমাদের মস্তিষ্ক প্রসূত একটি বিষয়। তাই পারিপার্শ্বিক অবস্থা বা ঘটনার পরিবর্তন না করেও একজন মানুষ যদি তার মাঝে ইতিবাচক মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে এবং নিজেকে সুখী মনে করতে পারে তাহলে তার মস্তিষ্ক বা মন তাকে সুখের অনুভূতিই প্রদান করবে। যেমন, কোন কিছু নিয়ে ইতিবাচক চিন্তাভাবনা করলে আমরা সেই বিষয়ের প্রতি ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া প্রদান করি আর নেতিবাচক মনোভাব থাকলে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া। তাই অবস্থা যেমনই হোক, মানসিকতা বা মনোভাব ইতিবাচক হলে আমাদের মস্তিষ্ক সেটিকে সুখকর অনুভূতি হিসেবে গণ্য করবে এবং আমাদের সুখের বা ইতিবাচক অনুভব হবে।
আমাদের মনোভাবই আমাদেরকে যে কোন পরিস্থিতি বা বিষয়কে সহজ বা জটিল, সুখকর বা দুঃখজনক অনুভব করায়। আমরা যদি বিপদে আরও ভেঙ্গে পড়ি তাহলে আমাদের দুর্ভোগ আরও বেড়ে যাবে। আর যদি আমরা বিপদে ঘুরে দাঁড়াবার মানসিক শক্তি লালন করতে পারি তাহলে দুঃসময় সুসময়ে পরিবর্তিত হতে অধিক সময়ের প্রয়োজন হয়না। তাই, নিজেকে সুখী ভাবতে পরিস্থিতি বা অন্য কোন কিছু পরিবর্তন করার প্রয়োজন নেই। যা প্রয়োজন সেটি হল নিজের মনের ভাবনাগুলোর পরিবর্তন, নিজের মাঝে ইতিবাচক চিন্তাভাবনার বিকাশ ঘটানো।
কিছু সহজ কাজের মাধ্যমে আপনি নিজেকে সুখী মানুষ হিসেবে দেখতে পারবেন। মনস্তত্ত্ববিদ গনের মতে এগুলো আমাদের মধ্যে ইতিবাচক মানসিকতার বিকাশ ঘটায় এবং আমরা মনের মাঝে প্রশান্তির অনুভূতি লাভ করতে পারি। এগুলোর মধ্যে প্রথম হল যে কোন অবস্থায় নিজের মধ্যাকার ইতিবাচক মানসিকতা যেমন আত্মবিশ্বাস, ধৈর্য, সাহস ইত্যাদি না হারানো। দ্বিতীয়ত, নিজেকে সব সময় প্রাণোচ্ছল রাখার প্রচেষ্টা করা, জীবনের সব পরিস্থিতিকে সম্পূর্ণ রূপে উপভোগ করে বাঁচা। সামাজিক সম্পর্কগুলোকে অধিক থেকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে সমাজ ও সামাজিক সব কিছুর উপর কৃতজ্ঞতা পূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখা। জীবনের সব ইতিবাচক ঘটনাগুলোর প্রতি অধিক গুরুত্ব দেওয়া এবং নেতিবাচক বা প্রতিকূল বিষয়গুলোর প্রতি অবশ্যই মনযোগী না হওয়া। আর সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হল, সব সময়, সব অবস্থায় নিজেকে নিয়ে সন্তুষ্ট থাকার প্রয়াস করা। এটিই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ যা আপনাকে সব অবস্থায় ইতিবাচক মানসিকতা ধারণ করতে এবং মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখতে বা নিজেকে সুখী ভাবতে সহায়তা করবে।
আমরা যখনই কিছু অর্জন করতে চাই আমরা সেটি পাবার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা করি এবং সেই অনুসারে কাজ করি। সুখ বা প্রশান্তির ক্ষেত্রেও একই ভাবে ভাবা যেতে পারে। যখন আপনি জানেন সুখী হওয়া বা সুখে থাকার অর্থ কি এবং কিভাবে সেটি অর্জন করা যায়, তাহলে সেই অনুসারে কাজ করলে অবশ্যই আপনি সুখী হতে পারবেন। কিন্তু সুখ নিয়ে কখনোই নিজের মানসিক অবস্থার উপর খুব বেশী চাপ সৃষ্টি করবেন না। আমাদের সবার জীবনেই উত্থান পতন আসবে। একে মেনে নিতে হবে। শুধু মনে রাখবেন যে কোন অবস্থায় নিজেকে নিয়ে যেন সন্তুষ্ট থাকতে পারেন। আমরা সত্যিই সুখী হতে পারবো যদি আমরা নিজের উপর আত্মবিশ্বাস রাখতে পারি এবং নিজেকে নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে পারি।
সূত্র: https://www.psychologytoday.com/intl/blog/click-here-happiness/202009/what-is-happiness-anyway
করোনায় স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে