এই মহামারীকালীন দুঃসময়ে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার একটি অত্যন্ত কার্যকরী এবং সহজ উপায় হতে পারে নিয়মিত ভালো ভালো বই পড়া। এতে যেমন মন ভালো থাকে, তেমনি আমাদের ইতিবাচক মানসিকতার ও বিকাশ ঘটে।
পৃথিবীব্যাপী সমস্ত স্থানের মানুষের জীবন করোনা ভাইরাস এলোমেলো করে দিয়েছে। আমরা আমাদের স্বাভাবিক জীবন যাপন থেকে ছিটকে গেছি। প্রাত্যহিক কাজ কর্ম যথাযথ ভাবে করতে পারছিনা এবং আমাদের সামাজিক, পারিবারিক এবং অর্থনৈতিক জীবনে চরম বিশৃঙ্খলা নেমে এসেছে। মানুষ হিসেবে সবাইকে নিয়ে মিলেমিশে থেকে আমরা যে সামাজিক জীবন যাপনে অভ্যস্ত সেটি থেকে আমরা বঞ্চিত হয়ে আছি। এমন অবস্থায় নিজেদের মানসিক এবং শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখা আমাদের জন্য এক মস্ত বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। তাছাড়া করোনা প্রতিষেধক এখনো আমাদের অধরা থাকায় আমরা করোনা থেকে নিজেদের এবং পরিবারের সবার সুরক্ষা নিয়েও চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছি। এই অবস্থায় কিভাবে নিজেদের মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে পারি এবং এই পরিবর্তিত অবস্থার সাথে আমরা নিজেদের মানিয়ে নিতে পারি সেটি এখন আমাদের মূল লক্ষ্য।
বেশ কিছু সহজ এবং কার্যকরী পদ্ধতি আছে যা অবলম্বন করে আমরা আমাদের মানসিক অবস্থার উপর করোনার এই নেতিবাচক প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে পারি। এসব কৌশল গুলোর অন্যতম মূল মন্ত্র হল প্রতি দিনের দুশ্চিন্তার স্থানকে আনন্দ দিয়ে পরিপূর্ণ করা। আমাদের মানসিক চাপ কমানো। যেমন, খুব পছন্দের গান আমাদের মনকে প্রফুল্ল করে। আমরা সব দুশ্চিন্তা ভুলে যাই এবং আমাদের মন যেন নেচে ওঠে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে এসব কাজের মাধ্যমে আমরা দুশ্চিন্তা নয়, বরং আনন্দ বা ইতিবাচক অনুভূতি গুলোকে আমাদের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু করে তুলতে পারবো। একইভাবে পছন্দের এবং বড় বড় লেখকদের লেখা ভালো ভালো বই রয়েছে যেগুলো আমাদের সঠিক দিশায় পরিচালিত করতে সহায়তা করবে। সেগুলো পড়লে যেমন সময়টা সুন্দর কাটবে তেমনি বড় বড় মানুষদের ইতিবাচক দিক দর্শন আমাদের মনের ইতিবাচক মানসিকতার বিকাশ ঘটাবে।
মানুষ হিসেবে আমাদের সামাজিক মনোভাব আমাদেরকে সব সময়ই বিভিন্ন দিকপাল ব্যক্তিদের সৃষ্ট কর্মের প্রতি আগ্রহী করেছে। আমরা নিজদের মানসিকতাকে তাদের ভাব ধারা এবং চিন্তাভাবনার সাথে মেলাতে তাদের সৃষ্ট কর্মের প্রতি আকৃষ্ট হই। তারা তাদের কর্মের মধ্য দিয়ে আমাদের সঠিক দিকের নির্দেশনা প্রদান করেছেন যুগে যুগে। এই মহামারীর সময়ে বিপদ মুক্তির জন্য ধৈর্য ধারণ এবং মানসিক ইতিবাচক বিকাশের লক্ষ্যে তাই দিকপাল ব্যক্তিদের লিখে যাওয়া বই আমাদের সব থেকে ভালো নির্দেশনা প্রদান করতে পারবে। আমরা তাদের অভিজ্ঞতাকে আমাদের জীবন পরিবর্তনের লক্ষ্যে কাজে লাগাতে পারবো। যেহেতু এই সময়ে আমাদের সামাজিক মেলামেশায় বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে তাই বইই হতে পারে এই দুঃসময়ে আমাদের সব থেকে ভালো সময় কাটানোর সঙ্গী যার সাথে ভাব বিনিময়ের মাধ্যমে আমরা আমাদের মানসিক সব সমস্যার সমাধান করতে পারবো। ভালো বই, যেমন বিখ্যাত মানুষদের জীবনী, আমাদেরকে তাদের চিন্তাভাবনার সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে যারা এমন দুঃসময় ধৈর্যের সাথে মোকাবেলা করে, নিজের ইতিবাচক মানসিকতার প্রসার ঘটিয়ে নিজেদেরকে এক অন্যন্য পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। এসব বই আমাদের জন্য প্রেরণা যা আমরা সেসব বিখ্যাত মানুষদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ এবং ইতিবাচক ঘটনাবলির মাধ্যমে পেতে পারি।
তাছাড়া কল্পকাহিনী নির্ভর বইগুলো আমাদের কল্পনা শক্তির বিকাশ ঘটাবে। করোনা মহামারীর এই দুঃসময়ে আমরা যেন সুন্দর ভবিষ্যতের কথা কল্পনা করতেই ভুলে গেছি। আমাদের মধ্যে হতাশা এবং বিষণ্ণতা বাসা বেঁধেছে যা আমাদের স্বপ্ন দেখতেই ভুলিয়ে দিয়েছে। বিভিন্ন লেখকেরা তাদের কল্পনা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে এসব কল্পকাহিনী মূলক বই রচনা করেছে যেগুলো আমাদের এই দুঃসময়েও সুস্থ ও সুন্দর ভবিষ্যতের আশায় বুক বাঁধতে অনুপ্রেরণা যোগাবে।
তাই অন্যান্য বিনোদনমূলক কাজের সাথে সাথে যদি প্রাত্যহিক একটা নির্দিষ্ট সময় ভালো ভালো বই পড়ার অভ্যাস করা যায়, তাহলে মহামারীকালীন এই দুঃসময় মোকাবেলা করা আমাদের জন্য আরও সহজ হবে এবং আমরা মানসিক শান্তি খুঁজে পেতে সমর্থ হবো। এতে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকবে এবং সুস্থ ও সুন্দর ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে আমরা ভূমিকা রাখতে পারবো।
করোনায় স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে