মনের শক্তিকে কাজে লাগাবেন যেভাবে

0
106
অভিব্যক্তি মনের শক্তিকে কাজে লাগাবেন যেভাবে
মস্তিষ্ককে বেশি পরিমাণে ব্যবহার করার জন্যে প্রয়োজন সুসংহত মানসিক প্রস্তুতি। মানসিক প্রস্তুতির ভিত্তি হচ্ছে যথাযথ দৃষ্টিভঙ্গি। যথাযথ দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণের পথে প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে মনের শক্তি ও তৎপরতার উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা। নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে কোন শক্তিকেই নিজের বা মানুষের কল্যাণে লাগানো যায় না।

মানুষের শক্তির উৎস দুটি। এক দৈহিক শক্তি, দুই মানসিক শক্তি। দৈহিক শক্তি সসীম, কিন্তু মনের শক্তি অসীম। দেহের পক্ষে অসম্ভব এমন প্রতিটি কাজ মন করে যেতে পারে অবলীলায়। কঠিন পর্বতমালার মধ্যে সে যেমন অনায়াসে ঢুকে যেতে পারে, তেমনি পারে পরমাণুর মাঝেও ঢুকে পড়তে। অতল সাগরের তলদেশে মন যেমন মুহূর্তে ডুব দিতে পারে তেমনি মহাবিশ্বের দূরতম গ্যালাক্সি পরিভ্রমণ করে আসতেও তার সময় লাগে না। দেহের অবস্থান স্থান-কালে সীমাবদ্ধ হলেও স্থান-কালের কোন বেষ্টনী দিয়েই মনকে আবদ্ধ করা যায় না। অতীত, বর্তমান আর ভবিষ্যৎকালের যে কোন স্তরে মন অত্যন্ত স্বাচ্ছন্দ্যে বিচরণ করতে পারে। দেহের ক্লান্তি আছে কিন্তু মনের কোন ক্লান্তি নেই। দেহের নিষ্ক্রিয় বিশ্রামের প্রয়োজন আছে, কিন্তু মনের কোন নিষ্ক্রিয় বিশ্রামের প্রয়োজন নেই। দেহ যখন নিদ্রায় অচেতন থাকে, মন তখনও থাকে সজাগ, সচেতন।

আমাদের সকল সচেতনতার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে মন। শিল্প-সাহিত্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে যা কিছুই আমরা এখন বাস্তবে দেখতে পাচ্ছি তার সবকিছুর ধারণাই প্রথম এসেছে মনে। মনের ধারণার বীজই পরবর্তীতে পত্র-পুষ্পে প্রস্ফুটিত হয়ে বাস্তব রূপ নিয়েছে। এই অসীম ক্ষমতাসম্পন্ন মন ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য না হলেও এ শক্তি ইন্দ্রিয়াতীত নয়, ইন্দ্রিয়াশ্রয়ী। তাই মনের বল ইন্দ্রিয়শক্তি তথা দৈহিক শক্তিকে বাড়াতে পারে বহুগুণ। আপাতত যুক্তির যা অসম্ভব তাকেও করতে পারে সম্ভব।

প্রতিভাবান ও একজন সাধারণ মানুষের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে-প্রতিভাবান ব্যক্তি মনের এই শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে নিজস্ব সৃজনশীল পন্থায় ব্যবহার করে অমরত্ব লাভ করেন। আর সাধারণ মানুষ মনকে নিয়ন্ত্রণ না করে মন দ্বারা পরিচালিত হয়ে অসীম শক্তির অপচয় করে বিনাশ প্রাপ্ত হয়। কারণ মন হচ্ছে আলাদীনের দৈত্যের মত সদা তৎপর। তার আহার নিদ্রার কোন প্রয়োজন নেই। তার প্রয়োজন কাজ। তাকে সব সময় কাজ দিয়ে রাখতে হয়। আপনি যদি তাকে আপনার সাফল্যের জন্যে প্রয়োজনীয় ইতিবাচক কাজ দিয়ে রাখতে পারেন, তবে সেই লক্ষ্যেই সে নিরলস কাজ করে যাবে। নিত্য নতুন আইডিয়া ও সাফল্যে আপনি চমৎকৃত হবেন। আর যদি ইতিবাচক কাজ দিতে না পারেন তবে মন করবে নেতিবাচক কাজ।

সভ্যতার উষালগ্ন থেকেই জ্ঞানীরা মনকে নিয়ন্ত্রণ ও মনোশক্তিকে সৃজনশীলভাবে কাজে লাগিয়ে এসেছেন। এই চেষ্টার ফলশ্রুতিতে কেউ হয়েছেন অভিযাত্রী, আবিষ্কারক, বিজ্ঞানী, কেউ হয়েছেন শিল্পী, সাধু, সন্ত, দরবেশ। কেউ পরিণত হয়েছেন মহাপুরুষে। বিশ শতকের শেষে এসে আমরা তাই পেয়েছি মন নিয়ন্ত্রণের কলাকৌশল সম্পর্কে নানা প্রক্রিয়া ও অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ জ্ঞানের এক বিশাল ভাণ্ডার।

বিজ্ঞানীরা মনকে ভাগ করেছেন তিন ভাগে। সচেতন, অবচেতন এবং অচেতন। সচেতন মন সবকিছুকেই নিজের ধারণা, যুক্তি ও বিশ্বাসের প্রেক্ষিতে বিচার বিবেচনা করে। কিন্তু অবচেতন মন ভাল-মন্দ কোন কিছুই বিচার করার চেষ্টা করে না। সে যে তথ্য, পরিকল্পনা বা আইডিয়া পায়, সেভাবেই প্রভাবিত হয়ে কাজ শুরু করে দেয়। প্রভাবটা আপনার জন্যে ভাল হোক বা ক্ষতিকর সে বিবেচনা করে না। ভয়, ক্রোধ বা বিশ্বাস দ্বারা গভীরভাবে তাড়িত হলে যে কোন ধরনের প্রভাবে অবচেতন মন সহজেই সাড়া দেয়। মনের অবচেতন অংশ আবার সচেতন অংশের কথা সহজেই শোনে। ভয়, সীমাবদ্ধতা বা ভুল বিশ্বাসের বশবর্তী হয়ে সচেতন মন সব সময় অবচেতন মনের দরজা বন্ধ করে রাখতে চায়। অথচ প্রজ্ঞার সঙ্গে সচেতন মনের যোগাযোগের মাধ্যম হচ্ছে অবচেতন মন। কারণ সচেতন ও অচেতন মনের মাঝখানেই অবস্থান করছে অবচেতন মন। বিজ্ঞানীরা যাকে মনের অচেতন অংশ বলে মনে করেন, সাধকরা সেটাকেই মনে করেন মনের মহাচেতন অংশ। শুধুমাত্র অবচেতন ও অচেতনের মাঝখানের দরজা খুলতে পারলেই সচেতন মন প্রজ্ঞা বা মহাচৈতন্যের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে সক্ষম হয়।

মনের প্রতিটি কাজ করে দেয় আমাদের ব্রেন। সক্রিয় অবস্থায় ব্রেন থেকে প্রতিনিয়ত খুব মৃদু বিদ্যুৎ তরঙ্গ বিকিরিত হয়। বিজ্ঞানীরা একে বলেন, ব্রেন ওয়েভ। ১৯২৯ সালে ডা. হ্যান্স বার্জার ইলেকট্রো এনসেফেলোগ্রাফ (ইইজি) যন্ত্র দ্বারা এই ওয়েভ বা তরঙ্গ মাপেন। মানসিক চাপ, সতর্কতা, তৎপরতামূলক পরিস্থিতিতে ব্রেনের বৈদ্যুতিক বিকিরণ বেড়ে যায়। তখন ব্রেন ওয়েভের ফ্রিকোয়েন্সি দাঁড়ায় প্রতি সেকেন্ডে ৮ থেকে ১৩ সাইকেল। একে বলা হয়, আলফা ব্রেন ওয়েভ। থিটা ব্রেন ওয়েভ আলফার চেয়ে ধীর। এর ফ্রিকোয়েন্সি হচ্ছে প্রতি সেকেন্ডে ৪ থেকে ৭ সাইকেল।

এরপর রয়েছে গভীর নিদ্রাকালীন ব্রেন ওয়েভ। এর ফ্রিকোয়েন্সি হচ্ছে প্রতি সেকেন্ডে ০.৫ থেকে ৩ সাইকেল। একে বলা হয় ডেল্টা ব্রেন ওয়েভ। ব্রেন ওয়েভ ফ্রিকোয়েন্সি প্রতি সেকেন্ডে ২৭ বা তার ওপরে উঠে যেতে পারে হঠাৎ উত্তেজিত অবস্থার ফলে। একে বলা হয় গামা ব্রেন ওয়েভ।

আমরা জানি বিশ্রাম, তন্দ্রা বা নিদ্রাকালীন সময়ে অবচেতন মন সবচেয়ে সৃজনশীল থাকে ও ভালভাবে কাজ করে। আর বিশ্রাম বা তন্দ্রাকালীন সময়ে দেহ, মন পুরোপুরি শিথিল হয়ে গিয়ে ব্রেন ওয়েভ নেমে যায় প্রতি সেকেন্ডে ১৩ থেকে ৪ সাইকেলে, বিজ্ঞানের পরিভাষায় আলফা/থিটা লেভেলে। এখন যদি আমরা কৃত্রিমভাবে শিথিলায়নের মাধ্যমে শরীর-মনে বিশ্রাম ও তন্দ্রাকালীন আবহ সৃষ্টি করতে পারি, তাহলেও ব্রেন ওয়েভ নেমে আসবে আলফা/থিটা লেভেলে। আর ব্রেন ওয়েভকে আলফা/থিটা লেভেলে নামিয়ে আনতে পারলেই ধ্যানাবস্থা সৃষ্টি হবে। অবচেতন মনের গভীরের শক্তিকে কাজে লাগানোর পথ হবে মুক্ত। আপনি প্রবেশ করতে পারবেন মনের আরও গভীরে। সচেতন মন যেমন অবচেতনকে যথাযথ নির্দেশ প্রদান করতে ও সৃজনশীলভাবে কাজে লাগাতে পারবে, তেমনি পারবে অচেতন বলয়ের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে। আর অবচেতন তখন সেই নির্দেশকে বা ধারণাকে যুক্তিসঙ্গত পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্যে অনুকূল ব্রেন ফ্রিকোয়েন্সিতে নিরলস কাজে নেমে পড়বে।

মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন

 

Previous articleপ্রতিবন্ধীদের হাত হোক কর্মের হাতিয়ার:মানসিক ভারসাম্যহীন সন্তানের মায়ের কথা
Next articleক্লেপটোম্যানিয়া বা চুরি করার বাতিক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here