চিন্তা করে দেখুন তো। আপনার কোন বন্ধু আপনাকে মজার একটা কথা বললো, কিন্তু আপনি হাসলেন না বা হাসতে পারছেন না। হাসি পাচ্ছেনা; ব্যাপারটা এমন নয়। হাসলে এবং হাসালে পড়তে পারেন বিপদে। হতে পারেন গ্রেফতার এমনকি জেল বা এর থেকেও বড় কোন শাস্তি পেয়ে যেতে পারেন। অবাক হচ্ছেন, এমন কেন লিখছি।
অদ্ভুত আইনের দেশ উত্তর কোরিয়া। উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন এমনই এক আইন করেছেন দেশে। উত্তর কোরিয়ার প্রাক্তন সর্বোচ্চ নেতা কিম জং ইলের দশম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তিনি এ সিদ্ধান্ত নেন। গত শুক্রবার ছিল কিম জং ইলের দশম মৃত্যুবার্ষিকী। কিম জং ইলের দশম মৃত্যুবার্ষিকীতে ১০ দিনের জন্য দেশজুড়ে হাসি, জন্মদিন কিংবা মৃত্যু দিবস পালন নিষিদ্ধ করছে কিম প্রশাসন।
হাসি ছাড়াও বাজার এবং সব ধরনের বিনোদনমূলক কার্যকলাপ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশ সংবলিত আদেশে বলা হয়েছে, ১০ দিন এসব নিয়ম ভাঙলে দেশটির বাসিন্দাদের কঠোর শাস্তির মুখে পড়তে হবে।
উত্তর কোরিয়াবাসীর কাছে দিনটি খুবই শোক ও দুঃখের। দিনটিকে বিশেষভাবে সম্মান জানাতে অভিনব পথ বেছে নিয়েছে পিংয়ইয়ং।
কি ভাবছেন? হাসি পাচ্ছে? হাসুন, মন খুলে হাসুন। তবে সাথে জেনে নিন হাসার উপকারিতা।
টি-সেলের ক্ষমতা বাড়ায়: এই বিশেষ ধরনের কোষটির শক্তি যত বাড়তে থাকে, তত শরীর ভিতর থেকে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই রোগ ভোগের আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। আর টি-সেলের ক্ষমতা বাড়ানোর সবচেয়ে সহজ উপায় মন খুলে হাসা। এতে টি-সেলের কর্মক্ষমতা বাড়তে থাকে।
মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে: যখনই দেখবেন রাগ, হতাশা বা দুঃখ মনকে ঘিরে ধরেছে, তখনই এমন কিছু করবেন যাতে খুব হাসি পায়। কারণ, মন যখন ঠিক থাকে না, তখন মানসিক চাপ কমাতে হাসিই একমাত্র দাওয়াই হতে পারে।
মন ভাল হয়ে যায়: আমরা যখন প্রাণ খুলে হাসি, তখন আমাদের শরীরে সেরাটোনিন এবং এন্ডোরফিন হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। ফলে নিমিষে আমাদের মন ভাল হতে শুরু করে। সেই সঙ্গে মানসিক এবং শারীরিক যন্ত্রণাও কমে যায়। তাই তো এ ২টি হরমোনকে চিকিৎসকেরা ‘ফিল গুড’ হরমোনও বলে থাকেন।
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে: হাসার সময় আমাদের শরীরে ‘ফিল গুড’ হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। এই হরমোনগুলি নানাভাবে শ্বেত রক্ত কণিকার উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এতটাই শক্তিশালী হয়ে যায় যেকোনও রোগই শরীরকে ছুঁতে পারে না। সেই সঙ্গে সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়।
ফুসফুস তরতাজা হয়ে ওঠে: যখন আমরা হাসি, তখন ফুসফুস প্রসারিত হয় এবং আমাদের ফুসফুসের প্রতিটি কোনা বিশুদ্ধ অক্সিজেনে ভরে যায়। এমনটা যত হতে থাকে তত সারা শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ে। ফলে নানাবিধ রোগের প্রকোপ হ্রাস পায়। সেই সঙ্গে ফুসফুসের কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।
রক্তচাপ কমায়: একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে হাসার সময় আমাদের সারা শরীরে রক্ত চলাচল বেড়ে যায়। রক্তনালীগুলি প্রসারিত হতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই শিরা-ধমনীর উপর চাপ কম পরে। আর এমনটা হলে ব্লাড প্রেসার কমতেও সময় লাগে না। তাই প্রেসারের রোগীরা যদি গোমড়ামুখো হন, তাহলে কিন্তু বেজায় বিপদ!
হাসি এক ধরণের ব্যায়াম: একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, হাসার সময় আমাদের শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত ক্যালরি বিপুল পরিমাণ বার্ন হতে থাকে। শুধু তাই নয়, এই সময় পেটেও খুব চাপ পড়ে। ফলে সব দিক থেকে ওজন হ্রাসের পথ প্রশস্ত হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে ১০০ বার হাসি ১০ মিনিট নৌকা চালানো কিংবা ১৫ মিনিট সাইকেল চালানোর সমান শারীরিক কসরত। শারীরিক সঞ্চালনের কারণে সবখানে রক্ত চলাচল যায় বেড়ে। রক্তে সংযুক্ত হয় বেশি পরিমাণ অক্সিজেন। হাসিতে ডায়াফ্রাম, পেটের ও রেসপিরেটরি মাংসপেশিসমূহ এবং মুখ, এমনকি পা কিংবা পিঠের মাংসপেশির চমৎকার এক্সারসাইজ হয়।
শরীর শান্ত হয়: দেহে জমতে থাকা ক্লান্তি, কষ্ট এবং স্ট্রেস এক মুহূর্তে কমে যায়, যখন আমরা প্রাণ খুলে হাসি। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে হাসির প্রভাব আমাদের শরীরে প্রায় ৩০-৪৫ মিনিট পর্যন্ত থাকে।
হাসলে হার্ট ভালো থাকে: বেশি হাসলে ব্লাড প্রেসার কমে। শুধু তাই নয়, হার্টের কার্যক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। আসলে হাসার সময় আমাদের রক্তনালীগুলি প্রসারিত হয়। ফলে সারা দেহে রক্ত প্রবাহ বেড়ে গিয়ে শরীর একেবারে চাঙ্গা হয়ে ওটে। সেই সঙ্গে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কাও কমে।
স্ট্রেস কমায়: হাসির সময় আমাদের শরীরে এন্ডোরফিন হরমোনের ক্ষরণ হয়, যা স্ট্রেস হরমোন নামে পরিচিত। এটি কর্টিজল হরমোনের কার্যক্ষমতাকে কমিয়ে ফেলে। ফলে হাসির জোয়ারে মানসিক চাপ যে কখন দূরে পালায় তা বোঝাই যায় না।
লিখেছেন শরীফুল সাগর।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে