দৈনন্দিন জীবনে প্রায়ই শোনা যায়, আমার কিছু মনে থাকে না। মেমোরি/স্মৃতি ভুলে যাওয়া স্বাভাবিক, অস্বাভাবিক, উপকারী, অপকারী সব রকম হতে পারে। আমরা এবার মেমোরি/স্মৃতি নিয়ে কয়েকটি পর্বে আলোচনা করব। আজকের এই পর্বে মেমোরি বা স্মৃতির গঠন নিয়া আলোচনা করা যাক।
স্মৃতি সাধারনত দুই ভাবে গঠিত হয়। Encoding ও storage বা সংরক্ষণ।
১. Encoding: এটা স্মৃতি গঠনের প্রথম ধাপ। আমার প্রতিদিন প্রচুর উদ্দীপনার মাধ্যমে সাধারণ কাজ কর্ম করি। অনেক প্রকার উদ্দিপনার মধ্যে কিছু হারিয়ে যায়, কিছু আমাদের মেমোরিতে জায়গা করে নেয়। যে প্রক্রিয়ায় প্রতিদিনের অসংখ্য উদ্দিপনার মধ্যে কিছু উদ্দিপনা মেমোরিতে জায়গা করে নেয় তার প্রাথমিক পর্যায় হল Encoding। Encoding এর মাধ্যমে উদ্দীপনা গুলো উদ্দীপনা থেকে মেমোরিতে পরিবর্তিত হতে শুরু করে।
Encoding দুই ভাবে হয়। Automatic processing আর Effortful processing ।
Automatic processing (স্বয়ংক্রিয় ভাবে): প্রতিদিন চলতে ফিরতে যে তথ্য গুলো এমনি এমনি মেমোরিতে চলে যায়, সে গুলো Automatic processing এর মাধ্যমে যায়। যেমনঃ কোনো জায়গায় ভ্রমণ করার পর আবার মনে করতে চাইলে ওই জায়গার বর্ণনা ঠিক ঠাক ভাবেই মনে পড়ে, যদিও সেটা পরে মনে করার জন্য কোনো চেষ্টাই ওই সময়ে করা হইনি। এখানে যে মেমোরি তৈরি হয়ে ছিল সেটা ছিল Automatic processing।
Effortful processing or mental work: সহজভাবে বলা যায় Effortful processing হল মানসিক শ্রমের মাধ্যমে মনে রাখার চেষ্টা। স্বয়ংক্রিয় ভাবে অনেক তথ্য মেমোরিতে যায় না, সেগুলোকে Effortful processing বা mental work এর মাধ্যমে মেমোরিতে পরিবর্তন করতে হয়। সবচেয়ে ভাল উদাহরণ হল বইয়ের পড়া মুখস্ত করা। Effortful processing এর প্রক্রিয়াকে Rehearsal বলে। Rehearsal দুই ভাবে করা যায়। যথাঃ Maintenance rehearsal ও Elaborative rehearsal । গবেষণায় দেখা গেছে Elaborative rehearsal, Maintenance rehearsal থেকে ভালো।
Maintenance rehearsal: কোনো তথ্য বার বার প্রাকটিস করার মাধ্যমে মেমোরি তৈরি করাই হল Maintenance rehearsal। যে কোন তথ্য বা কাজ শুধু বার বার করার মাধ্যমে মেমোরি গঠনই Maintenance rehearsal । Maintenance rehearsal হল সাধারণ repetition।
Elaborative rehearsal: কোনো তথ্যকে মানসিক একটা আকৃতি বা প্রতিকৃতি তৈরি করা ও সেটা অনুযায়ী মনে রাখার প্রক্রিয়াই Elaborative rehearsal । যে কোনো তথ্য বা কাজ শুধু বার বার না করে বরং ওই তথ্যকে একটা ঘটনা বা ছবির মাধ্যমে উপস্থাপন করা ও সেটা অনুযায়ী মনে করার মাধ্যমে মেমোরি গঠনই Elaborative rehearsal । এটা দুই ভাবে করা যায়। যথাঃ Semantic encoding ও Imagery encoding বা creating mental image ।
Semantic encoding: কোনো তথ্য উপস্থাপন করা হলে সেটার অর্থ বুঝে মনে রাখার চেষ্টাই হল Semantic encoding । কোনো তথ্য হুবহু মনে না রেখে ওই তথ্যের মূল অর্থ বুঝে সেটা ব্যবহার করাই হল Semantic encoding । যেমনঃ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মিলে অনেক বড় কিছু তৈরি হয় অর্থকে বুঝে মনে রাখতে চাইলে “দশের লাঠি একের বোঝা” এই Semantic encoding টি ব্যবহার করা হয়।
Imagery encoding বা creating mental image: কোনো তথ্য উপস্থাপন করা হলে সেটার একটা mental image বা ছবি তৈরি করা ও সেটা অনুযায়ী মেমোরি গঠনই Imagery encoding। যেমনঃ “দশের লাঠি একের বোঝা” এটা Imagery encoding এর মাধ্যমে মনে রাখতে চাইলে মনের মধ্যে একটা ছবি তৈরি হবে যেটা একটা লাঠির বোঝা যা দশটি লাঠি নিয়ে তৈরি।
গবেষণায় দেখা গেছে Imagery encoding সব চেয়ে ভালো encoding উপায়।
২. Storage বা সংরক্ষণ:
মেমোরি সাধারনত তিন ভাবে সংরক্ষিত থাকে। যথাঃ
স্বল্প মেয়াদী মেমোরি (Short Term Memory/ Sensory Memory)
মধ্যম মেয়াদী মেমোরি (Intermediate Term Memory)
দীর্ঘ মেয়াদী মেমোরি (Long Term Memory)
যার বিস্তারিত গত পর্বে আলোচিত হয়েছে।
স্মৃতিশক্তি ১ম পরিচ্ছেদ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না কর্তৃপক্ষ।