বাবা-মায়ের উদ্বিগ্নতা একদম ঠিক। তারা চিন্তা করেন তাদের বাচ্চারা পর্দার সামনে ঠিককত সময় ব্যয় করছে। এখন নতুন গবেষণা থেকে বোঝা যায় যে যখন শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি থাকলে তারা স্মার্টফোনের বা অন্যান্য ডিজিটাল প্রযুক্তির সাথে অনেক সময় ব্যয় করে, তখন তাদের মনোযোগ কমে যাওয়া ও আচরণের বিভেদমূলক ঝুঁকি বেশি থাকে।
কিন্তু খবরটির সবটা খারাপ নয়। বাচ্চারা যতক্ষণ স্ক্রিনের সামনে থাকে তারএকটি ইতিবাচক দিকও দেখেছেন গবেষকরা। বাচ্চারা যখন কোনও দিনে মেসেজ বেশি পাঠায় অথবা চ্যাট করে, সেদিন তারা কম উদ্বিগ্ন এবং কম বিষণ্ন বোধ করে।
গবেষণা ও সহ-লেখক ক্যান্ডিস অডগার্সবলেন, “এই ফলাফলগুলি আমাদের এই সিদ্ধান্তে উপনীত করে যে ইতিমধ্যেই যারা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে, স্ক্রিনের বেশি অথবা অতিরিক্ত ব্যবহার যে সমস্যা ইতিমধ্যে আছে তা আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে”।
অডগার্সআরো বলেন, “কিন্তু আমরা বলতে পারি না যে প্রযুক্তি অথবা স্মার্টফোনের ব্যবহারই শুধু এই সমস্যার সৃষ্টি করছে”। তিনি এন সি ডরহামের ডিউক ইউনিভার্সিটির সানফোর্ড স্কুলের মনোবিজ্ঞান এবং স্নায়ুবিজ্ঞানের অধ্যাপক।
স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেটগুলির মতো ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলির ব্যবহার এত প্রবল হয়ে উঠেছে যে ২০১৫ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে অধিকাংশ শিশু তাদের ২ বছর বয়স পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই এইসব ইলেক্ট্রনিক্স জিনিসপত্রগুলো ব্যবহার করেছে।
অন্য গবেষণা থেকে জানা যায় যে ফেসবুকের মতো সামাজিক মাধ্যম সাইটগুলি শিশুদের জন্য বিশেষ সুযোগ তৈরী করে এছাড়া নানাভাবে নানান কিছু শিক্ষার জন্য সুযোগ করে দিয়েছে। যদিও এখানে ইতিবাচক, নেতিবাচক দু ধরণের শিক্ষাই রয়েছে। কিন্তু এখানে সাইবার নিপীড়ণের স্বীকার হওয়ার অথবা করা উভয়েরই সম্ভাব্য ঝুঁকি রয়েছে।
অডগার্স ও তার সহকর্মীরা সম্প্রতি আগের গবেষণার ফলাফল পর্যালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ইলেকট্রনিক ডিভাইস গুলোর ক্রমবর্ধমান ব্যবহার সম্পর্কে ব্যাপক আশঙ্কা থাকা সত্বেও কিশোর কিশোরীদের প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে ইতিবাচক ফলাফল পেয়েছেন। এবং এসব ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ব্যবহার তাদের সামাজিক সম্পর্কের মধ্যেও ইতিবাচক সম্ভাবনার সৃষ্টি করছে বলে কিছু প্রমাণ পাওয়া যায়”।
যাইহোক, অডগার্সবলেন“আমরা এখনও অল্প বয়স্ক ছেলেমেয়েদের ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ব্যবহার এবং এদের সাথে খুব বেশি জড়িত থাকা অথবা অনেক বেশি সময় দেয়ার প্রভাব তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর কতটা পড়ছে তা সম্পর্কে খুব কম জানি।”
নতুন গবেষণার জন্য, গবেষকরা ১১ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে ১৫১ টি শিশুকে স্মার্টফোন ব্যবহারকরতে দিয়েছিলেন। বাচ্চারা আমেরিকার দরিদ্র অঞ্চলে বসবাস করে এবং মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকিতে আছে বলে বিবেচিত হয়। প্রায় ৬০ শতাংশ অংশগ্রহণকারী সাদা ছিল।
স্মার্টফোনে এক মাসের মধ্যে প্রতিদিন তিনবার করে করে অংশগ্রহণকারীদের সতর্ক করে দেয়া হয় যে তাদের প্রশ্ন করা হবে তারা কেমন অনুভব করলো এবং তারা যেন সংক্ষিপ্তভাবে উত্তর দেয়। শিশুরা ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রতিদিন কতটা ব্যবহার করছে তা নিয়েও প্রশ্ন করা হয়।
অডগার বলেন, “মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বাচ্চারা সময়কে অনুসরণ করে, আমরা ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার না করে এবং ব্যবহার করে এমন দিনগুলির পরিবর্তন শিশু কিশোরদের মধ্যে কি ধরণের লক্ষণ সৃষ্টি করছে তা দেখতে পাচ্ছি”। তিনি বলেন, “আমরা প্রাথমিকভাবেমানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য ডিজিটাল প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান ব্যবহার কতটুকু প্রভাব ফেলতে পারে তা ভালভাবে দেখতে চাই”।
গবেষকরা দেখেছেন যে বাচ্চারা তাদের স্মার্টফোন, বা অন্যান্য ডিজিটাল প্রযুক্তির পেছনে দিনে প্রায় ২.৩ ঘন্টা ব্যয় করে। এক দিনে গড়ে ৪১টি মেসেজ পাঠানো হয় বলে গবেষণায় পাওয়া গেছে।
তথ্যসূত্র-
(http://www.webmd.com/mental-health/news/20170503/are-smartphones-helping-or-harming-kids-mental-health)
রুবাইয়াত মুরসালিন, আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মনেরখবর.কম