মনের খবর টিভির নারীদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সাপ্তাহিক আয়োজন ‘নারী ও মন’-এর ৩৮তম পর্ব প্রচারিত হয়েছে গতকাল ১৬ নভেম্বর।
এই পবের বিষয় ছিল-‘স্বামী, স্ত্রীর সম্পর্ক ও বোঝাপড়া’। নিয়মিত অতিথি ডা. ফাতেমা জোহরা মারিয়া ছিলেন আলোচক। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। আলোচক ছিলেন নিয়মিত উপস্থাপক আফসানা রহমান লিওনি।
আলোচনার শুরুতে লিওনি বলেন, ‘আলাদা ও ভিন্ন মানসিকতার নারী এবং পুরুষ যখন বিয়ের মাধ্যমে দাম্পত্য জীবন শুরু করেন-ভিন্ন মানসিকতার সামঞ্জস্যতাই তাদের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়। তাতে যারা সফল হতে পারেন, তাদের সম্পর্ক গভীর ও দীঘস্থায়ী হয়। যাদের মধ্যে মানসিক বোঝাপড়া একদমই ভালো থাকে না, তাদের সম্পর্ক অর্থবহ হয় না ও ভেঙে যায়।’
ডা. ফাতেমা জোহরা মারিয়া বলেন, ‘এটি খুবই কমন টপিক বা সাধারণ বিষয়। পরস্পরের মধ্যে বোঝাপড়া হয় না, স্বামী-স্ত্রীর যোগাযোগ ভালো নয়, যৌন সম্পকে কোনো অসুবিধা থাকছে-এমন সমস্যা নিয়ে আমরা সাইকিয়াট্রিস্টরা সবসময়ই ডিল করি। আমি স্বামী ও স্ত্রীদের বলব, বিয়ের পর একটি ছেলে ও মেয়ের দায়িত্ব অনেক বেড়ে যায়। তবে দাম্পত্য সম্পকে কেবল ভালোবাসাই থাকবে, ঝগড়া থাকবে না, বাক-বিতন্ডা থাকবে না-এগুলোও সত্যিকারভাবে কাম্য নয়। প্রতিটি সম্পর্কের উত্থান, পতন আছে।’
তিনি বলেন, ‘বিয়ে ভালোবেসে ও আনুষ্ঠানিকভাবে হয়। ভালোবাসার মাধ্যমে যারা বিয়ে করেন, তাদের মধ্যে দাম্পত্য সমস্যাগুলো বেশি হয়। দাম্পত্য জীবনের সমস্যাগুলো দূর করতে বোঝাপড়ার প্রয়োজন। স্ত্রী এবং স্বামী দুজনকেই তাদের কমিটমেন্ট-সারাজীবন সুখে, দু:খে পাশে থাকার অঙ্গীকারকে শ্রদ্ধা করতে হবে। সুসময়ে পাশে থাকতে হবে, দু:সময়েও পাশে থাকতে হবে অবিচলভাবে।’
তিনি বলেন, ‘দাম্পত্য জীবনে স্বামী ও স্ত্রী আলাদা মানসিকতার হতে পারেন। তাদের একজন বহিগামী হতে পারেন, আরেকজন অন্তঃমুখী হতে পারেন। তাদের যোগাযোগ ভালো থাকলে এটিও কোনো সমস্যা নয়। একজন আরেকজনকে ছাড়ও দিতে হবে।’
তিনি জানিয়েছেন, ‘বাংলাদেশের দাম্পত্য সম্পর্কগুলোতে যৌন ও দাম্পত্যের বাইরে আর কোনো সম্পর্ক থাকে না। ফলে একজন ঘুরতে ভালোবাসেন, আরেকজন সাজতে-এমন নানা খুঁটিনাটি সমস্যায় তারা ভোগেন ও ছেলেমেয়েরা ভালো ও স্বাস্থ্যকর সম্পর্কে বড় হতে পারেন না।’
ডা. ফাতেমা জোহরা বলেন, ‘পরস্পরকে ভালোভাবে জানা, একে-অন্যের প্রয়োজন বোঝা, একে অন্যের মুড বোঝা, পারসনালিটি অনুযায়ী একে অন্যকে ছাড় দেওয়া ও তার মতো করে চলা এবং পারস্পরিক যোগাযোগকে বাড়ানো দাম্পত্য জীবনের কমপ্লিট প্যাকেজ।’
স্বামী স্ত্রীর আদর্শ সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত-এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই মধুর হওয়া উচিত। মাঝে, মধ্যে টক-মিষ্টি-ঝাল টাইপের হতে পারে। এই সম্পর্কে ভালোবাসা, যোগাযোগ, পরস্পরকে বোঝা, দায়িত্ব নেওয়া থাকতে হবে। পরস্পরকে ছাড় দিতে হবে।
ডা. ফাতেমা জোহরা বলেন, ‘স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে সবার আগে থাকে ফিজিক্যাল বা শারিরীক চাহিদা। একজন আরেকজনের চাহিদা ও তার জীবনের পছন্দ-অপছন্দগুলোকে জানতে হবে। বিয়ের প্রথম ছয় মাসে যৌন সম্পর্ক খুব গুরুত্বপূণ। একে ভালোভাবে না নেওয়ায় নানা সমস্যায় মনোরোগ চিকিৎসকের কাছে তাদের যেতে হয়। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্কটি কিন্তু এই যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে গড়ে ওঠে। তাদের দুজনের বিশ্বাস করা-বিষয়টিও খুব ভালোভাবে থাকতে হবে। এটি আদর্শ সম্পর্কের ভিত। কোনোভাবেই তা যেন ভেঙে না যায়, সেদিকে দুজনকেই খেয়াল রাখতে হবে। একবার বিশ্বাস ভেঙে গেলে কিন্তু আর গড়ে ওঠে না। তাদের দুজনকে সবচেয়ে ভালো বন্ধুর সম্পর্কটি গড়ে তুলতে হবে। যোগাযোগ ভালো থাকতে হবে।’
১৭ নভেম্বর, ২০২১; ওমর শাহেদ
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে