আপনি কি সবসময় দুশ্চিন্তাগ্রস্থ থাকেন যে অন্যরা আপনাকে জাজ বা বিচার করবে? আপনি কি ভয় বা উদ্বেগের কারণে নতুন লোকেদের সাথে দেখা করা বা মেলামেশা এড়িয়ে চলেন?
আপনি যদি কমপক্ষে ছয় মাস ধরে এমনটা অনুভব করে থাকেন এবং এই অনুভূতিগুলির জন্যে আপনার দৈনন্দিন কাজগুলি করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে, তাহলে বলা যেতে পারে, আপনার সোশ্যাল ফোবিয়া বা সামাজিক উদ্বেগজনিত ব্যাধি থাকতে পারে।
সোশ্যাল ফোবিয়া বা সামাজিক ফোবিয়াকে সোশ্যাল অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার বা সামাজিক উদ্বেগজনিত ব্যাধিও বলে। এটি সামাজিক পরিস্থিতিগুলি এড়িয়ে চলার প্রবণতা যা একটি দীর্ঘমেয়াদী এবং অপ্রতিরোধ্য ভয়। সামাজিক উদ্বেগজনিত ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তি এমন পরিস্থিতিতে উদ্বেগ বা ভয়ের লক্ষণ অনুভব করেন যেখানে তাকে অন্যদের দ্বারা যাচাই করা, মূল্যায়ন করা বা বিচার করা হতে পারে, যেমন- জনসমক্ষে কথা বলা, নতুন লোকের সাথে দেখা করা, ডেটিং করা, চাকরির ইন্টারভিউতে থাকা, ক্লাসে একটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া , অথবা একটি দোকানে একজন ক্যাশিয়ারের সাথে কথা বলতে হচ্ছে সেসময় ৷ এমনকি দৈনন্দিন জিনিসগুলি করার সময়, যেমন অন্যদের সামনে খাওয়া বা পান করা বা পাবলিক বিশ্রামাগার ব্যবহার করা, সেসময় গুলোতে অপমানিত, বিচার এবং প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ভাবনা তার মাঝে বিপুল পরিমাণ উদ্বেগের সৃষ্টি করতে পারে।
আপনার মনে হতে পারে এমন রোগ হয়তো খুব বিরল কিন্তু তা আসলে সঠিক নয়। এটি একটি খুব প্রচলিত সমস্যা যা সাধারণত কিশোর বয়সেই শুরু হয়ে যায়, এবং এটি ঐ ব্যক্তির জন্যে ভীষণ কষ্টদায়ক। এ টি তার জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে, যেমন: বন্ধু তৈরির সময়, নতুন পরিবেশে নতুন মানুষের সাথে আলাপচারিতার সময়, নতুন যেকোন সম্পর্ক তৈরি ও তা ধরে রাখতে, এছাড়া যৌন স্বাস্থ্যেও বড় ধরনের বিরূপ প্রভাব ফেলে থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বয়স বাড়ার সাথে সাথে এটি যদিও কিছুটা উন্নতি হতে পারে, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি চিকিৎসা ছাড়া নিজে থেকে ভালো হয়ে যায় না।
সম্পর্ক তৈরির জন্যে আলাপচারিতা শুরু করা, শারীরিক বন্ধুসুলভ আচরণ ও স্বাচ্ছন্দে মনের ভাবের আদানপ্রদানের দক্ষতা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। একটি সফল সম্পর্কের মূল ভিত্তি হলো একে অপরের উপর ভরসা ও নির্ভয় নির্ভরশীলতা। সোশ্যাল ফোবিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির জন্যে এটিই দুরূহ হয়ে দাঁড়ায়। সে মানুষটি এসবের কোনটিই স্বাচ্ছন্দে করতে পারে না। দেখা যায় নতুন মানুষের সাথে আলাপচারিতার সময় সামাজিক উদ্বেগজনিত ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তি তার গালে গরম ভাপ বা ব্লাশ অনুভব করেন, সে খুব ঘামতে থাকেন, এবং হাতে পায়ে কাঁপুনি অনুভব করেন, তার বুক ধড়ফড় করতে থাকে, সে কথা বলার ভাষা খুঁজে পান না, মুখ শুকিয়ে যায় এবং তিনি পেটে অস্বস্তি বোধ করে। যার কারণে সে ব্যক্তির সাথে অপর মানুষটির ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। এর ফলে, তার সাথে অন্যের নতুন সম্পর্ক তৈরি হয় না, অথবা পুরোনো সম্পর্কও ভেঙ্গে যেতে পারে।
অ্যাংজাইটি বা উদ্বেগের সাথে বসবাস করার অর্থ, সাধারণত আপনি যেখানেই যান না কেন, এটি সবসময়ই আপনার সাথে থাকে। যা একজন ব্যক্তির মানসিক এবং শারীরিক দুইক্ষেত্রেই প্রভাব ফেলে। সুতরাং, এর মানে আপনার যৌন সম্পর্ককেও এটি প্রভাবিত করে। সোশ্যাল ফোবিয়া বা সোশ্যাল অ্যাংজাইটি, ভয়, উত্তেজনা এবং অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে। এমনকি আপনি যখন কাউকে ভালবাসেন এবং যৌন সম্পর্কে জড়াতে আগ্রহী হন, তখনও এটি আপনার রোমান্টিক মুহুর্তগুলোর মাঝে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
গবেষনায় দেখা গেছে, উদ্বেগের কারণে কাম শক্তি বা যৌন শক্তি কমে যেতে পারে। আপনি যখন উদ্বিগ্ন হন, তখন আপনার শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন যেমন: কর্টিসলের মাত্রা অনেক বেশি থাকে। (কর্টিসল হলো আপনার শরীরের প্রধান স্ট্রেস হরমোন)। কর্টিসলের উচ্চ মাত্রা যৌন হরমোনগুলির মাত্রা কমিয়ে দেয়, যা যৌন ইচ্ছাকে প্রভাবিত করে। এমনকি আপনি হয়তো যৌন চাহিদা অনুভব করছিলেন, কিন্তু পার্ফরমেন্সের সময় এই অ্যাংজাইটি সে মুহুর্তকে নষ্ট করে দিতে পারে। এমনকি এই উদ্বেগ আপনাকে অন্তরঙ্গ হতে পর্যন্ত বাঁধা দিতে পারে।
একজন মানুষ যখন অ্যাংজাইটি বা আতঙ্কে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন, তখন এটির জন্যে সে শারীরিক বা মানসিকভাবে তার সঙ্গীর কাছাকাছি থাকতে চান না। এটি অত্যন্ত জটিল আকার ধারণ করতে পারে যার অতীত ট্রমা বা অপ্রীতিকর মুহুর্তের স্মৃতি রয়েছে। এটি সেই মানুষটির শরীরকে এমনভাবে আচ্ছন্ন করে ফেলতে পারে যে, তার জন্যে যৌন স্পর্শ এবং যৌনতার অভিজ্ঞতার আনন্দ উলটো অস্বস্থি ও ভীতির সঞ্চার করে।
সোশ্যাল ফোবিয়া বা সামাজিক ফোবিয়া অর্গাজম এও বাঁধা হতে পারে। উদ্বেগের শারীরিক উপসর্গ যেমন মাংশপেশী শক্ত বা টানটান অনুভব করা, দ্রুত শ্বাস নেওয়া, হালকা মাথাব্যথা এবং ঘন ঘন শ্বাস নেয়া এগুলোর ফলে সে ব্যক্তিটি রিলাক্স বা আরাম করতে পারেন না। এটি স্ট্রেস হরমোনের উৎপাদন বৃদ্ধি করে এবং এ কারণে একজন মানুষ, সেক্স বা অন্তরঙ্গ মুহুর্তে অর্গাজম বা ক্লাইম্যাক্সে পৌঁছাতে সক্ষম হন না।