অনেক সময় সাধারণ বিষণ্ণতা ভেবে আমরা অনেক জটিল মানসিক রোগকে অবহেলা করি যা পরবর্তীতে আমাদের চরম ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কিছু বিষয় খেয়াল রাখলে সহজেই বোঝা সম্ভব হবে যে আপনি শুধু বিষণ্ণতায়ই ভুগছেন নাকি সমস্যা এর থেকে বেশী কিছু।
অনেক সময় জীবনে এমন অনেক কিছুই ঘটে যা আমাদের মানসিক চাপ, মনকষ্ট, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি বাড়িয়ে দেয়। সব সময়ই মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখা হয়তো সম্ভব হয়না। এটা আমাদের জীবনের অন্যান্য দশটা ঘটনা বা অনুভূতি গুলোর মতোই সাধারণ। কিন্তু সর্বদা পারিপার্শ্বিক সমস্যার কারণেই যে আমাদের মাঝে বিষণ্ণতা বা মানসিক উদ্বেগ সৃষ্টি হয় তেমনটি কিন্তু নয়। মানসিক উদ্বেগ বা বিষণ্ণতা হতে পারে কোন মানসিক জটিলতা বা রোগের লক্ষণ যা সঠিকভাবে চিহ্নিত করা এবং যার পেশাদারী চিকিৎসার প্রয়োজন। কিছু কিছু লক্ষণ বা বিষয় খেয়াল রাখলে বেশ সহজভাবেই সাধারণ বিষণ্ণতা এবং মানসিক জটিলতা চিহ্নিত করা যায়।
১) মৃত্যু নিয়ে অতিরিক্ত ভাবনা বা আত্মহত্যা প্রবণতা
এটা কখনোই স্বাভাবিক ঘটনা হতে পারেনা যে, আপনার মাঝে কোন মানসিক চাপ থাকার দরুন আপনি সর্বক্ষণ মৃত্যু নিয়ে ভাববেন বা আত্মহত্যার পথে ধাবিত হবেন। এ ধরণের চিন্তা ভাবনা এমন রূপ নিতে পারে যে আপনি আপনার জীবনে আর কোন সকাল দেখতে চাইছেন না। হয়তো ভাবছেন আপনাকে ছাড়াই আপনার পরিবার ভালো থাকবে। মৃত্যু হয়তো এখন আপনার একান্ত কাম্য একটি বিষয় যা আত্মহননের মাধ্যমে হলেও আপনি পেতে চান। আপনি হয়তো ভাবছেন এর মাধ্যমেই একমাত্র আপনার সব সমস্যার সমাধান হয়ে যেতে পারে। কারও মাঝে যদি এমন মনোভাব এবং চিন্তা ভাবনার উদ্রেক হয় তবে ধরে নিতে হবে এটি তার কোন স্বাভাবিক মানসিক চাপ বা বিষণ্ণতা নয়। বরং জটিল মানসিক সমস্যা। যার আশু সমাধান প্রয়োজন।
২) জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ পতন
মানসিক চাপ বা বিষণ্ণতা যদি আপনার জীবনের স্বাভাবিক গতি পথে বাঁধার সৃষ্টি করে তাহলে অবশ্যই সেটি নিয়ে আলাদা করে ভাবা প্রয়োজন। সাধারণ দুশ্চিন্তা বা অবসাদ আপনাকে কখনোই অতি মাত্রায় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত, দুঃখিত, অবসন্ন, বা অনুপ্রেরণা হীন করে দেয়না যা আপনার দৈনন্দিন জীবনে, স্বাভাবিক কাজকর্মে বাঁধা সৃষ্টি করে বা আপনার মনের ইচ্ছে গুলোকে মেরে ফেলে। যেমন, হয়তো অস্বাভাবিক ভাবে আপনার পড়াশুনায় অমনোযোগ এবং খারাপ ফলাফল বা খুব সামাজিক জীবন যাপন করা আপনি হয়তো কারও সাথে মিশতেই চাইছেন না, কোন কিছুতেই মনোযোগ দিতে পারছেন না ইত্যাদি। স্বাভাবিক জীবনে এবং মন মানসিকতায় এমন পরিবর্তন অবশ্যই বিশেষ চিকিৎসার দাবীদার।
৩) দীর্ঘস্থায়ী ক্ষুধামন্দা
মন খারাপ থাকলে বা মানসিক চাপ কাজ করলে এটা স্বাভাবিক যে ক্ষুধামন্দা দেখা দিতে পারে। কিন্তু এই সমস্যা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় তাহলে অবশ্যই সেটি উদ্বেগের বিষয়। যদি দেখা যায় যে, আপনার মধ্যে এই কিছু খেতে ভালো না লাগা সমস্যা প্রায়শই এবং দীর্ঘস্থায়ী সময় ধরে চলছে এবং ওজনের বিশেষ হ্রাস বৃদ্ধি ঘটছে তাহলে অবশ্যই এটাই উপযুক্ত সময় একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেবার।
৪) দীর্ঘস্থায়ী নিদ্রাহীনতা
প্রতি দিন সমান ঘুম হবে এটি আশা করা ভুল বিশেষত তখন যখন আপনি মানসিকভাবে বিচলিত থাকেন। কিন্তু যদি এমন হয় যে দীর্ঘদিন আপনি এমন ঘুমোতে পারছেন না, অনেক রাতেও ঘুম আসছেনা তাহলে অবশ্যই সেটি কোন মানসিক রোগ বা সমস্যার কারণে হতে পারে।
৫) সমস্যা সমাধানে অনুচিত উপায় অবলম্বন
আমাদের সবারই মানসিক চাপ এবং বিষণ্ণতার সাথে লড়াই করার পদ্ধতি আলাদা আলাদা। আমরা মেডিটেশন করি, শরীর চর্চা করি, গান শুনি, বন্ধুদের মনের কথা খুলে বলি, বা চুপচাপ থাকি। কিন্তু এই মোকাবেলা করার পদ্ধতি যদি ধ্বংসাত্মক স্বভাবে রূপ নেয়, তাহলে আপনার জীবনে ধ্বংসের শুরু হবার আগেই এসব সমস্যাকে ধ্বংস করা প্রয়োজন। এসব নেতিবাচক এবং ধ্বংসাত্মক প্রবণতা দূর করতে অবশ্যই অন্তর্নিহিত মানসিক জটিলতার সমাধান করা প্রয়োজন।
এমন নয় যে একজন মানসিক সমস্যায় ভোগা ব্যক্তির মাঝে উপর বর্ণিত সব লক্ষণ ই পরিলক্ষিত হবে। মানসিক সমস্যা বিভিন্ন রূপ নিতে পারে এবং বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে বিশেষজ্ঞের সহায়তা প্রয়োজন। এমনটা ভাববেন না আপনার কাছেই সব সমস্যার সমাধান থাকবে। কিছু কিছু সময়ে বিশেষ গুরুত্বের সাথে বিশেষ উপায়ে সমস্যা গুলিকে নিবারণের প্রচেষ্টা করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
সূত্র: https://www.psychologytoday.com/intl/blog/erasing-stigma/202011/is-it-stress-or-something-more
অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে