সমালোচনা আর নেতিবাচক মন্তব্য কি এড়িয়ে চলা যায়?

জীবন যখন আছে তাতে সমালোচনাও থাকবে। আপনি ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার; প্রতিদিন জিম করেন বা সাত দিন শুয়ে বসে কাটান; বেশি সন্তানের বা সন্তান না নেয়া ভাল মনে করেন – আপনি যাই করেন না কেন কেউ না কেউ সমালোচনা করার জন্য ঠিকই ওঁত পেতে বসে থাকবে।
প্রতিদিনের বিচরনে আপনি অনেক মানুষ দেখবেন যারা নিজ জীবনের হতাশা, অনিশ্চয়তা এবং ভয় গুলো অন্যের মাঝে প্রবেশ করিয়ে হালকা হবার অবকাশ খুঁজছে।
উপরের কথাগুলো মাথায় রেখে আমরা আজ জানার চেষ্টা করব কিভাবে এই নেতিবাচক সমালোচনা ফেইস করা যায়, অর্থাৎ অন্যরা যখন আমাদের সমালোচনা করবে – কিভাবে তা মোকাবেলা করে হাসিমুখে এগিয়ে যাওয়া যায়।
আমরা ভাবি যে সব সমালোচনা বুঝি বাইরের মানুষ করে। কথাটা সত্য নয়। আমরা খেয়াল করলে দেখব যে আমাদের অধিকাংশ সমালোচনা আমরা নিজেরাই করি। নিজের কথা, নিজের ব্যক্তিগত চিন্তা ভাবনা, ব্যক্তিগত উদ্যোগ মানুষকে বলতে আমরা সংকোচ বোধ করি। কোনো নতুন জিনিস শুরু করতে আমরা ভয় পাই – পাছে লোকে কিছু বলে? অন্যদের কাছে আমার মূল্যায়ন কেমন হচ্ছে এটা নিয়ে ভেবে ভেবেই আমরা জীবনের অনেক মূল্যবান কাজ করতে পারি না বা করতে পারলেও অনেক সময় নষ্ট করে ফেলি। তাই ভাল কিছু, বড় কিছু এবং নতুন কিছু করতে হলে সবার আগে নিজ মনের বাঘটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা শিখতে হবে। কিভাবে করব সেটি?
অনেক মানুষের সারা জীবন চলে যায় বুঝতে যে নেতিবাচক মন্তব্য যারা করে তারা এজন্য করে না যে তারা আপনার কাজ নিয়ে ঈর্ষান্বিত বা এটা নিয়ে চিন্তা করে তাদের ঘুম হারাম হচ্ছে। তারা এটা অভ্যাসবশত করেন, অতঃপর নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যান। আমাদেরকেও ঠিক তেমনি নেতিবাচক কথা গুলো পাত্তা না দিয়ে নিজ কাজ করে যেতে হবে।
অনেকের মতে সর্বকালের সেরা রেসিং ড্রাইভার ছিলেন মারিও অ্যান্ডরটি। Success ম্যাগাজিন তার সাক্ষাতকার নেবার সময় জানতে চেয়েছিল তার সাফল্য লাভের মূলমন্ত্র কি। তিনি তাদের বলেছিলেন, “গাড়ি চালানোর সময় রাস্তার পাশের দেয়ালগুলোর দিকে না তাকানো, সামনের রাস্তার দিকে শুধু মনোযোগ দেয়া, কারণ যেদিকে তাকানো হবে সেদিকেই মন চলে যাবে’।
মারিও এই উপদেশ দিয়েছিলেন তরুন রেসারদের জন্য। কিন্তু আমরা আমাদের জীবন, কাজ এবং নেতিবাচক কথা মোকাবেলাতেও এই কথা মনে রাখতে পারি। জীবনে চলার পথে নেতিবাচক কথা আসবেই, কিন্তু আমাদের ফোকাস থাকবে মুল লক্ষের দিকে (রাস্তার দিকে), নেতিবাচকতার (দেয়াল) দিকে নয়। যখনই কেউ খারাপ কথা বলবে, ঘৃণা করবে, আহত করবে ঠিক তখনই আমরা এটাকে সিগন্যাল হিসেবে নিব এবং মূল কাজে আরও গভীরভাবে মনোনিবেশ করব। আমরা তো জেনেছি যে মানুষ অভ্যাসবশত এটা করছে, তাই আমার অভ্যাসও যেন হয় তাকে পাত্তা না দেবার।
গবেষণায় দেখা যায় সাধারণভাবেই নেতিবাচক আলোচনা এবং নেতিবাচক ঘটনাকে আমরা মস্তিষ্কে বেশি জমা করি। ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভারসিটির এক পরীক্ষায় দেখা গেছে যে আমাদের জীবনের একটি নেতিবাচক ঘটনা মস্তিষ্ক থেকে সরানোর জন্য ৯৮৫ টি পজিটিভ ঘটনার প্রয়োজন হয়। আমরা আমাদের মন খারাপ হওয়ার অভিজ্ঞতা গুলো মনে রাখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। এমনকি সুখী মানুষরাও খারাপ অভিজ্ঞতা বেশি মনে রাখেন – বলেন গবেষণা দলের সদস্যরা। কিন্তু এ থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে।
মানুষ যখন আপনাকে ঘৃণা করবে আপনি রেগে না যেয়ে তার মন জয় করার চেষ্টা করুন। তাকে ধন্যবাদ দিন আপনার সমালোচনা করার জন্য। তাকে স্পেইস দিন। বেশিরভাগ মানুষ আপনার কাজ কেমন ভাল বা উন্নত তা নিয়ে ভাবে না, তারা শুধু গুরুত্ব চায়। তাদের গুরুত্ব দিন। খারাপ কথার প্রতিবাদে আপনি বিনয়ী হন। টেবিল টা ঘুরিয়ে দিন। দেখবেন ঘৃণাকারী অচিরেই আপনার ভক্ত হয়ে যাবে।
সংক্ষেপে যদি আমরা আলোচনা শেষ করতে চাই তাহলে আমরা বলব যে মূলত ৪ টি কাজ করলে আমরা নেতিবাচক আলোচনা সহ্য করতে পারব –
# নিজে যেন কাওকে ঘৃণা না করি। যে সকল মানুষ নতুন চিন্তা এবং কাজ নিয়ে পৃথিবীকে আরও সুন্দর করার প্রচেষ্টায় লিপ্ত তাদের কাজটি কঠিন। এই কাজ গুলোতে আমাদের উৎসাহ দিতে হবে।
# নেতিবাচক সমালোচনাকে পাত্তা না দিয়ে মূল কাজ এর দিকে মনোযোগ দিতে হবে। ভাল কাজে সমালোচনা থাকবেই। এই সমালোচনা যেন আমাকে মূল লক্ষ্য থেকে ফোকাস সরিয়ে না দেয়।
# নেতিবাচক কথার প্রতিবাদে বিনয় দেখাব,রেগে যাবনা।
# আপনার যা ভাল মনে হয় তা আপনি করবেন- যে যাই বলুক আপনি করে যাবেন – কারণ আপনি যাই করেন না কেন মানুষ আপনার সমালোচনা করবেই।


প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না কর্তৃপক্ষ।

Previous articleশিশু লালন পালনে বাবার ভূমিকা
Next articleমানসিক রোগের চিকিৎসা অবদান রাখবে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here