আমি আমার বাস্তব অভিজ্ঞতার কিছু বিষয় উদাহরণ স্বরুপ তুলে ধরছি যা বর্তমানে কোভিড-১৯ এর লকডাউনে আমাদের পারিবারিক নানান সমস্যার ফলে কিছু কিছু সম্পর্কের ভয়াবহ অবনতি কে বুঝতে সহায়তা করবে ।
মা দিবসের ঠিক আগের দিন থেকে আমার মায়ের মনটা প্রচুর খারাপ। মাঝেমাঝে কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন! বলছিলেন, মানুষের কিছু নেতিবাচক আচরণ মন থেকে কিছুতেই ভুলতে পারছেন না, আমাকে তাঁর বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে পারলে বুকের ভিতরে হালকা লাগবে।
মাকে সময় দিচ্ছিলাম। মা দিবসের সকাল দশটা হঠাৎ আমার আবার একটা লাইভ প্রোগ্রাম করার ফোন এলো। আমার কেবলই মনে হচ্ছিলো; মায়ের মনটা সুস্থ করা, মনে শান্তি ফিরিয়ে দেয়া এই মূহুর্তে আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
জীবনে বেঁচে থাকলে আর মহান আল্লাহ সহায় থাকলে অনেক কিছু আসতে পারে। কিন্তু, মায়ের মনের কথা গুলো মনোযোগ দিয়ে শোনা, মায়ের মনের কাছাকাছি থাকাকে যদি আজ আমি অবহেলা করি তাহলে কোন একদিন আমাকে আমার নিজের মনের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে একা একা চোখের পানি ফেলতে হবে। তাছাড়া নিজের পারিবারিক সমস্যা রেখে লাইভ প্রোগ্রামে বসে সুন্দর সুন্দর কথা বলতে আমার মন আমাকে অনুমতি দিলো না।
অনার্স ৩য় বর্ষ এর মাঝামাঝিতে পছন্দের মানুষটির সাথে পারিবারিক ভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলাম। বছর দুই পেরোতেই পরিবারের কিছু স্বজনদের বাচ্চা আসা আর না আসা নিয়ে শুরু হয় নেতিবাচক নানা রঙের কথোপকথন।
এম. এস শুরুতে যখন কনসিভ করলাম তখন উক্ত দলের গানের সুর অন্য দিকে সুর নিল, যেমন: এম. এস কমপ্লিট আর হইছে , এম.এস ছাড়া খালি অনার্সের কোন দাম আছে ইত্যাদি ।
কনসিভ এর কিছুটা সময় পেড়িয়ে হঠাৎ মিসকারেজ । সেই সময়ে আমার ভেঙ্গে যাওয়া স্বপ্ন ও মাতৃত্ব বোধ, অনুভূতি গুলো যখন আমাকে মানসিকভাবে ভীষণ কষ্ট দিচ্ছিল ঠিক সেই মুহূর্তে উক্ত দলের সদস্যবৃন্দ আমাকে ক্লিনিকে দেখতে আসার নামে আমার মনের আগুনে খুব যত্ন করে ঘি ঢালতেন। এমন অবস্থায় আমার কেবলই মনে হয়েছিল একটা পশুও মনে হয় মানুষের কষ্টে কষ্ট পায়।
আল্লাহর রহমতে আমার কোল আলোকিত করে এলো আমার কন্যা সন্তান। সন্তানের অতিরিক্ত যত্ন, সন্তানকে কোয়ালিটি টাইম দেয়া, ইত্যাদি নিয়ে একটি দলের নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশে কমতি নেই।
ভুক্তভোগী মানুষটির কষ্ট আমি ততোখন পর্যন্ত উপলব্ধি করতে পারবো না, যতক্ষণ না আমি নিজে ভুক্তভোগী মানুষটির জায়গায় নিজেকে ভাবতে পারবো।
ভবিষ্যতে পারিবারিক ভোট করার কোনো ইচ্ছে আমার নেই। তাই, পরিবারের কোনো কোনো সদস্য আমাকে অপছন্দ করলো বা পছন্দ করলো তা নিয়ে আমি মোটেও উদ্বিগ্ন নই। আর উদ্বিগ্ন না হওয়াই একজন সুস্থ মনের মানুষের পরিচয় ।
বছর দুই একটি নামকরা ইংলিশ ভার্সন স্কুল এ্যান্ড কলেজে জব করলাম। সন্তানকে সময় দেয়ার জন্য জব ছেড়েও দিলাম। জব যখন করলাম আর যখন ছাড়লাম উভয় পরিস্থিতিতেই উক্ত দলের মানুষ গুলোর নেতিবাচক কথা আর প্রশ্নের শেষ নাই। যেমন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এতো লেখাপড়া করে কি আর হইলো সেই তো হাউজ ওয়াইফ ইত্যাদি ইত্যাদি ।
একটা সময় আমার সন্তান বুঝতে শিখলো আর তার বাবার ডিগ্রী কমপ্লিট হলো । আমি আবার অনেক পড়াশোনা , ট্রেইনিং , কাজ শুরু করলাম । সেখানে ও থেমে রইলো না উক্ত দল টির নেতিবাচক মন্তব্য । যেমন – অহংকার বাড়ছে , এমন সাইকোলজিস্ট , ট্রেইনিং , লাইভ প্রোগ্রাম , লেখালেখি কোনো ব্যাপারই নয় সবাই করতে পারে ইত্যাদি ইত্যাদি ।
নেতিবাচক মনোভাব ও আচরণ পরিবার থেকে শুরু করে চলার পথে প্রায় ব্যক্তি বিশেষে দেখা যায়। আমার কাছে আমার নিজের আচরণ ও মনোভাবকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিবর্তন করার চেষ্টা চালানো যতোটা সহজ হবে, অন্যের আচরণ নিয়ন্ত্রণ বা পরিবর্তনে তা ততোটা সহজ হবে না। যতখন পর্যন্ত অন্য মানুষটি তাঁর নিজের মনোভাব ও আচরণ সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠবেন না।
বর্তমান ডিজিটাল সময়ে এসে ও আমাদের সমাজে মেয়েরা এখনো অন্ধকারে একাএকা চোখের পানি ফেলে । “মা” ডাকটি শোনার জন্য যে মেয়েটি তার বুকে বিশাল সমুদ্র কষ্ট নিয়ে আশার আলোর সন্ধান করে, স্বপ্ন দেখে তাকেও এই সমাজের কিছু মানুষ বন্ধ্যা /বাজা বলতে দ্বিধা বোধ করে না। মেয়েদের প্রতি পদে পদে নিজের সাথে নিজের যুদ্ধ করে নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার চরম চেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়।
ডিজিটাল সমাজের কিছু কিছু ডিজিটাল মানুষ সব সময়ই নিজেকে বেশ সামাজিক মনে করে। তাদের নিজেদের দোষগুলো নিজের কাছে ধরা দেয় না অথচ অন্যদের বেলা দোষ খুঁজতে তাঁরা সদা প্রস্তুত । যেমন – ঈদের দিন রাত এ.টি.এন বাংলা তে হানিফ সংকেতের নাটক “দূরত্বের গুরুত্ব” নাটকে অভিনেতা আজিজুল হাকিম যে চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন । এই ধরণের মানুষ গুলোর জন্য সত্যি আমার বড় লজ্জা হয়।
টেকনোলজি কতটা এগিয়েছে তা কোভিড -১৯ এর সময়ে এসে সবাই এর মর্ম উপলব্ধি করছি । আমাদের নিজেদের চিন্তা , চেতনার বহিঃপ্রকাশ, মন মানসিকতা এগুলো কি অদৌ ডিজিটালাইজড হয়েছে? তাহলে মোবাইল অপশনে গিয়ে লাইক বাটনে টাচ করবো নাকি ইগনোর করবো তা ভাবায় কেন!
বর্তমানে কোভিড -১৯ এর এই লকডাউন সময়ে আমাদের কম বেশি পরিবার গুলোতে পারিবারিক সমস্যা গুলো দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। যেখানে রিয়েল সেলফ আর আইডিয়াল সেলফ এর মধ্যে এত অমিল সেখানে ঝামেলা আর সমস্যা তো থাকবে।
রিয়েল সেলফ হলো – আমার আমি কে প্রত্যক্ষণকৃত নিজ সত্ত্বা, যেখানে প্রচুর হিঃসা থাকে। এই রিয়েল সেলফে আমি আমাকে পছন্দ করি না। আইডিয়াল সেলফ হলো – আমি আমাকে কেমন দেখতে চাই। আমি আমাকে হিংসায় দেখতে চাই না, আমি আমাকে এভাবে দেখতে চাই।
আমি যদি নিজে ভালো ও মানসিক ভাবে সুস্থ থাকতে চাই এবং পরিবারের সুস্থ সম্পর্ক গুলো কে অসুস্থতার দিকে ধাবিত হওয়া থেকে বিরত রাখতে চাই তাহলে আমার ধৈর্য্য ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে, শ্বাস প্রশ্বাসের বায়াম করতে পারি, মাইনডফুলনেস প্রাকটিস করতে পারি, শরীর চর্চা করতে পারি, সৃষ্টিকর্তার নিকট বেশি বেশি প্রার্থনা করতে হবে।
মাঝেমাঝে ভাবি আমি সাইকোলজিস্ট এর বাইরে বড় সত্য সব কিছুর আগে আমি একজন রক্ত মাংসে আল্লাহর তৈরি মানুষ। আল্লাহ আমার বুদ্ধি,বিবেচনা,বিবেক,বোধশক্তি, চিন্তা করার ক্ষমতা দিয়েছেন সেগুলো কে কাজে লাগিয়ে আমি আমার সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করতে পারি।
ঘরে ঘরে সমস্যা,মেনটাল ইলনেস,সাইকোটিক মানসিকতার মাঝে আমাদের বসবাস। সেখানে ক্লায়েন্টকে কাউন্সিলিং বা সাইকোথেরাপি দিতে যাবার আগে আমি আমার আমিকে প্রশ্ন করি আমি নিজে কতটুকু মানসিকভাবে সুস্থ? নিজের যদি এত চাপ থাকে তবে আমি ক্লায়েন্টকে তার চাপ থেকে বের হবার বেশ কয়েকটি পথ খুঁজে বের করতে এবং নিজের সমস্যা সমাধানের সিদ্ধান্ত ক্লায়েন্টকে কে নিজেই নিতে কেমনে সাহায্য করবো?
বর্তমান অবস্থায় , লেখক লিখলাম তো, লেখা পর্যন্তই। পাঠক পড়লেন, হয়তো পড়া পর্যন্তই। কতটুকু দিতে পারলাম আর কতটুকুই বা নিতে পারলাম তা নিয়েও আমাকে বা আপনাকে ভেবে দেখতে হবে, আমার আমি-র- সাথে বা আপনি আপনার নিজের আমি-র- সাথে।
লেখক: আয়শা আখতার বানু , সাইকোলজিস্ট , মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগ , রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন
মা দিবসের ঠিক আগের দিন থেকে আমার মায়ের মনটা প্রচুর খারাপ। মাঝেমাঝে কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন! বলছিলেন, মানুষের কিছু নেতিবাচক আচরণ মন থেকে কিছুতেই ভুলতে পারছেন না, আমাকে তাঁর বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে পারলে বুকের ভিতরে হালকা লাগবে।
মাকে সময় দিচ্ছিলাম। মা দিবসের সকাল দশটা হঠাৎ আমার আবার একটা লাইভ প্রোগ্রাম করার ফোন এলো। আমার কেবলই মনে হচ্ছিলো; মায়ের মনটা সুস্থ করা, মনে শান্তি ফিরিয়ে দেয়া এই মূহুর্তে আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
জীবনে বেঁচে থাকলে আর মহান আল্লাহ সহায় থাকলে অনেক কিছু আসতে পারে। কিন্তু, মায়ের মনের কথা গুলো মনোযোগ দিয়ে শোনা, মায়ের মনের কাছাকাছি থাকাকে যদি আজ আমি অবহেলা করি তাহলে কোন একদিন আমাকে আমার নিজের মনের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে একা একা চোখের পানি ফেলতে হবে। তাছাড়া নিজের পারিবারিক সমস্যা রেখে লাইভ প্রোগ্রামে বসে সুন্দর সুন্দর কথা বলতে আমার মন আমাকে অনুমতি দিলো না।
অনার্স ৩য় বর্ষ এর মাঝামাঝিতে পছন্দের মানুষটির সাথে পারিবারিক ভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলাম। বছর দুই পেরোতেই পরিবারের কিছু স্বজনদের বাচ্চা আসা আর না আসা নিয়ে শুরু হয় নেতিবাচক নানা রঙের কথোপকথন।
এম. এস শুরুতে যখন কনসিভ করলাম তখন উক্ত দলের গানের সুর অন্য দিকে সুর নিল, যেমন: এম. এস কমপ্লিট আর হইছে , এম.এস ছাড়া খালি অনার্সের কোন দাম আছে ইত্যাদি ।
কনসিভ এর কিছুটা সময় পেড়িয়ে হঠাৎ মিসকারেজ । সেই সময়ে আমার ভেঙ্গে যাওয়া স্বপ্ন ও মাতৃত্ব বোধ, অনুভূতি গুলো যখন আমাকে মানসিকভাবে ভীষণ কষ্ট দিচ্ছিল ঠিক সেই মুহূর্তে উক্ত দলের সদস্যবৃন্দ আমাকে ক্লিনিকে দেখতে আসার নামে আমার মনের আগুনে খুব যত্ন করে ঘি ঢালতেন। এমন অবস্থায় আমার কেবলই মনে হয়েছিল একটা পশুও মনে হয় মানুষের কষ্টে কষ্ট পায়।
আল্লাহর রহমতে আমার কোল আলোকিত করে এলো আমার কন্যা সন্তান। সন্তানের অতিরিক্ত যত্ন, সন্তানকে কোয়ালিটি টাইম দেয়া, ইত্যাদি নিয়ে একটি দলের নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশে কমতি নেই।
ভুক্তভোগী মানুষটির কষ্ট আমি ততোখন পর্যন্ত উপলব্ধি করতে পারবো না, যতক্ষণ না আমি নিজে ভুক্তভোগী মানুষটির জায়গায় নিজেকে ভাবতে পারবো।
ভবিষ্যতে পারিবারিক ভোট করার কোনো ইচ্ছে আমার নেই। তাই, পরিবারের কোনো কোনো সদস্য আমাকে অপছন্দ করলো বা পছন্দ করলো তা নিয়ে আমি মোটেও উদ্বিগ্ন নই। আর উদ্বিগ্ন না হওয়াই একজন সুস্থ মনের মানুষের পরিচয় ।
বছর দুই একটি নামকরা ইংলিশ ভার্সন স্কুল এ্যান্ড কলেজে জব করলাম। সন্তানকে সময় দেয়ার জন্য জব ছেড়েও দিলাম। জব যখন করলাম আর যখন ছাড়লাম উভয় পরিস্থিতিতেই উক্ত দলের মানুষ গুলোর নেতিবাচক কথা আর প্রশ্নের শেষ নাই। যেমন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এতো লেখাপড়া করে কি আর হইলো সেই তো হাউজ ওয়াইফ ইত্যাদি ইত্যাদি ।
একটা সময় আমার সন্তান বুঝতে শিখলো আর তার বাবার ডিগ্রী কমপ্লিট হলো । আমি আবার অনেক পড়াশোনা , ট্রেইনিং , কাজ শুরু করলাম । সেখানে ও থেমে রইলো না উক্ত দল টির নেতিবাচক মন্তব্য । যেমন – অহংকার বাড়ছে , এমন সাইকোলজিস্ট , ট্রেইনিং , লাইভ প্রোগ্রাম , লেখালেখি কোনো ব্যাপারই নয় সবাই করতে পারে ইত্যাদি ইত্যাদি ।
নেতিবাচক মনোভাব ও আচরণ পরিবার থেকে শুরু করে চলার পথে প্রায় ব্যক্তি বিশেষে দেখা যায়। আমার কাছে আমার নিজের আচরণ ও মনোভাবকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিবর্তন করার চেষ্টা চালানো যতোটা সহজ হবে, অন্যের আচরণ নিয়ন্ত্রণ বা পরিবর্তনে তা ততোটা সহজ হবে না। যতখন পর্যন্ত অন্য মানুষটি তাঁর নিজের মনোভাব ও আচরণ সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠবেন না।
বর্তমান ডিজিটাল সময়ে এসে ও আমাদের সমাজে মেয়েরা এখনো অন্ধকারে একাএকা চোখের পানি ফেলে । “মা” ডাকটি শোনার জন্য যে মেয়েটি তার বুকে বিশাল সমুদ্র কষ্ট নিয়ে আশার আলোর সন্ধান করে, স্বপ্ন দেখে তাকেও এই সমাজের কিছু মানুষ বন্ধ্যা /বাজা বলতে দ্বিধা বোধ করে না। মেয়েদের প্রতি পদে পদে নিজের সাথে নিজের যুদ্ধ করে নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার চরম চেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়।
ডিজিটাল সমাজের কিছু কিছু ডিজিটাল মানুষ সব সময়ই নিজেকে বেশ সামাজিক মনে করে। তাদের নিজেদের দোষগুলো নিজের কাছে ধরা দেয় না অথচ অন্যদের বেলা দোষ খুঁজতে তাঁরা সদা প্রস্তুত । যেমন – ঈদের দিন রাত এ.টি.এন বাংলা তে হানিফ সংকেতের নাটক “দূরত্বের গুরুত্ব” নাটকে অভিনেতা আজিজুল হাকিম যে চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন । এই ধরণের মানুষ গুলোর জন্য সত্যি আমার বড় লজ্জা হয়।
টেকনোলজি কতটা এগিয়েছে তা কোভিড -১৯ এর সময়ে এসে সবাই এর মর্ম উপলব্ধি করছি । আমাদের নিজেদের চিন্তা , চেতনার বহিঃপ্রকাশ, মন মানসিকতা এগুলো কি অদৌ ডিজিটালাইজড হয়েছে? তাহলে মোবাইল অপশনে গিয়ে লাইক বাটনে টাচ করবো নাকি ইগনোর করবো তা ভাবায় কেন!
বর্তমানে কোভিড -১৯ এর এই লকডাউন সময়ে আমাদের কম বেশি পরিবার গুলোতে পারিবারিক সমস্যা গুলো দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। যেখানে রিয়েল সেলফ আর আইডিয়াল সেলফ এর মধ্যে এত অমিল সেখানে ঝামেলা আর সমস্যা তো থাকবে।
রিয়েল সেলফ হলো – আমার আমি কে প্রত্যক্ষণকৃত নিজ সত্ত্বা, যেখানে প্রচুর হিঃসা থাকে। এই রিয়েল সেলফে আমি আমাকে পছন্দ করি না। আইডিয়াল সেলফ হলো – আমি আমাকে কেমন দেখতে চাই। আমি আমাকে হিংসায় দেখতে চাই না, আমি আমাকে এভাবে দেখতে চাই।
আমি যদি নিজে ভালো ও মানসিক ভাবে সুস্থ থাকতে চাই এবং পরিবারের সুস্থ সম্পর্ক গুলো কে অসুস্থতার দিকে ধাবিত হওয়া থেকে বিরত রাখতে চাই তাহলে আমার ধৈর্য্য ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে, শ্বাস প্রশ্বাসের বায়াম করতে পারি, মাইনডফুলনেস প্রাকটিস করতে পারি, শরীর চর্চা করতে পারি, সৃষ্টিকর্তার নিকট বেশি বেশি প্রার্থনা করতে হবে।
মাঝেমাঝে ভাবি আমি সাইকোলজিস্ট এর বাইরে বড় সত্য সব কিছুর আগে আমি একজন রক্ত মাংসে আল্লাহর তৈরি মানুষ। আল্লাহ আমার বুদ্ধি,বিবেচনা,বিবেক,বোধশক্তি, চিন্তা করার ক্ষমতা দিয়েছেন সেগুলো কে কাজে লাগিয়ে আমি আমার সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করতে পারি।
ঘরে ঘরে সমস্যা,মেনটাল ইলনেস,সাইকোটিক মানসিকতার মাঝে আমাদের বসবাস। সেখানে ক্লায়েন্টকে কাউন্সিলিং বা সাইকোথেরাপি দিতে যাবার আগে আমি আমার আমিকে প্রশ্ন করি আমি নিজে কতটুকু মানসিকভাবে সুস্থ? নিজের যদি এত চাপ থাকে তবে আমি ক্লায়েন্টকে তার চাপ থেকে বের হবার বেশ কয়েকটি পথ খুঁজে বের করতে এবং নিজের সমস্যা সমাধানের সিদ্ধান্ত ক্লায়েন্টকে কে নিজেই নিতে কেমনে সাহায্য করবো?
বর্তমান অবস্থায় , লেখক লিখলাম তো, লেখা পর্যন্তই। পাঠক পড়লেন, হয়তো পড়া পর্যন্তই। কতটুকু দিতে পারলাম আর কতটুকুই বা নিতে পারলাম তা নিয়েও আমাকে বা আপনাকে ভেবে দেখতে হবে, আমার আমি-র- সাথে বা আপনি আপনার নিজের আমি-র- সাথে।
লেখক: আয়শা আখতার বানু , সাইকোলজিস্ট , মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগ , রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন