ভয় শিশুদের মানসিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাছাড়া ভীতিকর বা মানসিকভাবে পীড়াদায়ক স্মৃতি পরবর্তী জীবনে তার সাথে শুধু থেকেই যায় তা নয় বরং তার চিন্তা ভাবনা এবং আচার আচরণকেও প্রভাবিত করে।
অনেক পিতামাতা আছেন যারা তাদের সন্তানের ভীতু স্বভাব নিয়ে চিন্তিত। এসব শিশুরা খুব অল্পতেই আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং এই ভয় পাবার কারণে নিজের যোগ্যতা প্রমাণেও ব্যর্থ হয়। ফলে প্রতিযোগিতায় অন্য শিশুদের থেকে পিছিয়ে পড়ে।
তাছাড়া এসব শিশু প্রতিকূল অবস্থার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার বা সমস্যা সমাধানেও অসক্ষমতার পরিচয় দেয়। অর্থাৎ সামগ্রিক ভাবে তাদের মানসিক বিকাশ বাঁধাগ্রস্ত হয়। এ ধরণের শিশুদের নিয়ে তাদের পিতামাতা প্রায়শই খুব চিন্তিত হয়ে পড়ে আর এটি স্বাভাবিক।
তাই তাদের সমস্যার সমাধান করতে এবং একই সাথে শিশুদের এ ধরণের মানসিক দুর্বলতা দূর করতে মনস্তত্ত্ববিদগণ কি পরামর্শ প্রদান করেছেন সেগুলো সবার জানা প্রয়োজন।
শিশুদের মন থেকে অন্য ব্যক্তি বা বস্তু সম্পর্কে ভয় দূর করতে প্রথমে তাদের চিন্তা ভাবনা গুলোকে আগে ভালোভাবে বোঝার প্রয়াস করতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় শিশুরা সবার সাথে সমান ভাবে মিশতে পারছে না বা ভীত ও শঙ্কিত বোধ করছে।
যেমন ধরুন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহপাঠীদের সাথে মিশতে সমস্যা, পিতামাতা ভিন্ন অন্য যে কোন ব্যক্তি যেমন- স্কুল শিক্ষক, প্রতিবেশী, আত্মীয় বা পরিচিতদের সাথে মিশতে দ্বিধাবোধ করা, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান এড়িয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
আমরা প্রায়শই এ ধরণের সমস্যাকে শিশুর লজ্জা পাওয়া মনে করি। কিন্তু মনস্তত্ত্ববিদগণ বলছেন, এগুলো প্রকৃতপক্ষে শিশুর লাজুক মনোভাব নয় বরং তার শঙ্কা বোধ বা ভীতি। এ ধরণের অবস্থায় শিশু মনে মনে তার একটি নিজস্ব স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ গণ্ডি প্রস্তুত করে এবং সেই অনুসারে যাদেরকে বা যে অবস্থাকে নিরাপদ বলে মনে করে সেসব স্থানে বা ব্যক্তির সাথে স্বাভাবিক ভাবে মিশতে পারে।
আর যাদেরকে নিরাপদ মনে করে না তাদেরকে বা সেই অবস্থাকে ভয় পায় এবং এড়িয়ে যাওয়ার প্রয়াস করে। তাই তাদের মন থেকে যদি এই ভয় বা শঙ্কা দূর করতে হয়, তাহলে তাদেরকে কোনরূপ চাপ প্রয়োগ না করে তাদের এ ধরণের চিন্তা ভাবনায় পরিবর্তন নিয়ে আসতে সাহায্য করতে হবে।
সামাজিক উদ্বেগ বা ভীতিগ্রস্ত শিশুদের মানসিক এই সমস্যা দূর করতে কখনোই তার উপর কোন প্রকার চাপ প্রয়োগ বা কোন কাজে বাধ্য করা যাবে না। এতে তাদের মানসিক অবস্থার উপর আরও বেশী নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
যদি আপনার শিশু এ ধরণের সামাজিক উদ্বিগ্নতায় বা ভীতিতে ভুগছে বলে মনে হয় তাহলে তাদের সাথে খোলা মেলা কথা বলুন। তাদের মনের কথা জানার প্রয়াস করুন যে প্রকৃতপক্ষে তারা আসলে কি ভাবছে বা কেন ভয় পাচ্ছে। তারপর সেই অনুসারে তাদের ভ্রান্ত ধারণা গুলোকে বাস্তব অভিজ্ঞতার উদাহরণ দেখানোর মাধ্যমে দূর করার প্রয়াস করুন।
তারা যখন তাদের মনের কথা আপনাকে খুলে বলবে এবং আপনি সেই অনুসারে তাদের আবেগ অনুভূতিকে মূল্যায়ন করার মাধ্যমে উক্ত সমস্যা দূর করার প্রয়াস করবেন তখন অনেক সহজভাবেই সমস্যার সমাধান আসবে এটি প্রত্যাশা করা যায়।
আর নিজস্ব প্রয়াসেও যদি এই সমস্যার সমাধান না হয় তাহলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করে শিশুর মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে হবে। আপনার মনোযোগ এবং সহায়ক মনোভাবের ফলে শিশু বুঝতে পারবে যে তারা একা নয় এবং তাদের চারপাশের সবাই ক্ষতিকারক নয়।
শিশুরা তাদের কাছের মানুষদের সাথে শারীরিক ও মানসিকভাবে নিরাপদ। আর এই মনোভাবই তাদের মন থেকে ভয় দূর করবে এবং তাদের মাঝে নতুন নতুন মানুষের সাথে মিশতে এবং নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় উৎসাহিত করবে।
লিংক: https://www.psychologytoday.com/intl/blog/family-and-trauma/202108/social-anxiety-is-my-old-friend
অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে