আজ ২৫শে নভেম্বর আর্ন্তজাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস।
এ বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধের তার নর, শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ বা শিশুরাই জাতির মেরুদণ্ড সহ নারী ও শিশু সর্ম্পকে মহান ব্যক্তিদের অসংখ্য নীতি বাক্য পরিলক্ষিত হয়। তাঁদের বাস্তব ভিত্তিক এই অমর উপলব্ধি সত্ত্বেও জগৎ সংসারে অনাদিকাল থেকেই সামাজিক নিয়মনীতি গেঁড়াকলে পড়ে নারী ও শিশুরা বিভিন্ন ভাবে নির্যাতিত হয়ে আসছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে এ ধরনের নির্যাতনের প্রকোপ বেশি।
নারী ও শিশু নির্যাতনে সহায়তা প্রদান ও প্রতিরোধ কল্পে জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গ সংঘঠন, এনজিও এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন সময় একক বা সমন্বিত কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় নেদারল্যান্ড এর আর্থিক সহযোগিতায় ২০০১ থেকে ওসিসি, ২০১২ থেকে “হটলাইন-১০৯”, ২০১৪ থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ-এ ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরি এবং ২০১৮ থেকে “জয় অ্যাপস” এর মতো কর্মকাণ্ড নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টি সেক্টরাল প্রোগ্রাম পরিচালিত হয়ে আসছে।
এতদসত্ত্বেও নারী ও শিশু নির্যাতন কতটুকু কমানো বা প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে? জনসচেতনতা কতটুকু বেড়েছে? আশানুরূপ ফল না পেলেও নির্যাতিতরা যে উপকৃত হচ্ছে এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে যে সহায়ক ভূমিকা রাখছে-এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই।তাই নিরাশ হয়ে থেমে থাকলে চলবে না-আশায় বুক বেঁধে উদ্দেশ্যকে সফল করার জন্য সম্মিলিত ভাবে কাজ করতে হবে।
আমি মনে করি, শিশু ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধের কাঙ্ক্ষিত লক্ষে পৌঁছাতে হলে আরো কিছু পদক্ষেপ গ্রহন করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। যেমনঃ(১) আমাদের দেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের জন্য অপরাধের গুরুত্ব অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড,কারাদণ্ড,অর্থদণ্ডসহ বিভিন্ন ধরনের শাস্তির বিধান আছে।কিন্তু বিভিন্ন সমীক্ষা বলছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ হচ্ছে না। তাই সৌদি আরব(পাথর ছুঁড়ে বা পিটিয়ে হত্যা),ইরান(ফাঁসি বা গুলি) আফগানিস্তান(মাথায় গুলি),চীন(মৃত্যুদণ্ড),উত্তর কোরিয়া(মৃত্যুদণ্ড)সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মতো আমাদের দেশেও অন্তত ধর্ষণের ব্যাপারে আইনের প্রয়োগ দ্রুত,কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে।
যদিও মানবিক বিবেচনায় এধরণের শাস্তির ব্যাপারে মতভেদ আছে তবুও ধর্ষণের মতো ঘৃন্য অপরাধ প্রতিরোধের জন্য এধরণের শাস্তির প্রয়োজন আছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।(২) নৈতিক জ্ঞান সম্পন্ন বিবেকবান মানুষ গঠনে পরিবার,সমাজ,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,কর্মস্থলসহ রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। (৩) অনেক সময় ঘটনার অতি প্রচার হিতে বিপরিত হয়-সচেতনার পরিবর্তে অনুকরণীয় শিক্ষার মাধ্যমে নির্যাতনের ঘটনা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।তাই অনুকরণীয় শিক্ষা প্রতিরোধ কল্পে ঘটনার প্রচার সীমিত করে পরিণতির খবরটি গুরুত্বসহকারে বেশি করে জনসমক্ষে তুলে ধরতে হবে। (৪) ক্ষেত্রবিশেষে ভুক্তভোগীদের অবশ্যই উস্কানীমূলক/প্ররোচনামূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে হবে।
অন্য দিকে পুরুষ শাসিত এ সমাজে নারী নির্যাতন বিষয়টি বেশি গুরুত্ব পায়। সংখ্যায় কম হলেও পুরুষরাও যে নারী কতৃক নির্যাতিত হয় না এ কথা বলা যাবে না। আমাদের দেশে প্রচোলিত আইন নারীদের পক্ষে। আর এ সুযোগটি কাজে লাগিয়ে অনেক ক্ষেত্রে নারীরা নিরপরাধী পুরুষদের হেনস্তা করে। লোকলজ্জার ভয়ে,সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে বা উপযুক্ত আইনি সহায়তার অভাবে পুরুষরা এ নির্যাতন সহ্য করে যায়।
তাই সময় এসেছে,পুরুষ নির্যাতনে সহায়তা করণে ও এই নির্যাতনের প্রতিরোধ কল্পে পদক্ষেপ নেয়ার। সুতরাং একটি পুরুষ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন সময়ের দাবি বলে আমি মনে করি। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করার জন্য নীতি নির্ধারকগণকে অনুরোধ করা যাচ্ছে ।
[forminator_poll id=”20821″]