পিতামাতার আচার আচরণ ও মানসিক চিন্তা ভাবনা এবং সন্তানের সাথে তাদের সব ধরণের মিথস্ক্রিয়া শিশু সন্তানের মন এবং মস্তিষ্ক গড়ে তোলায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
সমাজে এ ধরণের একটি ভুল ধারণা প্রচলিত আছে যে জন্মের পর শিশুর মস্কিষ্ক বিকাশের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। তবে বিভিন্ন গবেষণা এবং মনোবিজ্ঞানীদের বিভিন্ন তত্ত্ব থেকে এখন এটা সুস্পষ্ট যে, একটি শিশুর মানসিক বিকাশ শারীরিক বিকশের মতোই বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে পিতা মাতা, পরিবার ও সমাজের বিভিন্ন উপাদানের সংস্পর্শে এসে ধীরে ধীরে ত্বরান্বিত হয় এবং শৈশবেই এই কার্যক্রম সব থেকে বেশী সাধিত হয়।
শিশুর মস্কিস্কের বিকাশ সব থেকে বেশী ত্বরিত হয় গর্ভাবস্থায় এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিকাশ সাধিত হয় দুই থেকে সাত বছর বয়স পর্যন্ত। এ সময়ে পিতামাতার সাথে তাদের কথোপকথন, পারিবারিক পরিবেশ, তাদের ভরণ পোষণ সব কিছুই তাদের মস্কিস্কের বিকাশে ভূমিকা পালন করে। জন্মের প্রথম দুই বছর শিশু পরিপূর্ণ রূপে পিতা মাতার উপর নির্ভরশীল থাকে। এবং পরবর্তী পাঁচ বছর নির্ভরতা কিছুটা কমলেও শিশু পিতামাতা এবং পরিবারের সংস্পর্শেই সব কিছু শেখে এবং বেড়ে ওঠে।
ধীরে ধীরে তাদের বুদ্ধি বিবেচনা, চিন্তা ভাবনা, আচার আচরণ, জীবন যাপনের ধরণ এবং ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবন সম্পর্কে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গী গড়ে ওঠে। যেহেতু পিতা মাতাই এ সময়ে তাদের সব থেকে ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে থাকে। তাই তাদেরকে অনুকরণ, অনুসরণ এবং কেন্দ্র করেই শিশুর এই বিকাশ সাধিত হয়। অর্থাৎ, সাধারণ ভাবে বলতে গেলে, শিশুরা পিতা মাতাকে দেখেই সব কিছু করতে শেখে।
তাছাড়া একজন মানুষের পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে ওঠার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়ায় শৈশবের এই বিকাশই সব থেকে বেশী ভূমিকা পালন করে। অর্থাৎ সন্তানের শৈশবের মানসিক বিকাশের সাথে সাথে সে পরবর্তীতে কেমন মানুষ হয়ে উঠবে এবং তার ব্যক্তিত্ব কেমন হবে সেটি নির্ধারণে পিতা মাতার প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এর কারণ হিসেবে মনস্তত্ত্ববিদগণ উল্লেখ করেছেন যে, ব্যক্তির শৈশবের স্মৃতি তার মানসিকতা গঠন, বর্ধন এবং শক্তিশালী করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। পিতা মাতার আচার আচরণ, পারিবারিক পরিবেশ, তাদের মানসিকতা সব কিছুই শিশুর শৈশবের বিশেষ উপাদান হিসেবে তার স্মৃতিতে সঞ্চিত থাকে।
আর এই সব কিছুকেই আমরা শিশুর শিক্ষা হিসেবে অভিহিত করি। শৈশবে শিশু তার অভিজ্ঞতা থেকে দ্রুত শিক্ষা গ্রহণ করে। এবং শিশুর এই শিক্ষা, অভিজ্ঞতা এবং উদ্দীপনা পরবর্তী জীবনে ব্যক্তি পালন করে, অনুসরণ করে এবং তার আবেগ অনুভূতিও এগুলোর উপর ভিত্তি করেই প্রকাশিত হয়।
তাই এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি বিবেচনা করে বলা যায়, মাতৃগর্ভ থেকে শিশুর শৈশবে বেড়ে ওঠার এই সম্পূর্ণ সময়টিকে পিতা মাতার অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা উচিৎ। এ সময়ে পিতামাতার আচার আচরণ, চিন্তা ভাবনা এবং জীবন যাপনের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াই শিশুর মানসিক বিকাশে প্রভাব বিস্তার করে।
তাই পিতামাতাকে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে এবং মার্জিত ও পরিশীলিত ব্যক্তিত্বের পরিচয় দিয়ে শিশুর সামনে একটি আদর্শ স্থাপন করতে হবে। যেটি শিশুর মানসিকতার উপর প্রভাব ফেলে শিশুর মধ্যে ইতিবাচক মানসিক বিকাশ ঘটাবে।
লিংক: https://www.psychologytoday.com/intl/blog/radical-teaching/202107/parents-powerful-impact-young-children-s-brains
অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা