শিশুদের সহানুভূতিশীল এবং আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলার কিছু কৌশল শিশুদেরকে সহানুভূতিশীল এবং আত্মনির্ভর হয়ে ওঠার গুরুত্ব অনুধাবন করাতে সক্ষম হলে তারা ভবিষ্যতে অন্যদের প্রতি দয়াশীল, ক্ষমাশীল, ও দায়িত্বশীল হয়ে গড়ে ওঠে এবং নৈতিক চরিত্রের অধিকারী হয়।
শিশুদেরকে এমন শিক্ষা প্রদান করা উচিৎ যেন তারা দয়া, ক্ষমা ইত্যাদি নৈতিক গুণাবলীকে স্বভাবসুলভ আচরণে পরিণত করে এবং মানুষের মতো মানুষ হয়ে গড়ে ওঠে। এই অভ্যাস গুলি অভিভাবকদের তাদের মাঝে একদম প্রাথমিক পর্যায় থেকে প্রদান করা উচিৎ। আমাদের প্রদান করা শিক্ষাই তাদের আচরণের মাঝে ফুটে উঠবে এবং এ লক্ষ্যে অভিভাবকদের সচেতনতার গুরুত্ব অপরিসীম। কিছু কিছু কৌশল অবলম্বন করে সহজেই তাদেরকে এসব নৈতিক গুণাবলীর শিক্ষা প্রদান করা যায়।
১) নিজেদেরকে মডেল হিসেবে তুলে ধরুনঃ
শিশুরা স্বাভাবিকভাবেই যা দেখবে, সেটাই শিখবে। তাই তাদেরকে কিছু শেখানোর আগে নিজেদের আচরণকে সেসব কাজ চর্চার মাধ্যমে আগে প্রস্তুত করে নিন। যদি আপনি চান যে আপনার শিশু অন্যদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে গড়ে উঠুক এবং আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন করুক, তাহলে আগে নিজে অন্যদের প্রতি দয়াশীল আচরণ করুন, নিজেকে আত্মনির্ভরশীল হিসেবে প্রস্তুত করুন। তাহলে আপনার শিশু আপনাকে অনুসরণ করেই এসব নৈতিক আচরণ শিখবে এবং ঘর থেকে এগুলোর চর্চা শুরু হবে।
২) শিশুকে বাস্তব অভিজ্ঞতা প্রদান করুনঃ
বাস্তব অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলে শিশুরা সব থেকে উৎকৃষ্ট উপায়ে নৈতিক গুণাবলির শিক্ষা নিতে পারবে এবং তাদের মাঝে ইতিবাচক মানসিক বিকাশ ও ত্বরান্বিত হবে। নির্দিষ্ট সময় পর পর তাদের নিয়ে কোন সেবামূলক প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করুন। বিভিন্ন সেবামূলক কাজে নিজেরা অংশগ্রহণ করুন এবং খুব কাছ থেকে তাদেরকে এসব পরিস্থিতি মোকাবেলা করার অভিজ্ঞতা প্রদান করুন। এতে তারা মানুষের জীবনের সমস্যাগুলো সম্পর্কে অবগত হবে এবং সমস্যা সমাধানে নিজের করনীয় নিয়েও সচেতন হতে শুরু করবে। তার মাঝে সহানুভূতিশীল দৃষ্টিভঙ্গীর বিকাশ ঘটবে এবং অন্যদের প্রয়োজনে নিজেকে নিয়োজিত করার আগ্রহ জন্মাবে।
৩) শিশুকে নিজের সমস্যা নিজেকেই সমাধান করার সুযোগ দিনঃ
পিতামাতা অবশ্যই শিশুদের সব ধরণের বিপদ থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব পালন করে থাকেন। কিন্তু এটা অবশ্যই খেয়াল রাখবেন, আপনার শিশু যেন পরনির্ভরশীল হয়ে বেড়ে না ওঠে। আর তাকে আত্মনির্ভরশীল করে তুলতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তাকে একা ছেড়ে দিয়ে কিভাবে সে সেই পরিস্থিতি মোকাবেলা করে সেটি পর্যবেক্ষণ করুন। এতে শিশু কখনোই পরনির্ভরশীল মানসিকতা নিয়ে গড়ে উঠবেনা এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে নিজের সমস্যা নিজেই সমাধানে সক্ষম হবে।
৪) শিশুকে মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং পাশাপাশি ভিন্ন মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার শিক্ষা দিনঃ
ভিন্ন মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে শেখা এবং স্বাধীনভাবে নিজের মত প্রকাশ করতে পারা শিশুর মাঝে ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটাতে সহায়তা করবে এবং ভবিষ্যৎ জীবনে সে ভিন্ন হলেও অন্যদের মতের প্রতি সহানুভূতিশীল থাকার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারবে। তাছাড়া অভিভাবকদের উচিৎ শিশুর মতের প্রাধান্য দিয়ে তার কথা গুলো গুরুত্বের সাথে শোনা এবং ভালোমন্দের জ্ঞান প্রদান করা। তাদের মতকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্ল করলে তারা ভবিষ্যতে অন্যদের প্রতি একই আচরণ করবে এবং নিজের ইচ্ছা অন্যদের উপর চাপিয়ে দিতে শিখবে। তাই ধৈর্য নিয়ে তাদেরকে বোঝাতে হবে এবং তাদের মাঝে অন্যের মতকে সমান গুরুত্ব এবং সম্মান দেবার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে