আপনার ছোট্ট শিশুকে সর্বোত্তম করে গড়ে তোলার একটি বিশেষ উপায় হচ্ছে স্তন্যপান করানো। আমাদের উচিত মায়েরা যেন যেকোন সময়, যেকোন জায়গায় শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারে সে ব্যবস্থা করা। শিশুর জীবনের প্রথম তিন বছর মস্তিষ্কে কিছু পরিবর্তন ঘটে। এসময় ভাষা বিকাশ মস্তিষ্ক স্থাপত্য এবং কার্যকারিতা প্রতিষ্ঠিত হয়। বুকের দুধ খাওয়ানোর মধ্য দিয়ে একজন মা প্রাথমিক পুষ্টির নিখুঁত উৎস প্রদানের পাশাপাশি প্রেম ও নিরাপত্তাও প্রদান করে থাকে। এ জন্য মা তার সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতে দেখলে আমরা আনন্দিত বোধ করি।
এ বছরের শুরুতে ল্যান্সেটে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যে শিশুরা অন্তত প্রথম ছয় মাস বুকের দুধে খায়, তাদের শৈশব ও কৈশোরের বিকাশ সর্বোত্তম হয়। বর্তমান সময়ে আমরা জানি স্তন্যপান জীবনব্যাপী সুফল প্রদান করতে পারে। ল্যান্সেট গবেষণায় দেখা গেছে, স্তন্যপানের সঙ্গে উচ্চতর আইকিউ স্কোর এবং স্কুল অর্জনের মধ্যে একটি স্পষ্ট সম্পর্ক পাওয়া যায়। গবেষকরা দেখেছেন এটি পরবর্তী জীবনে উচ্চ আয় অর্জনে সাহায্য করে। এর হার উচ্চ আয়ের দেশে ১২% এবং নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে ১৬%। উচ্চ আয়ের দেশে মাত্র ১-৫ জন বাচ্চা কে ১২ মাসের জন্য স্তন্য পান করানো হয় এবং অন্যদিকে ৬ মাস থেকে ২ বছর বয়সী শিশুদের নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে স্তন্যপান করানো হয় না। এভাবে শারীরিক এবং মানসিক বিকাশের জন্য লক্ষ লক্ষ শিশু স্তন্যপানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। পৃথকভাবে, তাদের ব্যক্তিগত এবং সামাজিক লক্ষ্য অর্জনও ব্যাহত হয়। গবেষণায় অনুমান করা হয় যে, শিশুদের স্তন্যপান না করানোর ফলে মানসিক বিকাশ যে ব্যাহত হয় এর কারণে প্রতিবছর ৩০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হারিয়ে যায়। সমাজের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
যখনই এবং যেখানেই হোক না কেন, স্তন্যদানে মায়েদের সহায়তা করুণ
কখন এবং কোথায় দুধ খাওয়াবে এ সম্পর্কে সিদ্ধান্তগুলো প্রত্যেক মায়ের ব্যক্তিগত পছন্দ। যাইহোক, আমাদের স্তন্যপানের উপকারিতা সম্বন্ধে আরো সচেতন হওয়ার প্রয়োজন। স্তন্যপান করাতে চান এমন মায়েদের সহায়তা করার জন্য যেখানেই হোক না কেন, যখনই হোক না কেন আমাদের শক্তির মধ্যে সব কিছু করতে হবে। নীতি-নির্ধারকরা আইন প্রণয়নের মাধ্যমে এই পরিকল্পনায় বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে। যার মাধ্যমে মা শিশুকে বিশেষভাবে বুকের দুধ পান করাতে পারবে। এ পরিকল্পনায় বর্ধিত মাতৃত্বকালীন ছুটি ও স্তন্যদান সংক্রান্ত পরামর্শ অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। যাতে মায়েরা বুকের দুধ খাওয়ানোতে আস্থা অর্জন করতে পারে।
ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএইচও)-তে আমরা ২০২৫ সালের মধ্যে দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করতে যাচ্ছি। সেখানে প্রথম ৬ মাস পর্যন্ত অন্তত ৫০% বাচ্চাদের একচেটিয়া বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। এই অর্জনে, আন্তর্জাতিক সহযোগীদের সহযোগিতায় ইউনিসেফ এবং ডব্লিউএইচও এর নেতৃত্বে গ্লোবাল ব্রেস্টফিডিং অ্যাডভোকেসী ইনিশিয়েটিভ, উৎসাহী দেশগুলোর ইন্টারন্যাশনাল কোড অফ মার্কেটিং ব্রেস্ট-ডেভেলপ স্টিটিস বাস্তবায়ন, পারিবারিক ছুটি এবং কর্মক্ষেত্রে নীতিমালা জোরদার এবং বুকের দুধ খাওয়ানো সহায়তা অ্যাক্সেস উন্নত করা ও স্বাস্থ্যসেবা বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
একটি হস্তক্ষেপ যা, একটি সন্তানের বেঁচে থাকার জন্য অবদান রাখে সাসটেইনএবল ডেভেলপমেন্ট গোল (এসডিজি) সকল বালক ও মেয়েদের জন্য “শৈশবকালের শৈশবের সমান বিকাশে প্রবেশ” করার আহ্বান জানায়। এটি অবশ্যই স্তন্য পানের অন্তর্ভুক্ত। এসডিজিএস কৃতিত্বে সমর্থন করার জন্য, গ্লোবাল স্ট্র্যাটেজি মহিলা ও শিশুদের জন্য বয়ঃসন্ধিকালের স্বাস্থ্য রক্ষা, মানবিক ও ভঙ্গুরসহ সব সেটিংস, ছয় মাসের জন্য শুধুমাত্র স্তন্যপান করানো সমর্থনে বিশেষ পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এই সকল ব্যবস্থার খরচ বহন এবং সহজ হস্তক্ষেপ করে একটি সন্তানের বেঁচে থাকার জন্য স্বাস্থ্য এবং অনুকূল উন্নয়নে অবদান রাখছে। বর্তমানে আমরা জানি জীবিত প্রায় ২০০ মিলিয়ন শিশু তাদের পূর্ণ শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক সম্ভাবনাগুলায় পৌঁছতে ব্যর্থ হয়। কারণ নেতিবাচক কারণগুলো প্রাথমিক শৈশব বিকাশকে বাধা দেয়।
আমরা জানি অনেক মা’ই আছেন যারা শিশুদের নিয়মিত বুকের পান করাতে চান। কিন্তু নানা প্রতিকূল অবস্থার জন্য সে বিষয়টি আর নিয়মিত ধরে রাখতে পারেন না। শিশুদের পূর্ণ সম্ভাব্যতায় পৌঁছাতে যেকোন অবস্থায় যেন মায়ের শিশুদের বুকের দুধ পান করাতে পারেন, সে বিষয়ে আমাদের সব সময় সহযোগীতা করা উচিৎ।
ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের সাইট থেকে অনুবাদটি করেছেন সুমাইয়া জান্নাত সোমা।
আপ-এইচএন