জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতি মুহুর্তে মানুষ শেখে। নিজ জীবনের অভিজ্ঞতা, চারপাশের মানুষ ও পরিবেশ, অন্যের অভিজ্ঞতা থেকে শেখে। সে হিসেবে একজন মানুষের জীবনে থাকে অসংখ্য শিক্ষক। কিন্তু যারা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রদান করে থাকেন তাঁদের থাকে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে কিছু সুনির্দিষ্ট বিষয়ে শিক্ষা দানের লক্ষ্য এবং প্রচেষ্টা।
এই শিক্ষাদান পদ্ধতির সাথে শিক্ষকের আচার-আচরণ, ব্যক্ত্বতি, চিন্তা-ভাবনা, আদর্শ, ̄স্বপ্ন, নীতি নৈতিকতা, দক্ষতা ইত্যাদি একজন ছাত্রের মনে ও জীবনে ইতিবাচক-নেতিবাচক উভয় প্রকারেই রেখাপাত করতে পারে। শিক্ষককে বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর। তাই শিক্ষকতা হচ্ছে অত্যন্ত দায়িত্বশীল পেশা।
অন্যেরে মঙ্গল চিন্তায় সবসময় সচেতন থাকা একজন আদর্শ শিক্ষকের দায়িত্ব। আর মন হচ্ছে বুদ্ধি এবং বিবেক বোধের সমষ্টিগত রূপ যা চিন্তা, অনুভূতি, আবেগ, কথা বা ভাষার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
মন দেখা যায় না, কিন্তু বোঝা যায়, উপলব্ধি করা যায়। আর তাই কারো মনকে উপলব্ধি করতে হলে প্রয়োজন তার কথা, আচার-আচরণ, কার্যকলাপকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা। মানুষের দুই ধরনের আচরণ রয়েছে। একটি হচ্ছে জৈবিক আচরণ, অন্যটি বুদ্ধিবৃত্তিক আচরণ। ঘুম, খাওয়া-দাওয়া, যৌনতা ইত্যাদি।
জৈবিক চাহিদা পূরণের পাশাপাশি মানুষ বুদ্ধিবৃত্তিক চাহিদা পূরণের চেষ্টা করে। বিদ্যা-শিক্ষা অর্জন ও চর্চা, সাংস্কৃতিক চর্চা, বিজ্ঞান চর্চা, দর্শন ও সাহিত্য চর্চা ইত্যাদি সবই বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা। আর এই প্রতিটি ক্ষেত্রেই থাকে শিক্ষকের কম-বেশি অবদান।
শিক্ষকের চলন-বলন, আদর্শ সবকিছুই শিক্ষার্থীর মনে বিশাল প্রভাব রাখে। আর আজকের শিক্ষার্থীরা আগামীতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশ ও জাতিকে পরিচালনা করবে, বিভিন্ন কাজে অবদান রাখবে। একজন শিক্ষকের নিয়মানুবর্তিতা, অধ্যাবসায়, ধৈর্য ইত্যাদি গুণাবলী থাকার পাশাপাশি থাকতে হবে অজানাকে জানার, নতুন কিছু শেখার আগ্রহ এবং শিক্ষার্থীসুলভ মনোভাব।
কেননা, একজন শিক্ষক প্রথমত একজন আজীবন ছাত্র। একজন প্রকৃত শিক্ষকের মাঝে প্রতিনিয়ত নতন কিছু শেখা এবং তা ছাত্র-ছাত্রীর মাঝে অকাতরে বিলিয়ে দেবার মানসিকতা থাকতে হবে। কথা ও ভাষার ব্যবহারে হতে হবে সংযত। সঠিক এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা থাকতে হবে। একজন শিক্ষককে হতে হবে দূরদর্শী, বিচক্ষণ, সত্য প্রতিষ্ঠায় নির্ভীক। সর্বাগ্রে থাকতে হবে নেতত্ব প্রদানে দক্ষতা। থাকতে হবে দুর্বলকে সবল করে তোলার নিরলস প্রচেষ্টা।
গবেষণায় দেখা গেছে, অন্য পেশার চেয়ে শিক্ষকতা পেশায় মনের চাপ অনেক বেশি। প্রতিনিয়ত নিজেকে নতুন কিছু রপ্ত করা, সময়োপযোগী নিত্য নতুন দক্ষতা অর্জনই শুধু নয়; ভিন্ন ভিন্ন মানুষের, ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির, ভিন্ন ভিন্ন সামাজিক অবস্থানের মানুষের সন্তানদের, বিভিন্ন প্রকার ব্যক্তিত্বের অধিকারী মানুষকে একই ছাতার নিচে রেখে সহজ, বোধগম্য, গ্রহণযোগ্য, কার্যকর পদ্ধতিতে পাঠদান করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত বেশ মানসিক চাপে থাকতে হয়।
একজন শিক্ষক তাঁর গুরুদায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যদি মানসিক চাপে পড়েন অথবা অন্য কোনো কারণে হতাশা, উদ্বেগ, দুঃখ, রাগ ইত্যাদি আবেগীয় সমস্যায় ভোগেন অথবা যেকোনো প্রকার মানসিক সমস্যায় অন্যান্য সাধারণ মানুষের মতোই আক্রান্ত হন তাহলে তিনি তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে বাধাগ্রস্ত হবেন। তাঁর আবেগীয় জগতের টানাপোড়েন তাঁর বিভিন্ন নেতিবাচক আচরণের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হবে।
একজন শিক্ষকের মাঝে যদি নীতি-নৈতিকতা, মূ্ল্যবোধ না থাকে, একজন শিক্ষক যদি কাঙি্ক্ষত ব্যক্তিত্বের অধিকারী না হন, তাহলে তাঁকে যারা অনুসরণ করে বড় হবে তাদের মাঝেও এইসব বিশেষ গুণাবলীর ঘাটতি থাকবে।
শিক্ষক নিজে যদি মানসিক সুস্বাস্থ্যের অধিকারী না হন তাহলে তা তাঁর আচরণে, জীবনে, তাঁর পাঠদানে প্রভাব ফেলবেই। তাই অন্য পেশার মানুষের মতো শিক্ষকদেরও মানসিক চাপ কমাতে, মানসিক অসুস্থতা থেকে মুক্ত হতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার আওতায় অসতে হবে।
মনে রাখতে হবে, শিক্ষকগণও মানুষ। তাঁদেরও মনের যত্নের প্রয়োজন। তাই শিক্ষকদের সামাজিক অবস্থান শক্ত করতে, শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে সুস্থ রাখতে সমাজ ও রাষ্ট্রকে সচেতন থাকতে হবে, দায়িত্ব নিতে হবে। প্রতিনিয়ত প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে তাঁদের দক্ষতা উত্তরোত্তর বাড়াতে হবে। কারণ শিক্ষকদের উন্নয়নের সঙ্গে আদর্শ জাতি গঠন ও জাতীয় উন্নয়ন প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে সম্পর্কযুক্ত।
করোনায় স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে