সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গত বছর একটি ভিডিও ফুটেজ বেশ ভাইরাল হয়েছিল। যেখানে ৩-৪ বছর বয়সী এক শিশুকে দেখা যায়, যার সামনে খোপকাটা অঙ্ক খাতা আর হাতে পেনসিল। চোখেমুখে ভয়, চোখ ছলছল। মায়ের কাছে ইংরেজিতে ১, ২, ৩, ৪ শিখছে সে। বয়স কম, কচি মাথা, শিখতে সময় তো লাগবেই।
কিন্তু মায়ের সেই ধৈর্য্য নেই। দ্রুতই শেখাতে হবে সব কিছু। তাই তো, একটু ভুল করলেই চড়-থাপ্পড় মারছেন। বেচারা শিশু সহ্য করতে না পেরে এক পর্যায়ে বলেই ফেলল, আমাকে মেরো না প্লিজ, একটু ভালোবেসে পড়াও। কিন্তু কে শোনে কার কথা। মেরেই যাচ্ছেন মা।
ঘটনাটি ভারতের। এ ঘটনার প্রতিবাদ করেছিলেন অনেকেই, অনেক বড় বড় তারকারাও। ভিডিওটি টুইট করে অভিভাবকদের আচরণের দিকে আঙুল তুলেছিলেন ভারতের ক্রিকেটার বিরাট কোহলি ও শিখর ধাওয়ানও।
আমাদের দেশেও এমন অনেকেই আছেন ‘পান থেকে চুন খসলেই’ সন্তানের গায়ে হাত তুলতে দ্বিতীয়বার ভাবেন না। কিন্তু কখনো কী ভেবে দেখেছেন মারলেই কী সব সমস্যার সমাধান হয়? গায়ে হাত তুললেই কী সুস্থ-স্বাভাবিক ভবিষ্যত পাবে আপনার সন্তান?
সামাজিক বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে উত্তরটা নেতিবাচক। এক গবেষণায় দেখা যায়, বাবা-মায়ের কঠোর শাসন সন্তানের সামাজিক বিকাশকে বাধাগুস্ত করে। তারা সমাজের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে না, অন্যদের সঙ্গে মিশতে পারে না। তারা ভিড় এড়িয়ে চলে, একা থাকতে পছন্দ করে। অল্পতেই রেগে যায়।
সম্প্রতি পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত একটি নতুন গবেষণায় শিশুদের বেড়ে ওঠার পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করা হয়। সেখানে দেখা যায়, সন্তানের প্রতি বাবা-মায়ের ভালোবাসা-মমতার অভাব ও রুঢ়তা শিশুদেরকে আগ্রাসী করে তোলে এবং তাদের মধ্যে সহানুভূতিশীলতার অভাব দেখা যায়।
অভিভাবকত্বের ভিন্ন ভিন্ন ধরন শিশুদের সামাজিকীকরণে কেমন প্রভাব ফেলে তা জানতে পেন মনোবিদ রেবেকো ওয়ালার ২২৭ জোড়া জমজের উপর এ গবেষণা করেন। সেখানে তিনি দেখতে পান, যেসব জমজ কঠোর অনুশাসন ও কম ভালোবাসা পেয়েছেন তারা অন্যদের চেয়ে বেশি আগ্রাসী এবং কম সামাজিক। তারা অন্যদের সঙ্গে সহজে মিশতে পারছে না।
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হাইডে বলেন, জিনগত বিষয় নয়, অভিভাবকত্বের ধরন শিশুদের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে – এ গবেষণায় তা সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।
অনুবাদ করেছেন: আছিয়া নিশি
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
https://timesofindia.indiatimes.com/life-style/parenting/teen/are-you-making-your-child-antisocial-by-being-strict-finds-a-study/articleshow/66261048.cms
Attachments area