লিমিরেন্স: সব ভালোবাসা প্রেম নয়

‘লাভ ইজ ড্রাগ’ ভালোবাসার একটি গান। ১৯৭৫ সালে রক্সি মিউজিক গানটি রিলিজ করে। ভালোবাসা যখন দুইতরফা না হয়ে একতরফা হয় তখন তা হয়ে উঠতে পারে মাদকের মতো। ব্রেইনে ভালোবাসার সব কটি রিসিপ্টরই কাজ করতে শুরু করে। ডোপামিন, নরইপিনেফ্রিন, ইসট্রোজেন এবং টেসটোসটেরন ভালোবাসার সাথে জড়িত এই চারটি নিউরো হরমোনই এক সাথে কাজ করতে থাকে। ফলে আচরণে দেখা দেয় কিছু ক্ষ্যাপামি বা অস্বাভাবিকতা। সব কিছুর উপরে স্থান পায় ভালোবাসার মানুষটি। বাস্তবতা জ্ঞান তখন আর কাজ করে না।

মনোবিজ্ঞানী ডরোথি টিনভ একতরফা এই প্রেমে পড়ার নাম দিয়েছেন লিমিরেন্স। লিমিরেন্স অসুস্থতার পর্যায়ে চলে গেলে চিকিৎসা নিতে হয়। প্রেমে পড়লে ভালোবাসার মানুষের সাথে থাকতে চাওয়ার যে সহজ স্বাভাবিক ব্যাকুলতা এখানে সেই ব্যাকুলতা অনেক দৃঢ় এবং তীব্র হয়। ঠিক অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজঅর্ডারের মত। সাধারণত প্রেমে পড়লে ব্রেইনে সেরোটোনিন লেভেল কমে অবসেশনের লেভেলে নেমে আসে। ফলে ভালোবাসার মানুষকে ঘিরে বার বার কল্পনা বা চিন্তা আসে। লিমিরেন্ট রিয়্যাকশনের ক্ষেত্রে শুধু সেরোটোনিন নয় অন্যান্য নিউরোহরমোনেরও পরিবর্তন হয়। সে কারণেই মনের মধ্যে একক এই প্রেম অনেক শক্তিশালী ভাবে দানা বাধতে শুরু করে। হিন্দি ডর ছবিতে শাহরুখ খানের যে প্রেম দেখানো হয়েছে সেটা আসলে লিমিরেন্স। যারা প্রেমে পড়ে তাদের মধ্যে শতকরা ৫% এর ভালোবাসা স্বাভাবিক মাত্রা অতিক্রম করে লিমিরেন্ট রিয়্যাকশনের পর্যায়ে চলে আসে।

কি করে বুঝবেন?
যদি আপনি এভাবে কল্পনা করেন যে সে আপনার জন্য পারফেক্ট।
আপনি তাকে ছাড়া যদি অন্য কিছু ভাবতে না পারেন।
তার কাছে গেলে আপনার যদি যদি অতিরিক্ত নার্ভাস লাগে, দ্বিধান্বিত বোধ করেন, অতিরিক্ত লজ্জা পান।
আপনার যদি তার কাছে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ভয় তীব্র মাত্রায় কাজ করে এবং সে কারণে যদি আত্মহত্যার চিন্তা আসে।
আপনার প্রতি তার সামান্য মনোযোগে আপনি যদি তীব্র আনন্দ পান।
আপনার কল্পনা যদি এমন হয় সে আপনার মধ্যেই আছে।
আপনার চারপাশে যা কিছু সবকিছু যদি তার কথাই মনে করিয়ে দেয়।
সব সময় যদি মনে মনে তার সাথেই কথা বলে চলেন।
সে আপনার সাথে কেমন আচরণ করল সেটা বিষয় নয় আপনার কাছে সব সময় এটা রোমান্টিক মনে হতে থাকবে।
তার কাছাকাছি হলে আপনার কিছু শারীরিক লক্ষণও দেখা দেবে যেমন বুক ধড়ফড় করবে, মুখ লাল হয়ে যাবে এবং শরীর কাঁপবে।

উপরের ঘটনাগুলো প্রথম প্রেমে পড়ার ক্ষেত্রেও ঘটতে পারে। কিন্তু প্রেমে পড়া থেকে পার্থক্য করা যাবে এভাবে যে প্রেমে পড়াটা উভয়ের কাছে আনন্দের হতে পারে। কিন্তু লিমিরেন্স যার হয় তার ভাল লাগলেও যাকে নিয়ে হচ্ছে তার ভাল লাগবে না।

তাই আপনি যদি আপনার প্রিয় মানুষকে নিয়ে এমন সমস্যায় পড়ে যান তাহলে তাকে বার বার বিরক্ত না করে চিকিৎসা নিন । আপনার ভালোবাসার প্রতি সম্মান দেখান।


প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না কর্তৃপক্ষ।

Previous articleকানাডায় স্থানীয় মানসিক স্বাস্থ্য প্রচারণা পেল আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি
Next articleমানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা সংস্কারে উদ্যমী হচ্ছে টেক্সাস
ডা. এস এম আতিকুর রহমান
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here