মানসিক রোগী ও রোগীর সেবাদানকারী বা রোগীর পরিবারের লোকদের মানসিক রোগ, পরিবারের রোগীর অসুবিধা বা বৈশিষ্ট্য ও রোগীর প্রতি অন্যদের দায়িত্ব সুন্দর ভাবে নিশ্চিত করার জন্য কিছু তথ্য অবশ্যই জানা দরকার। তথ্য জানার সাথে সাথে সেগুলো বিশ্বাস করা, ধারণ করা ও মেনে চলা রোগীর মানসম্মত সেবার জন্য জরুরি।
অনেক সময় বহির্বিভাগে রোগী এবং সেবাদানকারী বা পিতামাতাদের বলতে শোনা যায় যে, রোগীর একটু অসুবিধা আছে যা সাইকথেরাপি বা কাউনসেলিং করলে ঠিক হয়ে যাবে। মানসিক রোগের এই ঔষুধ অনেক দিন খেলে পরবর্তীতে ছাড়তে পারবে না। পরে রোগীর সঙ্গে কথা বলে দেখা যায়, রোগীর বড় ধরনের মানসিক রোগ আছে। তখন ব্যাপারটি আসলেই বেশ কষ্টকর হয় রোগীর বাবা মাকে বোঝানো ও উপযুক্ত চিকিৎসা শুরু করা। যারা বলেন যে তাদের রোগীর শুধু সাইকথেরাপি বা কাউনসেলিং লাগবে বলে এসেছেন তাদের রোগীর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মানসিক রোগ পাওয়া যায়। যার কারণে অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসা ছাড়াই ছেড়ে দিতে বাধ্য হতে হয়।
মানসিক রোগের চিকিৎসা বহুমাত্রিক। অনেক কিছুর সমন্বয় দরকার হয়। ঔষুধ, সাইকথেরাপি বা কাউনসেলিং, ব্যবহার পরিবর্তন, সামাজিক সাহায্য সহ আরও অনেক দিক। সব রোগের জন্য একই রকম নয়, আবার একই রোগের সব রোগীর জন্য একই রকম নয়। মূল লক্ষ্য ঠিক রেখে যে রোগীর জন্য যেটা দরকার সেটা অবস্থা অনুযায়ী ঠিক করা ও মেনে চলা। সেখানে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সমন্বয়ক হলে ভালো ফলাফলের সম্ভাবনা বেশি। একটা কথা মনে রাখা বেশ জরুরি, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ মানেই তিনি শুধুই ঔষুধ দিবেন সেটা হয়তো বাস্তব সম্মত নয়।
সাইকথেরাপি, কাউনসেলিং ও অন্যান্য থেরাপি
আমাদের সম্ভবত জানতে হবে আমরা কি আদৌ সাইকথেরাপি, কাউনসেলিং বা অন্যান্য থেরাপি এগুলোর মানে সঠিক ভাবে বোঝার চেষ্টা করি কিনা।
কাউনসেলিং
মানসিক ভাবে যেকোনো অসুবিধা বা সাহায্যের জন্য কাউনসেলিং দরকার হতে পারে বা গ্রহণ করা যেতে পারে। সাময়িক যে কোনো উপদেশও কাউনসেলিং হিসাবে গণনা করা যেতে পারে বা ধরা হয়। এটার জন্য কোনো প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ বা শিক্ষা থাকতেই হবে এমন জরুরি নয়। যে কেও কাউন্সেলর হিসাবে ভূমিকা রাখতে পারেন।
সাইকথেরাপি
সাইকথেরাপি একটি স্বীকৃত চিকিৎসার অংশ যেটা একটা প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি মেনে প্রদান করা হয়। সাইকথেরাপির জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। যে কেউ চাইলেই এটা দিতে পারেন না। আবার এক এক রোগের জন্য এক এক রকমের সাইকথেরাপি প্রয়োজন বা দেওয়া হয়। কোনো নির্দিষ্ট রোগ এবং নির্দিষ্ট প্রকার সাইকথেরাপি সাথে সাথে উপযুক্ত সাইকোথেরাপিস্ট ছাড়া যে কোনো লোকের সাথে কথা বলাই সাইকথেরাপি নয়।
একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ওষুধ লেখার পাশাপাশি কাউনসেলিং ও সাইকথেরাপি প্রদান করতে পারেন।
সাইকোথেরাপিস্টরা থেরাপি এবং কাউনসেলিং করতে পারেন কিন্তু চিকিৎসার খাতিরে কোনো ওষুধ লিখতে বা বলতে পারেন না। সেক্ষেত্রে তিনি মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে পারেন।
কাউন্সেলর যে কেও হতে পারেন। এর জন্য সহানুভূতি ছাড়া আর তেমন কিছুর দরকার না হলেও চলে।
বিষয় গুলো সহজ ভাবে উপস্থাপন করা হল। আশা করা যায় এগুলো বুঝতে পারা ও মেনে চলা আমাদের এবং আমাদের রোগীদের জন্য উপকারী হিসাবে ভূমিকা রাখবে।