অনেকের মতে, তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেটের আনসাং হিরো। ক্রিকেট বিশ্লেষকদের মতে, তিনি বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা উদ্বোধনী ব্যাটার। ২০০১ সালে বুলাওয়েতে স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্টে অভিষেক হয় তাঁর। প্রথম ইনিংসেই খেলেন ৬২ রানের নান্দনিক ইনিংস। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করেন আদ্যোপান্ত। উদ্বোধনী ব্যাটার হিসেবে নেমে অপরাজিত থাকেন। ২২ গজের পিচে ব্যাটিং-এ কিংবা মাঠে ফিল্ডিং-এ তিনি যে লড়াকু মানসিকতা দেখিয়েছেন তা বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রেমীদের চোখে অনেকদিন লেগে থাকবে। তিনি জাভেদ ওমর বেলিম গোল্লা, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক ওপেনার। মনের খবর-এর বিশেষ সাক্ষাৎকারে তাঁর মুখোমুখি হয়েছেন মোহাম্মদ আরিফুল হোক।
মনের খবর: কেমন আছেন?
জাভেদ ওমর: আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি।
মনের খবর: প্রথমেই জানতে চাইবো, আপনি বর্তমানে কী করছেন?
জাভেদ ওমর: এখন নিজের ব্যবসা নিয়েই আছি।
মনের খবর: বেশির ভাগ সময় আপনার মন কেমন থাকে?
জাভেদ ওমর: আল্লাহর রহমতে মন ভালোই থাকে।
মনের খবর: আপনার মতে, মন ভালো রাখার জন্য কী প্রয়োজন?
জাভেদ ওমর: সুস্থতা, সুস্থতা এবং সুস্থতা। আমার মতে, মন ভালো রাখার জন্য প্রথমেই প্রয়োজন শারীরিক সুস্থতার। প্রতিটি মানুষেরই নিজের পছন্দের কাজ আছে। যা করলে তার মন ভালো হয়। কিন্তু সেসব ভালোলাগার কাজ তখনই মানুষ উপভোগ করে যখন সে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকে। তাই আমার মতে, সবার আগে দরকার শারীরিক সুস্থতা।
মনের খবর: কখনো মন খারাপ বা রাগ হলে আপনি কী করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?
জাভেদ ওমর: মাঝে মাঝে একা থাকি। আবার, কখনো আমার পছন্দের মানুষদের সাথেও সময় কাটাই।
মনের খবর: আড্ডা কেমন উপভোগ করেন?
জাভেদ ওমর: খুব বেশি পছন্দ করি।
মনের খবর: পরিবারের সঙ্গ কতটা উপভোগ করেন?
জাভেদ ওমর: পরিবারের সঙ্গ সবসময়ই উপভোগ করি।
মনের খবর: প্রথম কবে ঠিক করেছিলেন পেশাদার ক্রিকেটার হবেন?
জাভেদ ওমর: আসলে আমরা যখন খেলা শুরু করি তখন পেশাদার ক্রিকেটার হওয়ার চিন্তা ছিলো না। চিন্তা করতাম খেলোয়াড় হবো। ছোটবেলা থেকেই খেলার প্রতি ছিলো বিশেষ আগ্রহ। তখন হকি, ফুটবল, ক্রিকেট খেলতাম।
মনের খবর: আপনার খেলোয়াড়ি জীবনের কোন জিনিসগুলো আজও মিস করেন?
জাভেদ ওমর: দেশের হয়ে ভালো খেলার সময় স্টেডিয়ামে মানুষ ভালোবেসে, ‘জাভেদ-জাভেদ’ করে চিৎকার করে ডাকতো সেটা এখনো মিস করি। আবার ম্যাচ জেতার পর ড্রেসিং রুমে সবার সাথে আনন্দ করার সময়গুলো এখনো মিস করি।
মনের খবর: একজন সফল ক্রিকেটার হিসেবে আপনার কাছে মানসিক স্বাস্থ্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
জাভেদ ওমর: খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো খেলার জন্য মানসিক স্বাস্থ্য অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো খেলার জন্য মানসিক স্বাস্থ্য অবশ্যই জরুরি। ক্রিকেটের ক্ষেত্রে তো অবশ্যই। এক সেকেন্ডে যেমন কোনো ব্যাটসম্যান ছয় মারতে পারে, তেমনি আউটও হতে পারে। ক্রিকেটারদের সবসময় ফোকাস ধরে রাখাটা জরুরি।
মনের খবর: আপনার খেলোয়াড়ি জীবনে কখনো মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত বা মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়েছেন?
জাভেদ ওমর: অবশ্যই। ডিপ্রেশনে থেকেছি। তবে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে ভালো খেলে বেরিয়ে এসেছি তা থেকে।
মনের খবর: খেলোয়াড়ি জীবনে খেলার সময় মানসিক চাপ সামলানোর জন্য আপনি কী ধরনের প্রস্তুতি নিতেন?
জাভেদ ওমর: খেলোয়াড়ি জীবনের শুরুতে মানসিক চাপ নিয়ে আলাদা কাজ করা হতো না। তখন খেলার আগে মানসিক চাপ সামলানোর জন্য সঠিকভাবে অনুশীলন করতাম। পরবর্তীতে মনোরোগ চিকিৎসক সালাহউদ্দীন কাউসার বিপ্লবের কাছে ব্রিদিং প্র্যাকটিস, মেডিটেশন শিখেছি। এছাড়া নিউ জিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার স্পোর্টস সাইকোলজিস্টদের কাছে মানসিক চাপ সামলানোর বিষয়ে কিছুটা শিখেছি।
মনের খবর: বর্তমানে পেশাদার খেলোয়াড়দের দলে সুযোগ পাওয়া বা পরবর্তী পর্যায়ে খেলাটা আগের থেকেও অনেক বেশি প্রতিযোগিতাপূর্ণ। এক্ষেত্রে অনেক খেলোয়াড়ই মানসিক চাপ অনুভব করতে পারে। সেক্ষেত্রে তাদের প্রতি আপনার পরামর্শ কী হবে?
জাভেদ ওমর: প্রতিযোগিতা, মানসিক চাপ আসলে সবসময়ই ছিল। বর্তমানে আমাদের খেলোয়াড়দের মানসিক চাপ সামলানোর জন্য প্রচুর ম্যাচ খেলার বিকল্প নাই। বয়সভিত্তিক ও এর পরবর্তী পর্যায়ে খেলতে খেলতেই তাঁরা শিখবে কীভাবে মানসিক চাপ সামলাতে হবে। এছাড়া বর্তমানে ঘরোয়া পর্যায়ে খেলা ক্রিকেটারদের আর্থিক স্বচ্ছলতা নিশ্চিত করাও জরুরী। এটা তাদের নির্ভার হয়ে খেলতে সাহায্য করবে।
মনের খবর: আমাদের দেশের খেলোয়াড়দের ডোপিং কেলেঙ্কারিতে তেমন জড়াতে না দেখা গেলেও, আশপাশের দেশের কিছু খেলোয়াড়কে এই ক্ষেত্রে জড়িত পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে দেশীয় খেলোয়াড়দের সচেতনতা বৃদ্ধিতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
জাভেদ ওমর: মূল সচেতনতা থাকতে হবে খেলোয়াড়দের নিজের। তাঁরা প্রত্যেকেই পেশাদার খেলোয়াড়। কী করা প্রয়োজন বা কী করা উচিত নয় সে বিষয়ে নিজেদের সচেতন থাকতে হবে। যেকোন মেডিসিন নেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
মনের খবর: আমাদের দেশের খেলোয়াড়দের সাথে নিয়মিতভাবে স্পোর্টস সাইকোলজিস্টদের কাজ করার সুযোগ নেই। আপনার মতে, এক্ষেত্রে তাদের কাজ করার প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা আর থাকলে কতটুকু?
জাভেদ ওমর: আমাদের দেশে আসলে স্পোর্টস সাইকোলজিস্টদের কাজ করার সংস্কৃতিটাই গড়ে ওঠেনি। এখনো অনেকে খেলায় মানসিক চাপের বিষয়গুলো চিন্তা করে না। কিন্তু আমাদের দেশে খেলোয়াড়দের সাথে স্পোর্টস সাইকোলজিস্টদের কাজ করার সংস্কৃতিটা গড়ে ওঠা খুব প্রয়োজন।
মনের খবর: এদেশের অনেক তরুণরা মাদকের দিকে ঝুঁকে নিজের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নষ্ট করেছে। দেশের একজন ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব হিসেবে তাদের প্রতি আপনি যদি কিছু বলেন…
জাভেদ ওমর: তরুণদের প্রতি আমার একটাই কথা, এই জীবনটা তোমাদের নিজের। তুমি নিজে যে-ই সিদ্ধান্ত নেবে তাঁর ফল তোমাকে ভুগতে হবে। অনেক সময় তরুণরা শুধু কৌতুহলের জন্য মাদক সেবন করে। মাদক কোনো খেলার বিষয় নয়, এটা কারো জীবন নষ্ট করে দিতে পারে, আর যারা মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে, তাদের পরিবার পরিজনের সাহায্য নিয়ে তাঁরা যেন নিজেদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার চেষ্টা করে।
মনের খবর: আমাদের পাঠকদের উদ্দেশ্যে পরিশেষে যদি কিছু বলেন।
জাভেদ ওমর: পাঠকদের প্রতি অনুরোধ তারা যদি এই পত্রিকার ইতিবাচক দিকগুলো নিজ নিজ অবস্থান থেকে সমাজে তুলে ধরতে পারেন তবে আমি মনে করি পত্রিকাটি সার্থক হবে।
মনের খবর: অনেক ধন্যবাদ মনের খবরকে আপনার মূল্যবান সময় দেয়ার জন্য।
জাভেদ ওমর: আপনাকেও ধন্যবাদ।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে