মৃত্যু চিরন্তন সত্য হলেও মানুষকূলে এটি অত্যন্ত নেতিবাচক ও আবেগঘন একটি বিষয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুদেরকে মৃত্যু সম্পর্কে ছোটবেলা থেকেই ধারণা দেয়া উচিৎ।
যুক্তরাষ্ট্রের দ্য ন্যাশনাল সেন্টার ফর স্কুল ক্রাইসিস অ্যান্ড ব্রেভমেন্ট সম্প্রতি এক নিবন্ধে মৃত্যু সংক্রান্ত চারটি বিষয়ের উল্লেখ করেছে যা শিশুদের বোঝানো উচিৎ। এর ফলে শিশুরা মৃত্যু বা হারানোর শোক সামলে নেয়ার ক্ষেত্রে ভালোভাবে প্রস্তুত হতে পারে।
অল্প বয়সেই শিশুদের মধ্যে মৃত্যুর বিষয়ে সচেতনতা তৈরি হয়ে যায়। তারা সিনেমা বা টিভি শোতে (কার্টুনসহ) হরহামেশাই মৃত্যুর চিত্রায়ণ দেখে থাকে। অনেকেরই আদরের পোষা প্রাণিটির মৃত্যু ঘটে। কারো ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যের মৃত্যু ঘটতে পারে যার শোক প্রবল কষ্টদায়ক হয়ে উঠতে পারে।
মৃত্যুর বিষয়ে অনেক কিছুই শিশুদের জন্য বিভ্রান্তিকর হলেও এই চারটি অপরিহার্য ধারণা শিশুদের ক্ষতি বা হারানোর মর্ম সম্পর্কে বুঝতে সাহায্য করে। ৫-৭ বছরের অধিকাংশ শিশুরাই এসকল ধারণা বুঝতে পারে। তবে আরো কম বয়সী শিশুরাও এটি বুঝতে সক্ষম। তো চলুন দেখে নেয়া যাক মৃত্যু সম্পর্কে যে বিষয়গুলো শিশুদের বোঝানো আবশ্যক।
১. মৃত্যু চিরন্তন
শিশুরা টিভিতে কার্টুন দেখার সময় এর বিভিন্ন চরিত্রের মৃত্যু দেখে থাকলেও পরের পর্বে সেই চরিত্রকে আবার জীবন্ত দেখতে পায়। তাদের বোঝানো উচিৎ যে, ‘মৃত্যু হলো না ফেরার পথে যাত্রা’। টিভি শোতে শিশুরা সাময়িক মৃত্যু দেখে এর প্রকৃত মর্ম বুঝতে পারে না। এটাকে সাময়িক বিচ্ছেদ বলেই তাদের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণার জন্ম নেয়। শোকার্ত হওয়ার জন্য শিশুদের আগে বোঝাতে হবে যে, মৃত্যু হলো স্থায়ী বিদায়। এটি তাদের শোক গ্রহণ করার ক্ষমতা বাড়ায় এবং তা থেকে বেরিয়ে আসতে প্রভূত সাহায্য করে।
২. মৃত্যু মানেই জীবনের অবসান
শিশুদের বোঝানো উচিৎ যে, মৃত্যুর পর জীবন বলে কিছু থাকে না, মৃত্যুর সাথে সাথেই প্রতিটি প্রাণির জীবনের অবসান হয়। শিশুরা কল্পনাপ্রবণ হয়ে থাকে। তারা খেলার সময় তাদের খেলনাসমূহকেও জীবন্ত ভাবতে শুরু করে। আর বড়রা মজা করে ‘তোমার পুতুলটি মারা গেছে’ বললে তাদের মধ্যে বিভ্রান্তির পরিমাণ বাড়তেই থাকে। তাদের মধ্যে এমন ধারণার জন্ম হয় যে, কেউ মারা গেলে সে সব দেখতে, শুনতে পারে। কফিন কিংবা কবরের অন্ধকার অনুভব করতে পারে ইত্যাদি। তাই শিশুদেরকে মৃত্যু মানেই সব শেষ এটা বোঝানো উচিৎ।
৩. জীবন্ত সবকিছুরই মৃত্যু অপরিহার্য
শিশুরা মনে করে তাদের প্রিয় মানুষ বা প্রাণিরা কখনই মৃত্যুবরণ করবে না। তাছাড়া মা-বাবারা সবসময় সন্তানদের বলে থাকেন যে, তারা তাদের (সন্তানদের) পাশে সর্বদাই আছেন। এটাও তাদের বিভ্রান্ত করতে পারে। বরং শিশুদের মৃত্যু নিয়ে চিন্তা না করার পরামর্শ দেয়া উচিৎ। শিশুদেরকে মৃত্যুকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করার শিক্ষা বা পরামর্শ দেয়া উচিৎ। তা না হলে শিশুদের মনে হতে পারে মৃত্যুবরণকারী কোনো খারাপ কাজ করার কারণে মারা গেছে যা পরবর্তীতে তাদেরকে বিব্রত করে তুলতে পারে।
৪. শরীরের সাথে মৃত্যুর সম্পর্ক বিদ্যমান
কারো মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে না পারলে শিশুদের মনে নানারকম ভ্রান্ত ধারণার জন্ম নেয়। তাদের বোঝানো উচিৎ যে, শরীরের ক্ষয়ে মৃত্যু হয়। নানান শারীরিক কারণে মৃত্যু আসতে পারে। তাদেরকে সহজভাবে শারীরিক নানান সমস্যা যা মৃত্যু বয়ে আনে সে সম্পর্কে ধারণা প্রদান করা উচিৎ।
এ সংক্রান্ত আরও পড়ুন: মানসিক রোগ : মৃত্যুভীতি
করোনা সর্ম্পকিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য জানতে ক্লিক করুন।