কানাডার একজন চিকিৎসক ডা. গাবোর মেইট মনে করেন সবধরনের আসক্তির পেছনে থাকে মানুষের ভেতরে প্রোথিত ভীতি কিংবা যন্ত্রণা। যে কারণে তার বিশ্বাস মাদকাসক্ত ব্যক্তির প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গীতে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন, সেইসঙ্গে চিকিৎসা পদ্ধতিও হওয়া উচিত পরিবর্তিত।
ডা. মেইট তার মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক লেখালেখির জন্য পরিচিত। এছাড়া উত্তর আমেরিকায় সবচেয়ে বেশি মাদকাসক্তি প্রকোপ যেখানে সেই কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে রাসায়নিক জাতীয় পদার্থ অপব্যবহারের রোগীদের নিয়ে কাজ করার জন্য বিখ্যাত। এক প্রতিবেদনে এমনটিই জানিয়েছে বিবিসি।
২০১৮ সালে তার কাজের জন্য তিনি কানাডার সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান অর্ডার অব কানাডা লাভ করেন।
তিনি বিশ্বাস করেন, যে কোন আসক্তির পেছনেই প্রবল ভীতি বা তীব্র যন্ত্রণার কোন স্মৃতি থাকে।
এর কারণ কী? বিষয়টি নিয়ে ডা. মেইটের ব্যাখ্যা জানা যাক।
“মানুষ ইচ্ছা করে আসক্ত হয় না”আসক্তি নিয়ে লোকের মধ্যে চালু একটি ধারণা হচ্ছে ইচ্ছা করে বা শখের বশে ওই পথে গেছে কিন্তু অধিকাংশ সময় আসল ঘটনা সেটা নয়। আমাদের চারপাশের সমাজের কাঠামোটাই এমন যে কোন ব্যক্তি আসক্ত হলে তাকে ধরে শাস্তি দাও। “আমি এমন কাউকে চিনি না যে এক সকালে ঘুম থেকে উঠে ভাবলো, আজ থেকে আসক্ত হয়ে যাব!”
এটা খুব ভালো কোনও ব্যপার নয়, এটা হয় মানসিক যন্ত্রণা থেকে পালানো বা বাঁচার জন্য। আর কেউই যন্ত্রনার মধ্যে থাকতে ভালোবাসে না।
“আসক্তি জেনেটিক না”
জেনেটিক বা বংশ পরম্পরায় কেউ আসক্ত হয় না। মাদকাসক্তি নিয়ে সমাজে প্রচলিত আরেকটি ধারণা হলো, এটা বুঝি বংশ পরম্পরায় হয়।
ডা. মেইটের প্রশ্ন – যদি আমি মাতাল হই, আর সারাক্ষণ আমার বাচ্চাকে গালি দিতে থাকি, আর তা থেকে বাঁচার জন্য সে মদ খেতে চায়, তাহলে একে কি বংশ পরম্পরায় মাতাল বলা যাবে?এটা বংশগতির সমস্যা নয়, সমস্যা পারিপার্শ্বিকতার। ফলে এক্ষেত্রে পরিবারের দায়িত্বশীল ও যৌক্তিক আচরণ করার প্রয়োজন সবার আগে। এরপর সমাজের অন্যদেরও পাশের মানুষটির জন্য সহমর্মিতা বোধ করার প্রয়োজন রয়েছে।
“সমাজেবহু ধরনের আসক্তি”
আরেকটি প্রচলিত ধারণা হচ্ছে, শুধু যারা নেশাদ্রব্য দিয়ে নেশা করে তারাই আসক্ত কিন্তু সমাজের বিশেষ কোন সংস্কৃতির কারণেও এটা হতে পারে। কোনও জনগোষ্ঠীর মধ্যে ধর্মীয় কিংবা সংস্কৃতিগতভাবে পানীয় জাতীয় অ্যালকোহল গ্রহণের চল আছে। কোনও কোনও গোষ্ঠী নিজেরাই তৈরি করে এমন দ্রব্য। এটা তাদের সংস্কৃতি, ফলে এখানে আসক্তির অন্যান্য চিকিৎসা কাজে আসবে না।“আপনি সঙ্গীতেও আসক্ত হতে পারেন”ডা. মেইটের মতে, আসক্তি বলতে আমরা সাধারণভাবে যা বুঝি তা হলো একধরনের সাময়িক প্রশান্তির জন্য মানুষ বারবার যার দ্বারস্থ হয়। একটা নির্দিষ্ট সময়ের পরে তার ভেতরে সেটার জন্য আবারো চাহিদা তৈরি হয়।এটা সিগারেট হতে পারে, ড্রাগ হতে পারে, মদ জাতীয় বস্তু হতে পারে। হতে পারে যৌনতা, জুয়া, শপিং, কাজ, রাজনৈতিক ক্ষমতা, ইন্টারনেটে গেম খেলা-এমন অনেক কিছুই।কেউ কাজ করেও একই ধরণের আনন্দ পেতে পারেন কিন্তু মানসিক প্রশান্তি বা তৃপ্তির জন্য মানুষ সঙ্গীতের দ্বারস্থও হয়।