মানসিক স্বাস্থ্য, বর্তমান উন্নয়নশীল বাংলাদেশে এখনও অনেক বড় অবহেলিত বিষয়। সময়ের সঙ্গে এই বিষয়ে সাধারণ মানুষকে আরও সচেতন করা উচিত। সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। এটি সকল নারী ও শিশুর পরিষদ। এটা একটি প্রগতিশীল নারী সংগঠন, যারা মানবাধিকার নিয়ে কাজ করে।
মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যে ‘মনের খবর’ বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কার্যক্রম তুলে ধরছে। সংগঠনটির কার্যক্রম নিয়ে ‘মনের খবর’ এর সঙ্গে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন মহিলা পরিষদের আইনজীবী এডভোকেট দীপ্তি সিকদার এবং এডভোকেট রাম লাল রাহা।
এড. দীপ্তি সিকদার নিজেদের সংগঠন নিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ সর্বমোট ১৪টি উপ-পরিষদ নিয়ে কাজ করে থাকে। যার মধ্যে নারীদের উপর প্রত্যক্ষ আক্রমণ এবং মানসিক আক্রমণ দুইটি থাকে। পারিবারিক যে সহিংসতা আছে, যেমন: যৌতুকের জন্য নির্যাতন, গায়ে হাত তোলা, ধর্ষণ, মেরে ফেলা এই বিষয়গুলো প্রত্যক্ষ আক্রমণের আওতায় পড়ে।
এছাড়াও ভরণপোষণ না দেওয়া, খাবার না দেওয়া, খোঁজ-খবর না নেওয়া, চাকরি করতে না দেওয়া এসব মানসিক নির্যাতনের আওতায় পড়ে। এমন চলতে চলতে একসময় সরাসরি গায়ে হাত দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে।
এসব ক্ষেত্রে মহিলা পরিষদ অভিযোগ পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। অভিযোগকারী যদি চায় তাহলে আমরা দুই পক্ষের মধ্যে বসে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করে থাকি। নতুবা আমরা আমাদের কিছু নিয়ম আছে, সেভাবেই এগিয়ে যাই।
তবে আমাদের বর্তমানে নজর থাকে, আক্রান্ত ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্যের বিপর্যয়ের দিকে। যাদের মানসিক অবস্থা স্বাভাবিক থাকে না, তাদের কাউন্সিলের ব্যবস্থা করে থাকি। অনেক সময় আমরা চেষ্টা করি নিজেরা কাউন্সিল করতে। কিন্তু সবসময় তা সম্ভব হয় না।
অনেক সময় দেখা যায়, আক্রান্ত ব্যক্তিদের মাঝে মানসিক দূরত্ব অনেক বেশি থাকে। বা আক্রান্ত ব্যক্তি অনেকসময় ট্রমাটাইজড থাকে। সেক্ষেত্রে আমরা বিভিন্ন সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে তাদের পাঠিয়ে থাকি।
আসলে ট্রমাটাইজড হওয়ার কারণ, দীর্ঘদিন ধরে একই ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছে আমাদের নারীরা। এছাড়াও পুরুষকেন্দ্রিক সমাজ সবসময় অবদমিত করে রাখলে, সম্মান না দিলে, অনেক সময় দেখা গেলো নারীদের বেতনের টাকা নিয়ে যায়, মারধর করলে সেই বিষয়ে আক্রান্ত ব্যক্তি ট্রমাটাইজড হওয়া স্বাভাবিক।
এসব ক্ষেত্রে আমরা প্রখ্যাত মনোরোগ চিকিৎসক যেমন সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লবদের কাছে পাঠিয়ে থাকি। যারা কাউন্সিলিং করে সমাধান করে থাকেন। প্রয়োজনে রিহ্যাবিটেশনের পরামর্শ দেন। সেক্ষেত্রে মহিলা পরিষদের নিজস্ব রোকেয়া সদন রয়েছে। যেখানে আমরা এমন সাহায্য করে থাকি।’
এড. রাম লাল রাহা বলেন, ‘আমরা সাধারনত মনে করে থাকি যে, সমাজের নিচু শ্রেণির মানুষের মধ্যে হয়ত সমস্যা বেশি থাকে। কিন্তু এটা ভুল ধারণা, আসলে সব শ্রেণির মানুষই আসলে কমবেশি আক্রমণের শিকার হয়ে থাকেন। আমরা তাই বর্তমানে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করছি।
আমরা চাইছি মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে সবাইকে সচেতন করতে। আমাদের সমাজে এখনো মানসিক স্বাস্থ্য অবহেলার চোখে দেখা হয়। সবাইকে সচেতন করার লক্ষ্যে আমরা সারাদেশের সবজায়গায় একই হারে কাজ চালাচ্ছি।
৫৯ জেলায় আমাদের প্রায় দেড় লাখ ভলান্টিয়ার রয়েছে, যারা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে সিটি কর্পোরেশনের প্রধানদের সঙ্গে আলোচনা করে মানুষের মধ্যে বিভিন্ন মত বিনিময় সভা আয়োজন করে থাকে। যেখানে মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব সম্পর্কে বোঝানো হয়ে থাকে।
তাদের এটা বোঝানো হয়, শুরু থেকে যদি মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হয়, তবে অল্পতেই এই সমস্যার সমাধান করা যাবে। নয়তো এই চিকিৎসার খরচ অনেক সময় সাধারণ মানুষের আওতার বাইরে চলে যায়।
এড. দীপ্তি সিকদার আরও যোগ করেন, ‘মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। ‘মনের খবর’ যেভাবে এগিয়ে আসছে। বর্তমানে সাহায্য সেন্টার খোলার কার্যক্রমও চালাচ্ছে, একইভাবে সরকারের এগিয়ে আসা উচিত। সরকারের উচিত সব জেলা বা উপজেলাতে একটা কাউন্সিলিং সেন্টার খোলা। যাতে যে কেউ সহজে সেখানে গিয়ে নিজের সমস্যার কথা বলতে পারে। সমাধান খুজে পায়। আমরাও নিজেদের মতো কাজ করে যাচ্ছি। বড় বড় সংগঠনের সঙ্গে মিলেও কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা সবাই এগিয়ে আসলেই, মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে সবাইকে সচেতন করা সম্ভব।’
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে