ডিপ্রেশন এনজাইটি রোগীদের ঔষধের পাশাপাশি নিয়মিত শরীরচর্চা বা হাঁটতে হবে। আমি প্রায়শই এ পরামর্শ দিয়ে থাকি। হাঁটলে ব্রেইনে কোষ থেকে কিছু নিউরোট্রান্সমিটার নিঃসৃত হয় যা প্রাকৃতিক ভাবেই ডিপ্রেশন কাটাতে সহায়ক। কাজকর্মের ব্যস্ততায় আমরা অনেক সময় হাঁটতে পারিনা। অনেক সময় হাই অফিসওরা বলেন হাঁটার সময় পাইনা। তবে কিছু কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করলে খুব সহজেই আমাদের হাঁটা হয়ে যায়। যেমনঃ
১) বাচ্চাদের স্কুলে পৌছে দিতে তার সাথে হাঁটুন এবং গল্প করুন। এতে দু’জনের লাভ। আপনার সন্তান কে আপনি একটা ভালো অভ্যাস করাচ্ছেন। এবং তার সাথে ঘনিষ্ঠ সময় কাটাচ্ছেন। আর এ মূহুর্তের কথা দুজনের আজীবন মনে থাকবে। গাড়িতে বা বাহনে গেলে আপনার বা আপনার সন্তানের হাতে থাকবে মোবাইল বা ট্যাব।
২) অফিস থেকে গন্তব্যে যেতে দু একটা স্টেশন আগে নামুন। নেমে আপনার গন্তব্যে বা আবাসস্থলে যান। তখন বাসায় গেলে মনটা ফ্রেশ হয়ে যাবে। ঝগড়াঝাটির সম্ভাবনা কমে যাবে। শরীরে উদ্যম পাবেন। আর পাবলিক ট্রান্সপোর্ট হলে দুটোপয়সাও সেভ হবে যা দিয়ে মাস শেষে আপনি সুন্দর কিছু একটা কিনতে পারবেন।
৩) অফিস আদালতে লিফট এলিভেটর ব্যবহার না করে অবশ্যই সিঁড়ি ব্যবহার করবেন। এতে এক সময় সিঁড়ি ব্যবহার অভ্যাস হয়ে যাবে। আপনার ফিগার টাও চমৎকার একটা শেইপে চলে আসবে।
৪) আপনার ব্যক্তিগত গাড়ি হলে সেটা পার্ক করবেন একটু দূরের পার্কিং-এ। তাতে গাড়িতে উঠতে ও নেমে অফিসে যেতে আপনার খানিকটা হাঁটা হয়ে যাবে। শরীরটাও ঝরঝরে হয়ে যাবে অজান্তেই।
৫) লাঞ্চ করতে বা ব্রেকফাস্ট করতে একটু দুরের রেস্ট্রুরেন্ট চয়েস করবেন এবং হেঁটে যাবেন। এতে খাবারের আগে ও পরে হাঁটার কাজটা হয়ে যাবে। খাবার ডাইজেস্ট ও ভালো হবে। ৬) রাতে খাবারের পর একটু হাঁটবেন অথবা রাতে এশার নামাজ রাতের খাবারের পর রুটিনে রাখবেন। তাতে শরীর চর্চার ও সাইকোথেরাপি দুটোই হয়ে যাবে। নামাজের মাধ্যমে খুব ভালো সাইকোথেরাপি হয়।
৭) হাঁটতে সম্ভব হলে অবশ্যই কাউকে সাথে রাখবেন। গল্প করবেন এবং হাঁটবেন। তবে হাঁটার সময় হেডফোন ব্যবহার করবেন না। এতে অনেক সময় দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
৮) সন্ধ্যা বা রাতের বেলা হাঁটলে অবশ্যই নির্জন কোন জায়গায় বেছে নেবেন না। অনেকে পোষা প্রানী সাথে নিয়ে হাঁটতে বের হন। সেটা অবশ্য মন্দ নয়। তবে পোষা প্রানী প্রকৃতির ডাকে যত্রতত্র যাতে নোংরা না করতে পারে সেটা খেয়াল রাখতে হবে। এবং আপনাকে নিজ দায়িত্বে তা পরিষ্কার করতে হবে। বেশ আগে আমি সানফ্রান্সিসকোর এক রাস্তায় সকালে হাঁটতে বেরিয়ে দেখলাম অনেকেই নিজেই পোষা কুকুরটির ময়লাটি নিজে টিস্যু দিয়ে পাশের ডাস্টবিনে ফেলছেন।
৯) নারী পুরুষ উভয়ই হাঁটতে ফ্ল্যাট অবশ্যই স্যান্ডেল বা জুতা ব্যবহার করবেন। রমনীহন হাই হিল পরে অবশ্যই হাঁটবেন না। হাইহিল পরে হাঁটতে গিয়ে গড়াগড়ি খেয়ে গোড়ালিতে ব্যথা পাননি, এমন সচেতন হাটুরে রমনী পৃথিবীতে পাওয়া দুষ্কর। যদি পাওয়া যেতো তবে ‘দি গিনিজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’ এ তার নামটি ঝলমল করতো।
১০) হাঁটার সময় কোন কিছু না খাওয়াই ভালো। এতে পাকস্থলীর বিশ্রাম যেমন হয় তেমন পরিবেশটাও দূষণ মুক্ত থাকে। মনে রাখবেন জাবর কাটা প্রানীর মতো সারাক্ষণ এটা সেটা খাওয়া, ফ্যাটি হওয়া ও গ্যাস্ট্রিক আলসার হবার প্রধান কারন। মনে রাখবেন সকালে দু’গ্লাস জল খেয়ে মিনিট দশেক হাঁটলে সারাদিন কর্মচঞ্চল, চনমনে থাকবে দেহ মন। ডা. সাঈদ এনাম সাইকিয়াট্রিস্ট সহকারী অধ্যাপক সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ।