মানসিক রোগের রয়েছে নানাবিধ ধরণ। রোগগুলো কখনও সাধারণ আবার কখনও বা সেগুলো হয়ে উঠে জীবন সংহারী। করে দিতে পারে পরিবার সমাজ এমনকি নিজের থেকেও বিচ্ছিন্ন। আবার সঠিক চিকিৎসায় কেউ ফিরে আসতে পারেন জীবনের প্রান্তসীমা থেকে। সিএনএন অবলম্বনে এমনই একজনের ফিরে আসার গল্প শোনাচ্ছেন ফাহিম আহসান আল রশিদ।
চার সন্তানের জননী অ্যাঞ্জেলা ক্লেইন দীর্ঘদিন সংগ্রাম করেছেন “বর্ডার লাইন পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার” নামক এক মানসিক ব্যাধির সাথে। যদিও তিনি প্রায় জীবনভর এই রোগটি বয়ে নিয়ে চলেছেন তবুও মাত্র কিছুদিন আগে মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় সনাক্ত হয় যে তিনি একটি বিশেষ ধরনের মানসিক রোগে আক্রান্ত। সম্প্রতি আলোকচিত্রী ম্যাথু বাস-এর সাথে আলাপচারিতায় উঠে এসেছে তাঁর অতীত ও বর্তমান জীবনের চিত্র।
“আমার মনে হয়, দুই বছর আগ পর্যন্তও আমি স্বাভাবিক থাকার অভিনয় করে যেতাম, এমনকি নিজের মনকে প্রবোধ দিতাম। এটা হয়তো সামান্য কিছুদিন স্থায়ী ছিল, কিন্তু এরপরই মনে হলো আমার প্রতিদিনের জীবন অনেক ভারী হয়ে যাচ্ছিল এবং আমি যেন অনেকগুলো টুকরোয় ভেঙে পড়ছিলাম। এবং তারপরেই আমার ভেতর একসাথে অনেককিছু ঝড়ের মতো বয়ে যাচ্ছিল, যেটা সম্পর্কে অন্যদের বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল না।” এভাবেই ম্যাথুকে তিনি তাঁর অসুস্থকালীন অবস্থার কথা বর্ণণা করেন। নিজেকে নিজে আঘাত করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেই হয়তো ক্লেইন সবসময় তাঁর পার্সে একটি রেজার রাখতেন। যা তিনি অনেক কম বয়স থেকেই করে আসছিলেন। নিজেকে ক্ষত বিক্ষত করতেন তারপর সে ক্ষততে লোশন লাগাতেন তিনি।
ম্যাথুকে ক্লেইম জানান, “এই অনুভূতিটা ক্রমশ বাড়ছিল যে মনে হতো আমি আমার দুশ্চিন্তাগুলোর ভারে ফেটে চৌচির হয়ে যাবো। নিজের শরীরকে ওভাবে যন্ত্রণা দেয়ার পর এক ধরনের প্রশান্তি অনুভব করতাম। অবশ্য এর জন্য সামান্য অনুতাপ বোধও হতো।” ক্লেইনের স্বামী জেফ চেষ্টা করেন একটা পৃথকীকরণ পর্ব বা ডিসোসিয়েটিভ এপিসোড থেকে ক্লেইনকে বের করে আনতে। খুব ছোটবেলা থেকে ক্লেইন এমন এক অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে যেতে পরবর্তীতে এমন হয় যে এক পর্যায়ে তিনি তাঁর স্বামী জেফকেও আর চিনতে পারেন না।
ক্লেইন দুইমাসের জন্য একটা রেসিডেন্সিয়াল ট্রিটমেন্ট সেন্টারে অংশগ্রহণ করেন। যার শেষে তারা কিছু কাগজের টুকরো পোড়ান, যেগুলোতে লেখা ছিল- ভবিষ্যত জীবনে কোন কোন বিষয়গুলোর মুখোমুখি তারা আর হতে চান না। এভাবেই চিকিৎসা সেবা ও পরিবারের সহযোগিতায় ক্লেইন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে থাকেন। এখন তিনি সন্তানদের সাথে মজার সময় কাটান, শপিং সেন্টারে যান। ক্লেইন বলেন, তিনি তাঁর চিকিৎসার সময় সেবিকাদের থেকে ভালো সহযোগিতা পেয়েছিলেন। এবং এ অভিজ্ঞতা থেকেই ক্লেইন প্রতিজ্ঞাবন্ধ হোন যে, তিনিও ঐ সেবিকাদের মতো একজন হওয়ার চেষ্টা করবেন, এবং তাঁর বর্তমান চাওয়াই এটা। তিনি চান, তিনি যে যে অবর্ণনীয় কষ্টকর অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গিয়েছেন সে অভিজ্ঞতা যাতে আর কারো না হয়।
বাইরের দেশের যৌনকর্মীদের কঠোর সংগ্রাম নিয়ে রেডিওতে একটি অনুষ্ঠান শোনার পর ক্লেইনের কান্নায় ভেঙ্গে পড়া দেখে আলোকচিত্রী ম্যাথু বাস বলেন, “সঠিক দিক নির্দেশনায় এঞ্জেলার মতো অনেকের আবেগের প্রকটতা আত্ম-ধবংসাত্বক থেকে আকর্ষণীয় এবং পরদূঃখকাতরতায়ও পরিবর্তিত হতে পারে।”