আমাদের প্রতিদিনের জীবনে ঘটে নানা ঘটনা, দুর্ঘটনা। যা প্রভাব ফেলে আমাদের মনে। সে সবের সমাধান নিয়ে মনের খবর এর বিশেষ আয়োজন প্রতিদিনের চিঠি বিভাগ। এই বিভাগে প্রতিদিনই আসছে নানা প্রশ্ন। আমাদের আজকের প্রশ্ন পাঠিয়েছেন- সবুজ আহমেদ।
সমস্যা: আমার বয়স ২১ বছর। প্রায় ১.৫ বছর আগে আমার প্যানিক এটাক হয়, প্যানিক এটাক হতে হতে এক পর্যায়ে সেটি ডিজঅর্ডারে পরিণত হয়। এক মেডিসিন ডাক্তারের পরমার্শে ঔষুধ খেয়ে কিছুদিন ভালো ছিলাম কিন্তু আমার মধ্য থেকে উপর্সগগুলো ভালো ভাবে যায়নি।
মাঝে মাঝে হঠাৎ নিশ্বাস নিতে কষ্ট হতো, অদ্ভুদ সব চিন্তা মাথায় আসতো। হঠাৎ করে চোখে মুখে অন্ধকার মনে হতো, মনে হয় এখনি অজ্ঞান হয়ে যাবো। বুক ধরপর করতো, দূরে কোথাও যেতে পারতাম না, এই সমস্যাগুলো প্রায় চলতে থাকতো।
কিছু করতে ভালো লাগতো না, সারাক্ষণ দুশ্চিন্তা ইদানীং আবার লক্ষণগুলো বেশি দেখা দিচ্ছে। হাত-পা অবশ হয়ে যাচ্ছে, মনে হচ্ছে এখনি স্ট্রোক করবো। কিছুদিন আগে খাবার খাওয়ার সময় গলায় খাবার আটকে যায়। এরপর থেকে আমার মনে হতো কিছু খেলে গলায় আটকে থাকে। কিন্তু কিছুদিন পর আবার ঠিক হয়ে যায়।
এখন যে সমস্যাটা হচ্ছে সেটা হল আমার মাথাটা হালকা লাগচ্ছে। শরীরে কেমন যেন অস্তিরতা, মনে হচ্ছে আমি আমার ভিতরে নাই, পাগল হয়ে যাচ্ছি। এখন আবার মনে হচ্ছে আমি সবকিছু ভুলে যাচ্ছি। আমি আমার পরিচিত কারো নাম মনে রাখতে পারবো না, রাস্তা ঘাট সব ভুলে যাবো, আমার স্মৃতিশক্তি লোপ পাবে। সবকিছু ভুলে যাবো এখনি, মনে হচ্ছে ডিমনেশিয়া হবে। কিছু একটা লক্ষণ দেখা দিলে সেটা গুগলে সার্চ দেওয়া……এগুলো কি অন্য কোন মানসিক সমস্যা নাকি ডিমেনশিয়ার লক্ষণ?
সমাধান: প্রশ্ন করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। প্রথমে আসি আপনার প্রশ্নের শেষ অংশে। আপনি জিজ্ঞেস করেছেন এটা ডিমেনশিয়া কিনা? নিশ্চিন্তে জানুন এটা ডিমেনশিয়ার লক্ষণ না এবং এই অবস্থায় আপনার লক্ষণগুলো নিয়ে ডিমেনশিয়ার দিকে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
দ্বিতীয় আপনাকে একটা প্রশ্ন করতে চাই, আপনি কি নিশ্চিত যে আপনার সমস্যাগুলো মানসিক রোগ? যদি আপনি নিশ্চিন্ত না হন তাহলে আপনার ভিতরে বিভিন্ন রকমের কনফিউশন তৈরি হবে। আমি আপনাকে বলছি আপনি নিশ্চিন্ত হন এটা মানসিক রোগ এবং এটা প্যানিক ডিজঅর্ডার।
প্যানিক ডিজঅর্ডার ছিলো এবং প্যানিক ডিজঅর্ডার হয়ে গেছে এভাবে ভাবার কোন সুযোগ নেই। আপনার শুরু থেকেই প্যানিক ডিজঅর্ডার ছিলো। আপনার উচিৎ ছিলো শুরু থেকেই একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞকে দেখানো।
আপনাকে প্যানিক ডিজঅর্ডারের চিকিৎসা করানোর জন্য মোটামুটি নিয়মিত চিকিৎসকের কাছ থেকে চিকিৎসা নিতে হবে এবং আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে যে এটা মানসিক রোগ। অন্য ডাক্তারদের কাছে গেলে কোন লাভ হবে না। কারণ অন্য ডাক্তাররা পুরাপুরি আপনাকে এই রোগের চিকিৎসা দিতে পারবেন না।
আর সত্যি কথা হলো আমাদের দেশের মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা এই রোগের চিকিৎসা করে থাকেন না। বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনেক সময় বিভ্রান্তি তৈরি করে। সুতরাং আপনি মানসিক রোগের জন্য মানসিক ডাক্তারদের কাছেই যাবেন এবং সঠিক চিকিৎসাটি নিবেন।
আর প্যানিক ডিজঅর্ডারের একটা সমস্যা আছে, সেটা হলো যে কখনো কখনো অনেকদিন প্যানিক ডিজঅর্ডারের চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হয়। সুতরাং সব সময়ই ঔষধ প্রয়োজন। স্পষ্টভাবে বলি ঔষধ যেটা করবে সেটা হলো আপনার রোগের বা এই প্যানিক এটাকের যে সিভিয়ারিটি সেটা কমিয়ে নিয়ে আসবে এবং এটার যে ফ্রিকুয়েন্সি মানে বারবার হওয়া সেটাও কমিয়ে নিয়ে আসবে।
মনে করেন যে সপ্তাহে যদি প্যানিক ডিজঅর্ডার বা প্যানিক এটাক দশবার হয় তাহলে ঔষধ সেটাকে তিন বা চার বারে নিয়ে আসবে। আর যদি মনে করেন একবার এটাকে অনেক বড় ঢেউয়ের মত হয় বা কষ্ট হয়, ঔষধ সেটাও কমিয়ে নিয়ে আসবে। উধারণস্বরুপ যদি ঢেউটা দশ ফিট হয় তাহলে ঔষধ সেটাকে তিন থেকে চার ফিটে নিয়ে আসবে।
তার মানে ঔষধ আপনাকে দুই দিকে থেকে সাহায্য করবে। একটা হলো ঢেউয়ের কষ্টটা কমিয়ে নিয়ে আসবে আর দ্বিতীয়টা হলো ফ্রিকুয়েন্সি কমিয়ে নিয়ে আসবে। এর পাশাপাশি আপনাকে কিছু নিয়মের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। যেটাকে আমরা সাইকো থ্যারাপি বলি। এই সাইকো থ্যারাপির স্পেসিফিক কিছু বিষয় আছে বা সাইকো এডুকেশন আছে সেটা আপনাকে জানতে হবে।
আপনার মাধ্যমেই সবার সাথে দুই-একটা শেয়ার করতে চাই এখানেই। প্রথমে নিশ্চিত হন যে এটা একটা মানসিক রোগ, দ্বিতীয়- মানসিক রোগের কারণে হার্টের বা অন্য কোন সমস্যা না থাকে তাহলে এই রোগের কারণে আপনার মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনা বা স্ট্রোক করার সম্ভাবনা অথবা ডিমেনশিয়ার লক্ষণসহ এই ধরণের কোন রোগের সম্ভাবনা নেই। তৃতীয় কথা হলো, এই রোগের চিকিৎসার জন্য মানসিক রোগের চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই আপনাকে চলতে হবে। তবে একটু সময় লাগবে। মনের খবরের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ইতি,
প্রফেসর ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব
অধ্যাপক- মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।
সেকশন মেম্বার- মাস মিডিয়া এন্ড মেন্টাল হেলথ সেকশন অব ওয়ার্ল্ড সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন।
কোঅর্ডিনেটর- সাইকিয়াট্রিক সেক্স ক্লিনিক (পিএসসি), মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।
সাবেক মেন্টাল স্কিল কনসাল্টেন্ট- বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্রিকেট টিম।
সম্পাদক- মনের খবর।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে