অনেকেই দৈনন্দিন কাজকর্ম গুছিয়ে করার জন্য শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে দৈনন্দিন কাজকর্মের একটি তালিকা প্রস্তুত করেন। কোন কাজটির পর কোন কাজটি করবেন সেটি আগে থেকে গুছিয়ে রাখেন। এতে যেমন কোন কাজ ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায় তেমনি সব কাজ সুন্দর ভাবে সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হয়। কিন্তু এই কর্ম তালিকা কি একজন মানুষের মনস্তত্ত্বের উপর প্রভাব ফেলতে পারে? কর্ম তালিকা কি সত্যিই আপনার দৈনন্দিন কাজের চাপ লাঘব করে আপনাকে কিছুটা হলেও স্বস্তি প্রদান করতে পারে? আসুন আজ এমন কিছু প্রশ্নের উত্তর জানা যাক।
মানুষের সামাজিক অবস্থা, পরিবেশ, কাজের ধরণ, বয়স,মানসিকতা, ব্যক্তিত্ব ইত্যাদি অনুসারে কর্ম তালিকাও ভিন্ন ভিন্ন ধরণের হয়। অনেকেই শৃংখলাবদ্ধভাবে একে একে লিখে একটি আনুষ্ঠানিক কর্ম তালিকা প্রস্তুত করে, আবার অনেকে এলোমেলো করে যথেচ্ছভাবে কি কি করবেন সেই তালিকা প্রস্তুত করেন। আবার অনেকে হাতে না লিখে মনে মনে ঠিক করে নিয়ে সেই কাজগুলো করেন।
গবেষণায় দেখা গেছে যারা শুধু মনে মনে ভেবে নিয়ে কাজ করার বদলে কাজকর্মের একটি সুনির্দিষ্ট শৃঙ্খলাবদ্ধ তালিকা প্রস্তুত করে কাজ করেন তারা অন্যদের তুলনায় অত্যধিক গোছালো এবং সঠিকভাবে কাজগুলো করতে পারেন। আবার যারা নিয়মিত এই তালিকা প্রস্তুত করে প্রাত্যহিক কাজের অভ্যাস বজায় রাখেন তারা, বিশৃঙ্খলভাবে কর্ম তালিকা প্রস্তুত করা ব্যক্তিদের তুলনায় অধিক সফল এবং বিবেকবান আচরণ করেন। বিবেকবান আচরণ মানুষের মানসিকতা এবং ব্যক্তিত্বের ৫টি বিশেষ গুণাবলীর একটি। একজন বিবেকবান কর্মনিষ্ঠ ব্যক্তি সুশৃঙ্খল, দায়িত্বশীল, নিয়তাত্মা, এবং সাবধানী হয়ে থাকে। আত্ম নিয়ন্ত্রণ এবং সময়নিষ্ঠার প্রশ্ন এলে তার নিঃসন্দেহে সবার থেকেই এগিয়ে থাকে।
এছাড়াও প্রাত্যহিক কাজকর্মের সূচি প্রতি দিনের সব কাজের একটি স্পষ্ট ধারণা তৈরি করে। এতে করে প্রাত্যহিক জীবন আরও সহজ হয়ে যায় এবং ব্যক্তি মানসিক ভাবে চাপ মুক্ত থাকতে পারেন। সব সঠিক ভাবে সময় মত হওয়ার জন্য তিনি কর্মস্থলেও সবার কাছে প্রশংসার পাত্র হয়ে ওঠেন এবং যে কোন কাজে সফলতা অর্জন করতে পারেন।
গবেষণায় দেখা গেছে নারীদের মাঝে কর্ম তালিকা অনুসারে কাজ করার প্রবণতা পুরুষের তুলনায় অধিক থাকে। এছাড়াও নারীদের প্রস্তুতকৃত কর্ম তালিকা এবং পুরুষের প্রস্তুতকৃত কর্ম তালিকা ভিন্ন রকম হয়। একজন নারীর প্রস্তুতকৃত তালিকা অধিক কাঠামোবদ্ধ, সংগঠিত, এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ হয়। তারা সহজবোধ্য রূপে তালিকা প্রস্তুত করে এবং এটা তাদের এক প্রকার প্রতি দিনের অভ্যাসে পরিণত হয়। প্রাত্যহিক নিয়মে পরিণত হওয়া কাজ সর্বদাই সুসংগঠিত হয়। তাই এসব ক্ষেত্রে কাজের প্রতি নারীদের মানসিকতা, পুরুষের তুলনায় অধিক কেন্দ্রীভূত এবং ইতিবাচক হয়।
যখন কেউ প্রাত্যহিক কর্ম তালিকা প্রস্তুতের কাজটি করে, সে তার ভবিষ্যৎ নিয়েও বেশ সচেতনতার পরিচয় দেয়। অনেকে প্রতি দিনের কাজের তালিকা এক দিন আগেই প্রস্তুত করে রাখেন। প্রস্তুতকৃত তালিকাতে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে একবার চোখ বুলিয়ে নেন। এতে করে পরের দিন কি কি করতে হতে পারে বা হবে সে সম্বন্ধে তাদের মানসিক প্রস্তুতি থাকে এবং পরের দিনের সব কাজ বেশ সহজভাবেই সম্পন্ন হয়। তাই বলা যায় যারা কর্ম তালিকা প্রস্তুত করে রাখেন তারা কর্ম ক্ষেত্রে মানসিক ভাবে অনেকটাই চাপমুক্ত থাকতে পারেন এবং তাদের মাঝে কাজের গুরুত্ব, সময়ানুবর্তীতা থাকার কারণে তারা সফলতার দেখা পান।
কর্ম তালিকা প্রাত্যহিক কাজের প্রতি আপনার মানসিকতার পরিবর্তন এনে দেয়। যে কোন কাজকে তখন চাপের উৎস হিসেবে মনে না হয়ে দৈনন্দিন জীবনের একটা অংশ বলে মনে হয়। যারা কর্মখেত্রে সফল হতে চান, বা কাজের চাপ মুক্ত হতে চান, নিঃসন্দেহে প্রাত্যহিক কর্মতালিকা প্রস্তুত করে সেই অনুসারে কাজ করার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। এতে মানসিক প্রশান্তির সাথে সাথে কর্ম ক্ষেত্রে উন্নতি আসবে এবং কর্ম জীবন অনেকটা সহজ হয়ে যাবে।
সূত্র: https://www.psychologytoday.com/us/blog/dont-delay/202002/do-do-lists-work
অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে