মনস্তত্ত্বে মহামারী

0
61
মানসিকভাবে শক্তিশালীদের বৈশিষ্ট্য
মহামারী আমাদের মনের মাঝে যে দ্বন্দ্ব, শূন্যতা এবং জমাট বাঁধা হতাশা জন্ম দিয়েছে সেগুলো কাটিয়ে উঠতে বেশ সময়ের প্রয়োজন। কিন্তু প্রচেষ্টা শুরু করতে হবে এখনই।

সমগ্র বিশ্ব আজ করোনা আতঙ্কে নিমজ্জিত রয়েছে। অসংখ্য মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়েছে, এবং অসংখ্য মানুষ মৃত্যুবরণও করেছে। যারা করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছে তাদের মাঝে বিরাজ করছে এক চরম আতঙ্ক এবং যারা আক্রান্ত হয়নি তারাও রয়েছে চরম ভয়ের মাঝে। অসংখ্য মানুষ তাদের প্রিয়জনকে হারিয়ে অসহনীয় মনকষ্টে রয়েছে এবং অসংখ্য মানুষকে তাদের স্বাভাবিক পেশা ত্যাগ করে চরম অর্থনৈতিক সমস্যায় পর্যবসিত হতে হয়েছে যা তাদের জীবন ও জীবিকাকে ঝুঁকির মাঝে ফেলে দিয়েছে। আর এই সব কিছু আমাদের মনের মাঝে এক দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলছে।

এটা স্বাভাবিক যে জীবনে সব সময় সুখে থাকা যায়না। উত্থান পতন জীবনেরই অঙ্গ। বিপদ, ঝুঁকি এবং পরিবর্তনই আমাদের জীবনকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। আর এসব বিপদ এবং ঝুঁকি মোকাবেলা করেই মানব জাতি সুদীর্ঘ কাল ধরে টিকে আছে। তাদের মাঝে বিপদ মোকাবেলা করার এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা তাদের অন্যান্য অনেক প্রাণী থেকে সহজে এই পৃথিবীতে টিকে থাকার ক্ষমতা প্রদান করেছে। আর যারা এসব বিপদ এবং ঝুঁকি মোকাবেলা করতে অসমর্থ হয়েছে, তারাই কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে চিরকালের মত। তবে বিপদ এবং দুঃসময় মোকাবেলার এই পথ সব সময়ই অনেক অনেক কঠিন ছিল এবং আছে। চরম পরিস্থিতির মাঝে অসম্ভব প্রয়াসের মাধ্যমেই সব বিপদ অতিক্রম করে মানুষ টিকে রয়েছে। দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব রেখে গেলেও, এসব বিপদ এবং মহামারী এক সময় বিদায় নিয়েছে এবং মানব জাতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। করোনা কালীন এই দুঃসময়ও এক দিন কেটে যাবে। কিন্তু সে পর্যন্ত আমাদেরকে ধৈর্যের সাথে অপেক্ষা করতে হবে। সাহস এবং মানসিক শক্তি হারালে চলবে না। টিকে থাকতে হবে লড়াই করে।

যে কোন বিপদ বা সমস্যা, যেমন, মহামারী শেষ হয়ে গেলেও এর প্রভাব মানুষের উপর বহু দিন পর্যন্ত থেকে যায়। শরীর বা মনের উপর আসা যে কোন প্রতিকূল অবস্থা মস্তিষ্ক বহু দিন পর্যন্ত ধরে রাখে। তাই মনের মাঝে বিপদ পরবর্তী আতঙ্ক এবং ভাবাবেগ বেশ কিছু দিন পর্যন্ত থেকে যাবে। ফলে সাধারণ কাজকর্ম এবং অবস্থায় ফিরে যেতে একজন মানুষের বেশ কিছু সময় লেগে যাবে। তবে এটি চিরস্থায়ি কোন সমস্যা নয়। সব সময়ই ধীরে ধীরে মানুষের মন থেকে বিপদের ভয় এবং আতঙ্ক কেটে যায় এবং জীবন স্বাভাবিক উপায়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায়।

মন থেকে মহামারীর ভয় এবং আতঙ্ক দূর করতে আমাদের একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল থাকতে হবে। একে অপরের প্রতি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে না পারলে আমরা আমাদের মনুষ্যত্ব হারাবো এবং আমাদের বিবেক লোপ পাবে। আর এমন অবস্থা আমাদের নিজেদের বা অন্যদের, কারও জন্যই ভালো ফল বয়ে নিয়ে আসবেনা।

আমরা কিভাবে মহামারীর মত মহা বিপদের প্রভাব আমাদের মনস্তত্ত্বের উপর থেকে দূর করতে পারি সেটি নিয়ে এখন ভাবার সময় এসেছে। মন থেকে আতঙ্ক দূর করতে আমাদের এমন এক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে যেটি আমাদের সুরক্ষার অনুভব করাবে। এই লক্ষ্যে আমাদেরকে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে হবে। আমাদের পরিবার ও কাছের মানুষ যারা আমাদের মনে ভালবাসার অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে তাদের সাথে ইতিবাচক সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে হবে। আমাদের মানসিক সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য তাদের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। একইভাবে আমাদেরকেও তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে হবে। এভাবে একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে পারলে আমরা সবাই একসাথে সামনে এগিয়ে যাবার মানসিক শক্তি অর্জন করতে পারবো।

মানসিক ও শারীরিক  সুস্বাস্থ্য ভালো রাখতে নিয়মিত ইতিবাচক চিন্তাভাবনার চর্চা এবং সুষম খাবার সবই খুব গুরুত্বপূর্ণ। সুষম খাদ্য আমাদের মাঝে ইতিবাচক শক্তি সঞ্চার করে। সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে নিজেদের আত্মবিশ্বাস বজায় রাখতে হবে এবং মনে রাখতে হবে যে আমরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবো। এভাবে সুন্দর ভবিষ্যতের ভাবনায় একাত্ম থাকতে পারলে মন থেকে মহামারীর এই আতঙ্ক ধীরে ধীরে অবশ্যই নিঃশেষ হয়ে যাবে।

সূত্র: https://www.psychologytoday.com/intl/blog/the-new-normal/202010/pandemic-psychology

অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

Previous articleকরোনায় ঘরবন্দি মানসিক সমস্যার মোকাবিলা
Next articleতার আচরণ ও কথবার্তায় অস্বাভাবিক পরিবর্তন এসেছে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here