ছোট্ট শিশুদের মন হয় কাদার মতন। এই বয়সে তাদের ব্যক্তিগত, সামাজিক বা অর্থনৈতিক দুর্বলতা নিয়ে কেউ যদি ঠাট্টা করে, হয়রানী করে বা অপমান করে তাহলে সেটি তারা কোন ভাবেই মেনে নিতে পারেনা। এবং এগুলো তার মানসিকতা এবং আচার আচরণকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে।
শিশুদের হয়রানী বা অপমান করাকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করা যেতে পারে। সাধারণভাবে, যখন কেউ অপেক্ষাকৃত দুর্বল, ছোট বয়সের বা সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভাবে অপেক্ষাকৃত কম প্রভাবশালী ব্যক্তিকে ধারাবাহিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করে, ক্ষতিগ্রস্ত করে, বা অপমান করে সেই অবস্থাকে আমরা এর অন্তর্গত হিসেবে ধরে নিতে পারি। কারও প্রতি এ ধরণের বিরূপ মনোভাব ছোট থেকে ছোটতর থেকে শুরু করে বড়সড় নেতিবাচক কাজের মাধ্যমেও প্রকাশ করা যায়। যেমন, কারও কথার গুরুত্ব না দেওয়া, খেলা থেকে কাউকে অকারণে বাদ দেওয়া, অযথা খারাপ কথা বলা, সাহচর্য এড়িয়ে চলা ইত্যাদি আচরণ থেকে শুরু করে বড় ধরণের অপমান করা বা মারাত্মক পর্যায়ের বিরক্তি প্রকাশ করা ইত্যাদি। শিশু কিশোরেরা শুধু তাদের থেকে বয়সে বড়দের কাছ থেকেই যে এমন মনোভাব বা আচরণের শিকার হয় সেটা নয়। বরং তাদের বয়সী অন্য কোন দল বা সহপাঠীদের কাছ থেকেও এমন বিরূপ আচরণের শিকার হতে পারে। এ ধরণের নেতিবাচক আচরণ বা মনোভাব, যা তাদেরকে অপেক্ষাকৃত কম প্রভাবশালী, দুর্বল এবং অপমানিত বোধ করায়, তাদের সুষ্ঠু মানসিক বিকাশের পথে বাঁধা সৃষ্টি করে।
এ ধরণের নেতিবাচক আচরণ এবং শিশু কিশোরদের মনস্তত্বের উপর এর প্রভাব নিয়ে করা বিভিন্ন গবেষণায় যে ফলাফল উঠে এসেছে সেগুলি সত্যিই ভীতিকর। গবেষণায় দেখা গেছে ঠাট্টা এবং অপমানের শিকার শিশুদের মাঝে স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে ওঠা শিশুদের তুলনায় অত্যধিক পরিমাণে মনস্তাত্ত্বিক এবং আচরণগত সমস্যা পরিলক্ষিত হয়। যে সব শিশু কিশোর এ ধরণের নেতিবাচক অবস্থা এবং আচরণের শিকার হয় তাদেরকে অন্যান্যদের তুলনায় শিক্ষা ক্ষেত্রে, খেলার মাঠে বা বন্ধুত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে অনেক কঠিন সময় পার করতে হয়। অপমানজনক কথা এবং আচরণ তাদের মনে হতাশা, ক্রোধ, ক্ষোভ, হীনমন্যতা ইত্যাদি নেতিবাচক অনুভূতির সৃষ্টি করে। যা পরবর্তীতে তাদের প্রতিহিংসা পরায়ণ এবং হিংস্র করে তোলে। তাদের মাঝে অবাধ্যতা, বেপরোয়া আচরণ এবং মানবিক গুণাবলীর অভাব সৃষ্টি হতে দেখা যায়।
অনেক সময় শিশুরা তাদের পিতা মাতা এবং কাছের মানুষদের কাছেও এ ধরণের অপমানের শিকার হয়। অনেক পিতামাতাই তাদের সন্তানের ভালো দিক গুলোর পরিবর্তে তাদের দুর্বলতা এবং নেতিবাচক দিকগুলোকে বেশী গুরুত্ব প্রদান করে তাদেরকে অন্যান্য বন্ধু বান্ধব, সহপাঠী বা আত্মীয়দের সামনে অপমান করেন। এ ধরণের আচরণ শিশুর মাঝে তার অভিভাবকের প্রতি অশ্রদ্ধা এবং বেপরোয়া মনোভাবের সৃষ্টি করে। যা পরবর্তীতে ঐ শিশু বা তার পিতামাতা কারও জন্যই ভালো ফল বয়ে নিয়ে আসেনা।
শিশুদের এমন সমস্যা থেকে রক্ষা করতে এবং স্বাভাবিক মানসিক বিকাশ নিশ্চিত করতে পিতামাতাকে সর্বাগ্রে এগিয়ে আসতে হবে। শিশুকে কোন ভাবেই অপমান জনক কথা বলবেন না। তার দুর্বলতা গুলোকে তুলে না ধরে তার ভালো দিকগুলোর প্রশংসা করুন। এতে তারা আরও ভালো কাজ করতে উৎসাহিত হবে। তাদের অসদাচরণ বা ভুল গুলোকে পরিবর্তনের লক্ষ্যে তাদের অপমান নয়, বরং তাদের প্রতি আরও বেশী স্নেহশীল হন, দায়িত্বশীল হন। পিতা মাতাদের সাহচর্য এবং উৎসাহ সন্তানদের বড় থেকে বড় ধরণের সমস্যা সমাধানে অনুপ্রাণিত করে যা তাদের চরিত্র এবং মানসিকতার বিকাশে অনেক বড় পরিবর্তন নিয়ে আসে। শিশু যদি আত্মবিশ্বাসী হয় তাহলে অন্য কারও অপমানজনক কথাও তার মনে গভীর প্রভাব ফেলতে ব্যর্থ হয়।
শিশুদের কখনোই তার দুর্বলতা বা সামাজিক, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তার অপারগতা নিয়ে অপমান করা উচিৎ নয়। এ ধরণের আচরণ তার মনে সুদূরপ্রসারী প্রভাব রাখতে পারে যা পরবর্তী জীবনে তার আচরণ এবং মানসিকতায় অনেক বড় পরিবর্তন নিয়ে আসে যা কোন ভাবেই তাদের জন্য বা সমাজের জন্য শুভ হবেনা।
অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে