পেশায় শিক্ষক আমি। একটা হাইস্কুলে জীববিজ্ঞান পড়াই। পড়ানো আমার সবচেয়ে বেশি প্রিয়। আর তা যদি হয় জীববিজ্ঞানের ক্লাস, তাহলে তো কথাই নেই। আপনি সারাদিন আমাকে দিয়ে ক্লাস করাতে পারবেন। আমি মোটেও ক্লান্ত বা অধৈর্য হবো না।
স্কুলে যেতে হয় নয়টার আগেই। তাই সকাল ছয়টা থেকে আমার দিনের গোছানো শুরু হয়। পরিবারের জন্য সারাদিনের খাবার গুছিয়ে রেখে চলে যাই। ছেলেরা বাসায় থাকলে একা একা খায়। বাবার চাকরি অন্য জেলায়। যার জন্য বাবাও দুপুরের খাবারে থাকেন না।
স্কুল বন্ধ ছাড়া এভাবেই অভ্যস্ত ছিলাম ২০০৭ সালের জানুয়ারি থেকে গতমাসের ১৬ তারিখ পর্যন্ত। ১৮ মার্চ থেকে জীবনের রুটিন পাল্টে গেছে। এখন ঘুমাতে পারছি টেনশন ছাড়া,গরম গরম খাবার পরিবেশন করা সহ পরিবারের সবাই একসাথে খেতে পারছি।
একসাথে নামাজ পড়া,সিনেমা দেখা, বই পড়া এসব ভুলেই গিয়েছিলাম ব্যস্ততায় ।এখন করতে পারছি। জীবনটাকে উপভোগ করছি।
ছেলেদের নিয়ে কতো গল্প করি যা জমানো ছিল। আজ আমার ছেলেবেলার গল্প শুনালাম ছেলেকে। ওরা হাসতে হাসতে শুনল। তাদের বাবাকে দেখলাম অনেক তৃপ্তি পেলেন ছেলেদের হাসি দেখে। অনেক কাজ সময়ের অভাবে করতে পারছিলাম না।এই একমাসে অনেকটা করা হয়েছে। স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য পড়ানোর কিছু কৌশল ভেবে রাখলাম। উপকরণ তৈরী করলাম। স্লাইড তৈরি করলাম শিক্ষার্থীদের জন্য। আমি নিজেকে ব্যস্ত রাখলাম মাথায় যেন করোনার চিন্তা না ঢুকে।
নিজের ফেসবুকে আহবান জানালাম শিক্ষার্থীদের যেন ফোনেই আমার কাছ থেকে সমস্যার সমাধান নেয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় একমাসে একটা ফোনও আসেনি। নিয়মিত সংসদ টিভিতে প্রচারিত ক্লাসের রুটিন জানাই নিজের বিবেকের দায়ে। কিন্তু আমি যতটা ওদের পড়া নিয়ে চিন্তা করি,অভিভাবকদের কাছ থেকে সাড়াতো পাইনা।
আমার দৈনন্দিন সকল কাজ ঠিকই চলছে বরং ভালো চলছে। কিন্তু পড়াশোনা? এটা থেকে অনেক দূরে চলে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
ভবিষ্যতে পৃথিবীটা এমন হলে আমার সবকিছুই ভালো লাগবে। কিন্তু খুব মিস করবো আমার জীববিজ্ঞানের ক্লাস করানো।
আর মিস করবো সেই সুন্দর হাসিমুখে কথা বলা আমার সব শিক্ষার্থীদের। দোয়া করি সব আগের মতো হয়ে যাক।
লিখেছেন: রুকসানা আক্তার