বয়ঃসন্ধিকালে অভিজ্ঞতা থেকে শেখায় মস্তিষ্ক

কিশোর-কিশোরীরা প্রায়ই তীব্র আবেগপ্রবণ হয়। কিন্তু গবেষকরা বলছেন, মস্তিষ্ক তাদের অভিজ্ঞতা থেকে শেখায়, যা তাদের ভালোভাবে সাবালকত্ব অর্জনে প্রস্তুত করে তোলে।
গবেষণায় একটি ছবিভিত্তিক খেলায় টিনএজরা প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে ভালো করে। পরে স্ক্যান করে তাদের মস্তিষ্কের কাজকর্ম উচ্চস্তরের বলে প্রমাণ পাওয়া যায়।
হার্ভার্ড, কলম্বিয়া ও ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল এখন বয়ঃসন্ধিকালের সাধারণ পুরস্কার প্রত্যাশী আচরণ ভালো বা খারাপ ফলাফলের চেয়েও তাদের শেখাকে উত্তম করতে পারে কি-না, সে বিষয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছেন।
তারা ১৩ থেকে ১৭ বছর বয়সী ৪১ জন টিনএজার ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সী ৩১ জন প্রাপ্তবয়স্ককে একটি ছবিভিত্তিক খেলায় অংশ নিতে বলেন। খেলা চলাকালে এমআরআইয়ের মাধ্যমে প্রতিটি গ্রুপের কয়েকজনের মস্তিষ্ক স্ক্যানিং করে দেখেন।
এ খেলায় টিনএজরা বয়স্কদের তুলনায় বেশি সংখ্যক প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরেছিল। স্মৃতিশক্তির এ পরীক্ষা প্রমাণ করে, তাদের বিস্তারিত স্মরণশক্তি ভালো ছিলো। কারণ, তারা যেসব প্রশ্ন বেছে নিয়েছিল, সেগুলোরই উত্তর সঠিকভাবে দিতে পেরেছিল।
গবেষণায় বলা হয়, এ পরীক্ষার ফলাফলে বোঝা যায়, তারা তাদের অভিজ্ঞতা থেকে বেশি ভালো শিখেছে- যা তাদের বাড়িতে বসবাস ও প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে স্বাধীনতা ভোগের জন্য ভালোভাবেই প্রস্তুত করবে।
গবেষকরা স্ক্যান রিপোর্ট পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখেন, টিনএজদের মস্তিষ্কের ‘হিপ্পোক্যাম্পাস’ ও ‘স্ট্রিয়াটাম’ নামক দু’টি অঞ্চলের ব্যবহার দেখতে পেয়েছেন। যেখানে বয়স্করা ‘স্ট্রিয়াটাম’ এর ব্যবহার বেশি করেছেন।
‘হিপ্পোক্যাম্পাস’ হচ্ছে মস্তিষ্কের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র। মস্তিষ্কের মধ্যাঞ্চলের এ কোষে স্মৃতি শ্রেণীবদ্ধভাবে সংরক্ষিত থাকে এবং এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত হয়। আর মস্তিষ্কের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল ‘স্ট্রিয়াটাম’ পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে, যা তাদের কর্ম ও পুরস্কার প্রাপ্তিরও সংযোগস্থল।
গবেষকরা বলেন, কিশোর-কিশোরীদের মস্তিষ্কের ‘হিপ্পোক্যাম্পাস’ এর অনবদ্য ভূমিকা থাকে। অনুসন্ধানে পাওয়া এ তথ্য বয়ঃসন্ধিকালে তাদের শিক্ষার নতুন উপায় হতে পারে।
‘কৈশোরে ‘হিপ্পোক্যাম্পাস’ শিক্ষাকে আরও শক্তিশালী করে, যা তারা এর আগে পায়নি। এটি জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে শক্তিশালী স্মৃতিশক্তি গঠনে মূল ভূমিকা পালন করে।
তারা বলেন, ক্রমবিকাশমান মস্তিষ্কের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ অংশের মধ্যেকার এই সংযোগ ব্যাখ্যা করে, কেন টিনএজরা বেশি ভালো করেছিল।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের গবেষক জুলিয়েট ডেভিডো বলেন, এসব তথ্য বয়ঃসন্ধিকালে শিক্ষার নতুন নতুন উপায় গ্রহণেও তাদের অনুপ্রাণিত করতে পারে।
আপনি যদি কিছু ইতিবাচক বিষয় উপস্থাপন করেন, তাহলে, সেটি বয়ঃসন্ধিকালে ভালো জিনিস মনে রাখা ও শেখার ক্ষেত্রে ভালো অভিজ্ঞতা অর্জনে সহায়ক হতে পারে। দৈনন্দিন জীবনে তারা তাদের পরিবেশের প্রতি বেশি মনোযোগ দেয়, যা প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে আলাদা।
গবেষকরা এখন অন্য কোন কোন পরিস্থিতি বা অভিজ্ঞতা কৈশোরের মস্তিস্কে ‘হিপ্পোক্যাম্পাস’ ও ‘স্ট্রিয়াটাম’ কে সক্রিয় ও সংযুক্ত করে সেগুলোকে খুঁজছেন।
Previous articleপ্রিয়জনের সংর্স্পশ’ই পারে বার্ধক্যের একাকীত্ব দূর করতে – মরমী কবি সাবির আহমেদ চৌধুরী
Next articleবিএসএমএমইউ মনোরোগবিদ্যা বিভাগের মে মাসের বৈকালিক সেবা সময়সূচি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here