এই সময়ে অনেক মানুষ বিষণ্ণতায় আক্রান্ত। পরিবারের অনেকেরেই মন ভালো থাকে না। মন খারাপ থাকা একটি স্বাভাবিক ব্যাপার।
অনেকের প্রত্যাশা পূরণ না হলে মন খারাপ হতেই পারে। তবে কোন কারণে বা অকারণে এই মন খারাপ যদি দুই সপ্তাহের বেশি থাকে, কোনো কাজ কর্মে আগ্রহ না থাকে এবং দিনের বেশিরভাগ সময় অনুভূতিগুলো মনমরা বা বিষণ্ণ থাকে তখন ব্যক্তিটি বিষণ্ণতায় আক্রান্ত।
বিষণ্ণতার চিকিৎসায় মেডিসিন ও সাইকোথেরাপী দুই ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। বিষণ্ণতার মাত্রা অল্প হলে শুধুমাত্র সাইকোথেরাপি দিয়ে চিকিৎসা করলে ভালো হয়ে যায়। তবে বিষণ্ণতার মাত্রা অনেক তীব্র হলে সাইকোথেরাপির পাশাপাশি মেডিসিন প্রয়োজন হয়।
সাইকোথেরাপি হলো মনোবৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ও নীতির উপর ভিত্তি করে তৈরি এক ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি। আর মনোচিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মেডিসিন নিতে হয়।
এই লেখায় পরিবারিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা করবো।
পরিবারের লোকেরা কি করতে পারেনঃ বিষণ্ণতায় আক্রান্ত ব্যক্তি কম এক্টিভ থাকেন ও চিকিৎসা নেয়ার প্রতি আগ্রহী কম থাকেন। তাই পরিবারের মানুষেরা সবচেয়ে বেশি ভুমিকা রাখতে পারেন। নিচের কাজগুলি করলে বিষণ্ণতা কিছুটা কমতে পারে:
- পরিবারের বিষন্ন সদস্যটিকে ভিন্ন কিছু মনে করবেন না, অন্য সব রোগের মত বিষন্নতা একটি রোগ, তাই ওনার মন খারাপ লাগছে।
- বিষন্ন ব্যক্তিকে পরিবার থেকে আলাদা না করে সবার মধ্যে রেখে তার প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে যাতে তিনি কোনভাবেই হীনমন্যতায় না ভোগেন এবং আগ্রহ নিয়ে রোগের মোকাবেলা করতে সাহস পান।
- কোনভাবেই দোষারোপ করা যাবে না কারণ ডিপ্রেশন এর জন্য সেই ব্যক্তি কোনভাবেই দায়ী না।
- বিষন্ন ব্যক্তিকে কখনো রাগারাগি, বকাবকি বা সমালোচনা করবেন না। এগুলো করলে মানসিক চাপ বেড়ে গিয়ে উনার সমস্যা বাড়বে। বরং মাঝে মাঝে প্রশংসা ও ছোট ছোট ভালো আচরনের জন্য পুরস্কৃত করতে হবে।
- তাকে অলস অকর্মণ্য বলা যাবে না এতে তার মানসিক চাপ বাড়বে, মনে রাখবেন ডিপ্রেশনের জন্য তিনি কাজকর্মে আগ্রহ পাচ্ছেন না।
- অন্যের সাফল্য হিস্ট্রি তুলে মোটিভেট করার চেষ্টা করবেন না, এতে তিনি অন্যের সাথে তুলনা করবেন এবং প্রচন্ড হীনমন্যতায় ভুগবেন। ডিপ্রেশন বাড়বে।
- অনেকে বলেন যে ডিপ্রেশন কোন ব্যাপার না, নামাজ-বন্দেগি পড়ো, হাদিস-কোরান পড়ো ডিপ্রেশন ঠিক হয়ে যাবে। এই কথা বললে বিষন্ন ব্যক্তি ভাববেন তিনি আসলেই এমনই পাপি এগুলিও ঠিক মতো করতে পারেন না। যদিও ইবাদত রিলাক্স করে কিন্তু সম্পন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি না।
- ব্যাক্তিকে কোন উপদেশ দিবেন না, মনে রাখবেন উপদেশটা আপনার চিন্তা থেকে আসে যেটা আরেকজনের চিন্তার সাথে নাও যেতে পারে।
- ব্যাক্তির কথা মনোযোগ দিয়ে শুনবেন, ইচ্ছে হলে বলতে পারেন, এই সমস্যাটি একটি মানসিক রোগ যাকে ডিপ্রেশন বলে আপনার মত অনেকেই এই সমস্যায় আক্রান্ত, ডিপ্রেশনের কারণে আপনার অটোমেটিক্যালি কতগুলি নেগেটিভ চিন্তা আসছে যে কারণে ইমোশনগুলো ডিপ্রেসিভ হচ্ছে এবং কতগুলো প্রবলেমেটিক আচরণ করছেন। অবশ্যই এগুলির জন্য আপনি দায়ী না।
- ব্যাক্তির বর্তমানের ভালো কি কি গুণাবলী আছে, কি কি পছন্দের কাজ আছে, কি কি ভালো দিক আছে সেগুলো খুজে বের করতে সহায়তা করুন।
- ব্যক্তির অতীতের পজিটিভ ঘটনাগুলো লিখতে উৎসাহিত করুন, কে কে তাকে ভালোবাসে তার তালিকা করতে বলতে পারেন, কি কারণে তাকে তারা ভালোবাসে তা বের করলে কিছু পজিটিভ চিন্তা আসবে।
- ব্যক্তির বর্তমান নেগেটিভ চিন্তা গুলো লিখতে বলতে পারেন এবং এই চিন্তা গুলো কি কারণে ঠিক না তা বলতে পারেন।
- ব্যক্তিকে সাথে নিয়ে কিছু হাল্কা ব্যায়াম করা যেতে পারে।
- প্রয়োজনে তাকে কোনো চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানীর বা মনোচিকিৎসকের নিকট সেশন নিতে উৎসাহিত করতে পারেন। এই সময়ে অনলাইনে সেবা পাবেন।
- তবে আত্মহত্যার চিন্তা বা সংকেত থাকলে তাকে দ্রুত বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিৎসায় আগ্রহী করে তুলুন।
- মনে রাখবেন পরিবারের বাইরে প্রফেশনাল নন এমন কারো কাছে গিয়ে শেয়ার করলে বিপদের সম্ভবনা বাড়বে।
লেখক: জিয়ানুর কবির, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিষ্ট।
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন